Advertisement
E-Paper

খোলা বিদ্যুতের তার, জতুগৃহ জেলার বাজার

কোথাও ওয়্যারিং খুলে বিদ্যুতের তার বেরিয়ে পড়েছে। কোথাও আবার লুকিয়ে মজুত করা হয়েছে প্রচুর কেরোসিন। বাজি, পটকার বস্তাও কম নেই। অথচ জলের উত্‌স বলে গোটা বাজার চত্বরে তেমন কিছু নেই। বাজারের ভেতরে যাতায়াতের রাস্তা এতটাই সঙ্কীর্ণ যে বড় গাড়ি ঢোকা দায়। এটাই হল কোচবিহারের প্রথম সারির বাজারগুলির পরিচিত ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৬
ভস্মীভূত কোচবিহারের বক্সিরহাট বাজার। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

ভস্মীভূত কোচবিহারের বক্সিরহাট বাজার। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

কোথাও ওয়্যারিং খুলে বিদ্যুতের তার বেরিয়ে পড়েছে। কোথাও আবার লুকিয়ে মজুত করা হয়েছে প্রচুর কেরোসিন। বাজি, পটকার বস্তাও কম নেই। অথচ জলের উত্‌স বলে গোটা বাজার চত্বরে তেমন কিছু নেই। বাজারের ভেতরে যাতায়াতের রাস্তা এতটাই সঙ্কীর্ণ যে বড় গাড়ি ঢোকা দায়। এটাই হল কোচবিহারের প্রথম সারির বাজারগুলির পরিচিত ছবি।

এ ব্যাপারে সচেতনতা যে শিকেয় শুক্রবার রাতে অসম লাগোয়া বক্সিরহাট বাজারের বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড ফের তা সামনে আনল। কোচবিহারের ভবানিগঞ্জ বাজার বা মহকুমা ও ব্লক সদরের অন্যান্য বাজারে আগুন নেভানোর ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই বলে অভিযোগ। তাই মাঝেমধ্যেই ওই সব বাজারে আগুন লাগছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হচ্ছে। তবুও কেন পুলিশ-প্রশাসন,দমকল সক্রিয় হয়ে পরিকাঠামো তৈরিতে গুরূত্ব দিচ্ছেনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ব্যবসায়ী মহলে। অন্যদিকে অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম রাখা বাধ্যতামূলক হলেও তা না-রাখায় কেন ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হচ্ছে না কেন তা নিয়েও রহস্য দানা বাঁধছে কোচবিহারে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ২০০৩ সালে কোচবিহারের ভবানিগঞ্জ বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। প্রায় পাঁচ শতাধিক দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তুফানগঞ্জ, দিনহাটা, মাথভাঙা মহকুমা সদরের বাজারেও গত কয়েক বছরের মধ্যে একাধিকবার বড়সড় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। নিশিগঞ্জ, বাণেশ্বর, চিলাখানা, নাককাটিগছ, পেস্টারঝাড় এলাকাতেও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ওই তালিকায় শুক্রবার নাম জুড়ল বক্সিরহাটের। জেলার বেশির ভাগ বাজারে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা বলে যে কিছু নেই, কোচবিহার জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুব্রত সাহাও তা স্বীকার করেছেন।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রতিবারই অগ্নিকান্ডের পর দমকলের পরিকাঠামো উন্নয়ন থেকে জলের বন্দোবস্ত করার আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু পরে ওই ব্যাপারে কাজ হয় না। জেলার মূল বাজারগুলির েবশিরভাগের ক্ষেত্রেই ভূগর্ভস্থ জলাধার তৈরির দাবি পূরণ হয়নি। দিনহাটায় বাজার লাগোয়া এলাকায় পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। তুফানগঞ্জে মরা রায়ঢাক খাত আর্বজনায় ভরে গিয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের কোনও মহলের কোনও হেলদোল নেই।

জনসংখ্যা, দোকানপাটের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দমকল কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে না বলেও সরব হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, বক্সিরহাট, রামপুর, নিশিগঞ্জের মত জেলায় বিভিন্ন এলাকায় নতুন দমকল কেন্দ্র তৈরির বিষয়টি নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে গড়িমসি করা হচ্ছে। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন অবশ্য বলেছেন, “প্রতিটি ব্লকে একটি করে দমকল কেন্দ্র তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।” কোচবিহারের সভাধিপতি পুষ্পিতা ডাকুয়া জানান, জেলার সমস্ত বাজার এলাকাতেই ভূগভর্স্থ জলাধার তৈরির ব্যাপারে দ্রুত প্রকল্প তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হবে।

পরিকাঠামোর ওই বেহাল দশার দায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির চাপানউতোর প্রকাশ্যে এসেছে। বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “রাজ্যে সরকার বদল হলেও জেলার সব বাজারের নিরাপত্তা নিয়েই উদাসীনতার কোনও বদল হয়নি। অগ্নিকান্ডের ঘটনার পরে ভবানীগঞ্জ বাজার নতুন করে তৈরির সময় ভূগর্ভস্থ জলাধার তৈরির আশ্বাস দেয় প্রশাসন। এখনও তা হয়নি। বক্সিরহাটে নতুন দমকল কেন্দ্র তৈরি দূর অস্ত, চালু কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামই বেহাল। সে জন্যই অসম থেকে দমকল আনতে হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। রাজ্যের পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “সব দমকল কেন্দ্রেই গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। তবে ব্যবসায়ীদেরও দোকানে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখতে হবে। দাহ্য সামগ্রী যাতে অরক্ষিত না থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে ব্যবসায়ীদেরই।”

bakshirhat market cooch behar fire market
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy