Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
আগুনে তিন জনের মৃত্যুর তদন্তে প্রশ্ন

গ্যাস সিলিন্ডার এল কোথা থেকে, রহস্য

কন্যা সহ এক দম্পতির আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ঘটনার ৪ দিন পরেও গ্যাস সিলিন্ডার রহস্যের জট খুলতে পারেনি পুলিশ। তবে ঢিলেঢালা তদন্ত নিয়ে জনমানসে ক্ষোভ দানা বাঁধছে টের পেয়ে সোমবার সাতসকালে পুলিশ গিয়ে পোড়া সিলিন্ডার দুটি বাজেয়াপ্ত করেছে। পুড়ে যাওয়া ঘরের গ্যাস-ওভেনটি পুলিশ বাজেয়াপ্ত না-করায় বাসিন্দাদের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এমনকী, পুলিশের একাংশের সদিচ্ছা ও দক্ষতা নিয়ে নানা অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, মৃত পরিবারটি অত্যন্ত দরিদ্র বলেই তদন্তের নামে প্রহসন হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০১:৫৪
Share: Save:

কন্যা সহ এক দম্পতির আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ঘটনার ৪ দিন পরেও গ্যাস সিলিন্ডার রহস্যের জট খুলতে পারেনি পুলিশ। তবে ঢিলেঢালা তদন্ত নিয়ে জনমানসে ক্ষোভ দানা বাঁধছে টের পেয়ে সোমবার সাতসকালে পুলিশ গিয়ে পোড়া সিলিন্ডার দুটি বাজেয়াপ্ত করেছে। পুড়ে যাওয়া ঘরের গ্যাস-ওভেনটি পুলিশ বাজেয়াপ্ত না-করায় বাসিন্দাদের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এমনকী, পুলিশের একাংশের সদিচ্ছা ও দক্ষতা নিয়ে নানা অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, মৃত পরিবারটি অত্যন্ত দরিদ্র বলেই তদন্তের নামে প্রহসন হচ্ছে। গ্যাস সিলিন্ডারের উৎস খুঁজে বার করতে পুলিশ পারছে না কেন সেই প্রশ্নেও এলাকাবাসীদের অনেকে সরব হন। এডিসি কে সাভারি রাজকুমার বলেন, “কার নামে, কোথা থেকে সিলিন্ডারটি নেওয়া হয়েছিল বা গ্যাস সিলিন্ডারে লিক ছিল কিনা তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বাইরে কালোবাজার থেকে সিলিন্ডার নেওয়া হয়ে থাকতে পারে। আমরা বিশদে খোঁজ নিচ্ছি।”

ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে। মাটিগাড়া থেকে বড় জোর কয়েক কিলোমিটার দূরে চম্পাসারিতে আগুন লেগে বাবা উত্তম সাহা, তাঁর স্ত্রী আদরি দেবী ও মেয়ের মৃত্যু হয়। ওই সময়ে পরিবারের ছেলে স্বপ্ননীল কলেজে ছিলেন। ৩ জনের মৃত্যুর পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ কমিশনার তো দূরের কথা, এডিসি, এসিপি কেউ-ই যাননি কেন সেই প্রশ্নে মৃতের পরিবার ও পড়শিদের অনেকেই বিস্মিত। শুধু তা-ই নয়, ঘটনার পরে প্রায় তিন দিন পোড়া সিলিন্ডার খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকলেও পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেনি। এলাকায় ক্ষোভ দেখা দিলে এদিন সিলিন্ডার নিয়ে যায় পুলিশ।

ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বে মাসির বাড়িতে রয়েছে স্বপ্ননীল। তাঁর সঙ্গে এখনও পুলিশ কোনও কথা বলেনি। পরে কথা বলা হবে বলে জানানো হয়েছে। অথচ স্বপ্ননীল ও তাঁর আত্মীয়রা প্রায় সকলেই জানান, শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়ির এক গ্যাস ডিলারের কাছ থেকে তাঁরা সিলিন্ডার নেন। স্বপ্ননীলের মেসো বাবলু দাসের দাবি, “উত্তমবাবুরা আগে প্রধাননগরের নর্মদাবাগানে থাকতেন। সেখানে তাঁদের এক জন আত্মীয় সাধন পালের নামে সংযোগ নেওয়া হয়েছিল। ওই নামেই সিলিন্ডার আসত।”

তবে মাল্লাগুড়ির গ্যাস ডিলার সংস্থার পক্ষে বাপি দাস দাবি করেছেন, তাঁদের আওতায় সাধন পাল নামে কোনও গ্রাহক নেই। তাঁর দাবি, “সাধন পাল নামে এলাকায় কেউ আমাদের কাছ থেকে গ্যাসের সংযোগ নেননি। সিলিন্ডারটি আমাদের এজেন্সি থেকেই সরবরাহ করা হয়েছিল কি না তা বোঝা সম্ভব নয়। আমাদের সমস্ত সিলিন্ডার পরীক্ষা করে দেওয়া হয়। লিক সিলিন্ডার সরবরাহ হয় না।”

তা হলে সিলিন্ডারটি কোথা থেকে সরবরাহ করা হয়েছিল? এটা কী পোড়া সিলিন্ডার দেখে বোঝা যাবে? যে সংস্থার সিলিন্ডার সেই ইন্ডিয়ান অয়েলের শিলিগুড়ি এরিয়া ম্যানেজার বৃন্দাবন সোরেন বলেন, “সিলিন্ডার দেখে কোন ডিলার তা সরবরাহ করেছেন তা বোঝা সম্ভব নয়।” মৃতের পরিবার এবং পড়শিদের দাবি, পুলিশ ঠিকঠাক তদন্ত করলেই সিলিন্ডার রহস্য স্পষ্ট হতে পারে। সিলিন্ডারের ‘লিক’ থাকার কারণেই যদি আগুন লেগে থাকে তা হলে থানার পুলিশও সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারবে। কিন্তু, সিলিন্ডার রহস্যের জট আদপে কবে, কী ভাবে খোলে সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

accident siliguri gas cylinder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE