Advertisement
১০ মে ২০২৪

চাউমিন বিক্রি করে স্বনির্ভর মেয়েরা

মোমো দেব, না চাউমিন? পরিচিত গলা শুনে ফিরে তাকালেন সরকারি কর্মী। মোটরবাইক থামিয়ে বললেন, “এখন নয়, টিফিনের সময়ে আসব।”

চলছে মেয়েদের দোকান। —নিজস্ব চিত্র।

চলছে মেয়েদের দোকান। —নিজস্ব চিত্র।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৩
Share: Save:

মোমো দেব, না চাউমিন?

পরিচিত গলা শুনে ফিরে তাকালেন সরকারি কর্মী। মোটরবাইক থামিয়ে বললেন, “এখন নয়, টিফিনের সময়ে আসব।” চাউমিন রান্নার ফাঁকে শ্যামলা গড়নের মেয়েটির ফের আবদার, “আসবেন কিন্তু!” অন্য দুই তরুণী তখন ভিড় সামলাতে ব্যস্ত। আরেক জন খাবারের দাম বুঝে নিয়ে খদ্দেরের কাছে অনুরোধ রাখছেন, আবার যেন তাঁরা আসেন।

নামী ফাস্ট ফুড জয়েন্ট নয়। শহরের ক্লাব রোডের ধারে দু’টি ছাতার তলায় মোমো-চাউমিনের দোকান খুলে স্বাবলম্বী হওয়ার লড়াই শুরু করেছেন জলপাইগুড়ির ‘অনুভব’ হোমের চার আবাসিক। হোমে বরাবরই রান্নায় আগ্রহ ছিল লক্ষ্মী মণ্ডল, লাবণী দাস, রিম্পা সরকার ও পুতুল দাসের। তা দেখেই বছর আঠেরোর ওই চার তরুণীকে জীবনের নয়া লড়াইয়ে এগিয়ে দিয়েছেন হোম কর্তারা। ‘অনুভব’-এর কো-অর্ডিনেটার দীপশ্রী রায় বলেন, “ওঁরা রকমারি খাবার তৈরিতে ওস্তাদ। তাই ঝুঁকি নিতে সমস্যা হয়নি। হোম থেকে সমস্ত সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাছাই করে বাজার করে দেওয়া হয়। পরের কাজ ওঁরাই করে নেন।”

পরিকল্পনা ও উদ্যোগ যে জলে যায়নি, তা প্রতি দিন রাস্তার পাশের ওই দোকানে ভিড়ই জানান দেয়। মাত্র তিন মাসে খরচ বাদ দিয়ে তাঁদের দৈনিক গড় রোজগার দাঁড়িয়েছে এক হাজার টাকা। স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার এমন অভিনব উপায়ের খবর পৌঁছেছে জেলা সমাজ কল্যাণ দফতরেও। অবাক দফতরের কর্তারা। তাঁরা বলছেন, ওই তরুণীদের লড়াই অন্য হোমের আবাসিকদেরও অনুপ্রেরণা দেবে। দফতরের জেলা প্রজেক্ট অফিসার বিজয় রায়ের কথায়, “ওঁদের ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতা আছে। সরকারি ভাবে কিছু সাহায্য করা যায় কিনা, তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে।” যাঁদের কর্মযজ্ঞ নিয়ে প্রশাসনের কর্তাদের গর্বের অন্ত নেই, তাঁরা কিন্তু নিজেদের উদ্যোগকে সাধারণের পর্যায়েই ফেলেন। লক্ষ্মী বলেন, “হোমের প্রত্যেকে আমাদের সাহায্য করছেন। আমরা চেষ্টা করছি মাত্র।”

কেমন লাগছে কাজ করতে? রিম্পা, লাবণী, পুতুলের উচ্ছ্বাস ভরা উত্তর, “দারুণ!”

কেন হোমের মেয়েদের নিয়ে ফাস্ট ফুডের দোকান? দীপশ্রীদেবী জানান, ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত মেয়েরা হোমে থাকতে পারে। কিন্তু ‘অনুভব’-এর ৪৮ জন মেয়ের মধ্যে সাত জনের বয়স ১৮ পেরিয়েছে। সে জন্য এ ভাবে তাঁদের স্বাবলম্বী করে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “ওঁদের রান্নার নেশা দেখে অনেক চিন্তা করে এই দোকান তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। স্বাবলম্বী হলে ওঁদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হবে।”

তবে এমন প্রচেষ্টা এই প্রথম নয় বলেই জানালেন হোম কর্তারা। খাবারের দোকান খোলার কিছু দিন আগে তাঁরা চাঁদনী সরকার, সান্ত্বনা সরকার ও পায়েল অধিকারীকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে বিউটি পার্লার খুলে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে অবশ্য রিম্পা, লাবণী, পুতুলদের প্রশিক্ষণের দরকার পড়েনি। মেয়েদের উৎসাহ এবং সাফল্য দেখে হোম কর্তারা দ্বিগুণ উৎসাহিত। গরমের সময়ে দোকানে লস্যি, ছাতুর সরবত রাখার কথাও ভাবছেন তাঁরা। চাউমিনের প্লেট সাজানোর ফাঁকে লাবণী বলেন, “সঙ্গে মোমো-চাউমিনও থাকবে। আসবেন কিন্তু।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

self-employed group chowmin biswajyoti bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE