Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
এপ্রিলে ভোট কোচবিহার পুরসভায়

চার মাস আগেই দেওয়াল লিখছে তৃণমূল

পুরভোটের দেরি আছে অনেকটাই। তাতে কী! কোচবিহারে এখনই দেওয়াল দখল করে এলাকায় ‘প্রতাপ’ দেখাতে আসরে নেমে পড়েছে তৃণমূল। তা দেখে বিরোধীদের কটাক্ষ, বোর্ড হারানোর আশঙ্কাতেই সাড়ে চার মাস আগে থেকে দেওয়াল লিখছে তৃণমূল। তৃণমূলের অন্দরের খবর, সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভাবছেন, এতে একদিকে এলাকায় কর্তৃত্ব কতটা সেটা বোঝানো যাবে।

কোচবিহারে শুরু হয়েছে দেওয়াল লিখন। (ডান দিকে) তৃণমূল কাউন্সিলর উজ্জ্বল তরের নামে দেওয়াল ‘দখল’। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

কোচবিহারে শুরু হয়েছে দেওয়াল লিখন। (ডান দিকে) তৃণমূল কাউন্সিলর উজ্জ্বল তরের নামে দেওয়াল ‘দখল’। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

অরিন্দম সাহা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪৫
Share: Save:

পুরভোটের দেরি আছে অনেকটাই। তাতে কী! কোচবিহারে এখনই দেওয়াল দখল করে এলাকায় ‘প্রতাপ’ দেখাতে আসরে নেমে পড়েছে তৃণমূল। তা দেখে বিরোধীদের কটাক্ষ, বোর্ড হারানোর আশঙ্কাতেই সাড়ে চার মাস আগে থেকে দেওয়াল লিখছে তৃণমূল।

তৃণমূলের অন্দরের খবর, সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভাবছেন, এতে একদিকে এলাকায় কর্তৃত্ব কতটা সেটা বোঝানো যাবে। সেই সঙ্গে দলের মধ্যে প্রার্থী হওয়া নিয়ে লড়াইয়ের মধ্যে কে বেশি প্রচারে এগিয়ে সেটাও দলীয় নেতৃত্বের সামনে তুলে ধরার সুযোগ মিলবে। এমনকী, দলের কোচবিহার জেলা নেতাদের একাংশও মানছেন, বিভিন্ন নেতার অনুগামীরা নিজেদের গোষ্ঠীর টিকিট আদায়ের জন্যই ওই কৌশল নিয়েছেন। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলছেন, “২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে কোচবিহার পুরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা। হাতে খুব বেশি সময় নেই। তা ছাড়া দেওয়াল লেখার শিল্পীর সংখ্যা কমেছে। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে দলের তরফে প্রার্থীর নামের জায়গা খালি রেখে দেওয়াল লেখা হচ্ছে।”

তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের পুরসভা নির্বাচনে ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়েছিলেন প্রয়াত পুরসভা চেয়ারম্যান বীরেন কুণ্ডু। তার আগে তিনি ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জেতেন। এ বার নির্বাচন ঘোষণার অপেক্ষায় না থেকে ওই দু’টি ওয়ার্ডেই তৃণমূলের সমর্থনে জোরদার দেওয়াল লিখন চলছে।

প্রয়াত বীরেন কুণ্ডুর ছেলে তথা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের কোচবিহার জেলার নতুন সভাপতি শুভজিৎ কুণ্ডুুর অনুগামী বলে পরিচিতরা ওই দু’টি ওয়ার্ডেই দেওয়াল লিখছেন। আসন সংরক্ষণের চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা না হওয়ায় ওই দু’টি ওয়ার্ডেই নিজেদের পছন্দের তো বটেই, শুভজিৎবাবুকেও অনেকে প্রার্থী হিসাবে দেখতে চান বলে দলের নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন। শুভজিৎ অবশ্য বলছেন, “বাবা (প্রয়াত চেয়ারম্যান) বেঁচে থাকলে আরও আগে দেওয়াল লেখার কাজ শুরু করে দিতেন। তা ছাড়া কোথাও তো প্রার্থীর নাম লেখা হয়নি। আমাদের ছেলেরা কাজ এগিয়ে রাখতে প্রতীক এঁকে রাখছেন। মাত্র দল যাকে চাইবে দেওয়ালের শূন্যস্থানে তার নাম লিখে পূরণ করে প্রচার করা হবে।”

শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। সরাসরি ‘সাইট ফর টিএমসি’ দেখা যাচ্ছে। দলীয় সূত্রের খবর, ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল সভাপতি দীপক দত্তের অনুগামীরা দলের কথা উল্লেখ করে দেওয়াল দখল করছেন। তৃণমূল কাউন্সিলর উজ্জ্বল তরের অনুগামীরা তাঁর হয়ে দেওয়াল ‘বুক’ করে রাখছেন। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর উজ্জ্বল তর বলেন, “উৎসাহী কর্মীরা দেওয়াল দখল করে রাখছেন। যে হেতু টানা প্রায় দু’দশক আমাদের পরিবার থেকে কাউন্সিলর হচ্ছেন। তাই হয়তো কেউ ওভাবে লিখেছেন।” ওয়ার্ডের তৃণমূল সভাপতি দীপক দত্তের বক্তব্য, আমাদের তরফে দলের নামেই দেওয়াল দখল করা হয়েছে। ১৭, ১৯ নম্বরের কিছু এলাকাতেও দেওয়াল লেখা ও দখল হচ্ছে। তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি আবদুল জলিল আহমেদের স্ত্রী আমিনা আহমেদ গত পুরভোটে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী হন। আবদুল জলিল আহমেদ বলেন, “ওই ওয়ার্ডেও কাজ শুরু হবে।”

পুরভোটের এত আগে থেকে এই দেওয়াল-দখল অভিযানকে কটাক্ষই করেছে বিরোধীরা। পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের মহানন্দ সাহা বলেন, “বোর্ড হারানোর আতঙ্কে দেওয়াল আঁকড়ে বাঁচতে চাইছে। তৃণমূল এ ভাবে এলাকায় প্রভাব দেখিয়ে শেষ রক্ষা করতে পারবে না।” বিজেপির জেলা সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দে’র কটাক্ষ, “দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, পুর পরিষেবার ব্যর্থতা আগেভাগে দেওয়াল লিখে চাপা দেওয়া যাবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE