প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ। আগামী বিধানসভা ভোটের আগে জলপাইগুড়ি পুরসভাকে কর্পোরেশনে উন্নীত করার প্রক্রিয়ায় আরও এক ধাপ এগোতে চাইছে রাজ্য সরকার। এমনটাই দাবি করেছেন সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু। পুর এলাকা লাগোয়া তিনটি পঞ্চায়েতের কোন এলাকাগুলি কর্পোরেশনে অর্ন্তভুক্ত করা হবে, তা ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে বলে এ দিন পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। কর্পোরেশনে অর্ন্তভুক্তির লিখিত সম্মতি সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ প্রশাসনকে জমা দিয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে পুর এলাকার সীমানা বাড়িয়ে জলপাইগুড়ি পুরসভাকে ‘গ’ থেকে ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত করা হবে। এর পরেই রাজ্য সরকারের তরফে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্পোরেশন গঠন করার কথা ঘোষণা করতে পারেন বলে পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহনবাবু সহ আট জন কংগ্রেসি কাউন্সিলর কলকাতায় গিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন। সে সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে মোহনবাবুর বৈঠক হয়। জলপাইগুড়ির জন্য রাজ্য সরকারের বেশ কিছু উন্নয়ন প্যাকেজ ঘোষণার প্রতিশ্রুতি সহ কর্পোরেশনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে মোহনবাবু দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, “কোন এলাকাগুলি অর্ন্তভুক্ত হবে, তাও স্থির হয়ে রয়েছে। কর্পোরেশন হলে কর্মী বেশি দরকার। যে পঞ্চায়েত এলাকা কর্পোরেশনে অর্ন্তভুক্ত হবে, সেই দফতরের কর্মীদের কাছে তারা কর্পোরেশনে কাজ করতে চান কিনা, তা জানতে চাইবে রাজ্য সরকার।”
কর্পোরেশনে উন্নীতকরণ প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে ‘কোর কমিটি’ও গঠন করা হবে বলে জানা গিয়েছে। পুর চেয়ারম্যান ছাড়াও জলপাইগুড়ির তৃণমূল সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মন, জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী সহ শহরের নানা পেশার ব্যক্তি ও সমাজ কর্মী থাকবেন। কর্পোরেশন পরিকাঠামো তৈরিতে ইতিমধ্যে নতুন ২০০ কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। গত ফেব্রুয়ারি মাসে কর্পোরেশন গঠন নিয়ে লাগোয়া খড়িয়া, অরবিন্দ এবং পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেছিলেন তৎকালীন সদর মহকুমা শাসক। বর্তমান মহকুমা শাসক সীমা হালদার বলেন, “কোন এলাকা অর্ন্তভুক্ত হবে, সে বিষয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের সম্মতি সবই পুর এবং নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানো রয়েছে। নির্দেশ মতো পদক্ষেপ করা হবে।”
সেই বৈঠকেই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি তাদের সম্মতির কথা জানিয়েছিল। সংযোজনের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি না হলেও প্রশাসনের তরফে যে খসড়া তৈরি হয়েছে তাতে জলপাইগুড়িতে ওয়ার্ড সংখ্যা বেড়ে ৪৫ হতে পারে, জনসংখ্যা হতে পারে ২ লক্ষের কিছু বেশি। পরবর্তীতে আরও বেশ কিছু এলাকা অর্ন্তভুক্ত হবে বলে জানানো হয়েছে। কর্পোরেশন গঠনের আগে নয়া এলাকা পুরসভায় অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী, শহর লাগোয়া শিরিষতলা, পুরাতন পান্ডাপাড়া, ডাঙাপাড়া, মোহিতনগর, কোরানিপাড়া এলাকাকে পুরসভার অর্ন্তভুক্ত করা হবে। জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন এবং মোহিতনগর স্টেশনও পুর এলাকার অর্ন্তভুক্ত হবে। যার ফলে জলপাইগুড়ি পুরসভা এলাকায় তিনটে রেল স্টেশন যেমন থাকবে, সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, সরকারি পলিটেকনিক কলেজ, স্থানীয় টিবি হাসপাতালটিকেও পুর এলাকার অর্ন্তভুক্ত হবে।
এ দিকে, রাজনৈতিক সূত্রের খবর, আলিপুরদুয়ারকে নতুন জেলা ঘোষণার পরে জলপাইগুড়ি জেলার ‘অঙ্গছেদ হয়েছে’ বলে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ দানা বাঁধে। জলপাইগুড়ির গুরুত্বও অনেকটাই কমে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। সেই ক্ষোভে মলম লাগাতে রাজ্য সরকার কর্পোরেশন ঘোষণা করতে চলেছে বলে কংগ্রেস এবং বিজেপি নেতাদের অনেকেরই অভিমত। যদিও পরিকাঠামো সম্পূর্ণ তৈরি না করে কর্পোরেশন গঠন করা হলে, পরিষেবায় কতটা ফারাক হবে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy