দিল্লিতে কাজের টোপ দিয়ে কুয়েতে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল শিলিগুড়ি মহকুমার চা বাগান এলাকার বাসিন্দা মা ও মেয়েকে। দু’জনকে নেপালের বাসিন্দা বলে পরিচয় দিয়ে পাসপোর্টও তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ। ৫ বছর আগের ঘটনা। এক বছর পরে মা কোনও মতে ফিরে এলেও, তখনই ফেরা হয়নি মেয়ের। অবশেষে গত ফেব্রুয়ারি মাসে নেপালের কাঠমান্ডু হয়ে ঘরে ফিরেছে মেয়ে।
বাগডোগরার এই মেয়েটির উপর কুয়েতে নানা অত্যাচার চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। কাজের টোপ দিয়ে মা-মেয়েকে যারা পাচার করেছিল তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হলেও, পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা অবশ্য ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওঁরা অভিযোগ নিয়ে এলে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শিলিগুড়ি লাগোয়া বাগডোগরায় মেয়ে এবং বোনকে নিয়ে থাকতেন ওই মহিলা। এলাকার একটি চা বাগানে তিনি কাজ করতেন। অভিযোগ, ২০১০ সালের গোড়ার দিকে তাঁদের পাড়ারই দুই যুবক দিল্লিতে বেশি মাইনের চাকরির লোভ দেখায়। প্রথমে রাজি হননি তাঁরা। পরে একাধিক বার বিভিন্ন ভাবে তাঁদের টোপ দিয়ে রাজি করায় অভিযুক্তরা। এর পর নির্ধারিত সময়ে তাঁদের নিয়ে দিল্লি রওনা হয় ওই যুবকরা। তাদের সঙ্গে আরও কয়েকজন তরুণী ছিল বলে জানা গিয়েছে। ওই মহিলা জানান, দিল্লিতে এক সপ্তাহ একটি বাড়িতে রাখা হয় তাঁদের। মহিলা অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের একাধিক ছবি তোলা হয় দিল্লিতে। এছাড়া আমরা কিছুই জানি না। এরপরে আমাদের কুয়েতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শ্রীলঙ্কাবাসী এক মহিলার সঙ্গে এদের কথা হয়। আমাদের সেখানে রেখে সে দেশের মুদ্রায় কয়েক বাণ্ডিল টাকা নিয়ে ফেরত চলে আসে অভিযুক্তেরা।” এরপর তাঁকে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া হয় বলে মহিলার অভিযোগ। অন্য দিকে মহিলার মেয়েকে কুয়েতেই রেখে দেওয়া হয়।
এক বাংলাদেশী ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে ২০১১ সালের শুরুর দিকে মহিলা ফিরে আসতে পারলেও, তাঁর মেয়ে কুয়েতেই থেকে যায় বলে জানানো হয়েছে। যুবতীর কথায়, “বছর চারেক আগে একটি বাড়ি থেকে কাজের ফাঁকে পালিয়ে যাই। পথে আরবি এক ব্যক্তিই আশ্রয় দিয়েছিলেন। দু’বছর সেখানেও কাজ করি। তার পরে তিনি আমাকে ভারতীয় দূতাবাসে নিয়ে যান। তিনি-ই বিমানের ভাড়া জোগাড় করে দেন।” যদিও, পাসপোর্ট ও কাগজপত্রে নেপালের ছাপ থাকায় তাঁকে নেপালের দূতাবাসে পাঠানো হয়। সেখান থেকেই কয়েক মাস পরে কাতার হয়ে নেপালে ফেরেন তিনি। তবে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দার্জিলিং লিগাল এড ফোরামের জেলা সম্পাদক অমিত সরকার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে অভিযুক্ত। তা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিষয়গুলোর তদন্ত হওয়া দরকার।” চা বাগান এলাকার মানুষের আর্থিক অনটনের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির বাসিন্দা এই ব্যবসায় নেমেছে বলে ফোরামের দাবি।