সর্দি-কাশি ও ঠান্ডা লাগার সমস্যা কমাতে অনেকে অনেক রকম টোটকা ব্যবহার করেন। কেউ মুখে লবঙ্গ রাখেন। কেউ খান কাঁচা আদা বা আদা দেওয়া চা। বাসক পাতা, তুলসী ইত্যাদি ঘরোয়া পদ্ধতিতে সমাধানের চেষ্টাও করেন অনেকে। কিন্তু জোয়ান, যা সচরাচর হজমের সুবিধার জন্য খাওয়া হয়, তা জ্বর-সর্দি-কাশি কমাতেও কাজে দিতে পারে, তা জানতেন কি? অনেকেই জানেন না। অথচ এই টোটকা দীর্ঘ দিন ধরেই ভারতের প্রাচীন ভেষজ ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দিল্লির পুষ্টিবিদ ডিম্পল জাংড়া মাঝে মধ্যেই নানা শারীরিক সমস্যার ভেষজ এবং প্রাকৃতিক সমাধান বলে দেন সমাজ মাধ্যমে। শেয়ার করা নানা ধরনের ভিডিয়োয় তিনি জানিয়েছেন, জোয়ান কেন ঠান্ডা লাগার সমস্যায় কাজে লাগতে পারে? এবং কী ভাবেই বা তা ব্যবহার করা যেতে পারে।
জোয়ান কেন কার্যকরী?
১. থাইমল
জোয়ানে রয়েছে থাইমল, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান। এটি ফুসফুসের শ্বাসনালীকে প্রশস্ত করে এবং কফ বা শ্লেষ্মা বার করে দিতে সাহায্য করে।
২. কফ পরিষ্কার
জোয়ান হল প্রাকৃতিক ‘এক্সপেক্টোরেন্ট’, অর্থাৎ এমন এক উপাদান, যা জমে থাকা কফকে তরল করে দেয়। ফলে, কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে তা সহজে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। শীতকালীন ব্রঙ্কাইটিস বা অ্যাজমার টান কমাতেও এটি দারুণ কার্যকর।
৩. শরীর উষ্ণ রাখা
জোয়ান প্রকৃতিগত ভাবে উষ্ণ। ফলে শীতে এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে, এবং ঠান্ডা লাগার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।
সর্দি-কাশির সমস্যায় কী ভাবে ব্যবহার করবেন জোয়ান?
১. জোয়ানের কাড়া
এক গ্লাস জলে ১ চা চামচ জোয়ান, ৫-৬টি তুলসী পাতা এবং সামান্য আদা দিয়ে ৫-১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। জলটি অর্ধেক হয়ে এলে নামিয়ে নিন।
হালকা গরম অবস্থায় এতে সামান্য মধু মিশিয়ে দিনে দুবার পান করুন। সর্দি এবং বুক থেকে কফ বের করার জন্য এটি কার্যকরী।
২. জোয়ানের ভাপ বা স্টিম
একটি পাত্রে জল ফুটিয়ে তাতে ১ চামচ জোয়ান দিয়ে দিন। এবার একটি তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে সেই জলের বাষ্প বা ভাপ নাক দিয়ে টানুন।এটি বন্ধ নাক খুলতে এবং গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। নাক বন্ধ বা সাইনাসের সমস্যায় জোয়ানের ভাপ নিলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়।
৩. জোয়ানের পুঁটুলি
একটি তাওয়ায় ২ চামচ জোয়ান এবং কয়েকটি রসুনের কোয়া হালকা করে ভেজে নিন। এবার একটি পরিষ্কার সুতি কাপড়ে এটি বেঁধে পুঁটুলি তৈরি করুন। হালকা গরম থাকা অবস্থায় সেটি দিয়ে বুকে ও পিঠে সেঁক দিন (খেয়াল রাখবেন যাতে ছ্যাঁকা না লাগে)। এই পদ্ধতিটি বুকের জমাট কফ বা শিশুদের সর্দি কাশির জন্য কার্যকরী।
যা যা খেয়াল রাখতে হবে
১। জোয়ান শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, তাই অতিরিক্ত জোয়ান খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
২। যাঁদের পেটে আলসার, লিভারের সমস্যা বা অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি আছে,
তাঁদের জোয়ান খাওয়ার আগে সতর্ক থাকা উচিত।
৩। গর্ভবতী মহিলাদের অতিরিক্ত জোয়ান না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৪। যদি সর্দি-কাশি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা জ্বর বেশি থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।