নতুন জেলা গঠনের পর আলিপুরদুয়ারে যাবতীয় পরিকাঠামো তৈরির তোড়জোড় চলছে। তবে ২০ বছর আগে গঙ্গারামপুরকে মহকুমা হিসেবে ঘোষণা করা হলেও, আজও উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। চারটি ঘুপচি ঘর ভাড়া করে গঙ্গারামপুরের বুনিয়াদপুরে চলছে মহকুমা আদালত। তৈরি হয়নি মহকুমা সংশোধনাগারও।
সংশোধনাগার তৈরি না হওয়ায় পুলিশকে রোজ বালুরঘাট সদর থেকে বন্দিদের নিয়ে ১৩০ কিলোমিটার দূরের বুনিয়াদপুর মহকুমা আদালতে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এ জন্য গাড়ির তেল বাবদ প্রতি বছর খরচ হচ্ছে প্রায় ন’লক্ষ টাকা। প্রশাসন সূত্রে খবর, গত দেড় দশকে যার পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। পুলিশের একাংশের দাবি, ঠিকঠাক পরিকল্পনা হলে ওই টাকায় ছোট মাপের সংশোধনাগার তৈরি হয়ে যেতে পারত। গঙ্গারামপুরের মহকুমাশাসক দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, “মহকুমা আদালতের নতুন বাড়ির জন্য কোর্ট মোড় এলাকায় নির্ধারিত দু’একর সরকারি জমি নির্ধারিত রয়েছে। এর বেশি জানা নেই।”
১৯৯৪ সালে বুনিয়াদপুরে একটি ভাড়া বাড়িতে মহকুমা আদালতের কাজকর্ম শুরু হয়েছিল। কিন্তু ছোট আকারের ওই দোতলা বাড়িতে আদালত চালাতে গিয়ে প্রতি মুহূর্তে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সকলকেই। মহকুমা আদালতের নীচতলায় বন্দিদের রাখার যে হাজত তাতে ঠাসাঠাসি অবস্থা হয়। গরমে ঘেমেনেয়ে নাজেহাল হন সকলে। এই বাড়িতে অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ কোর্ট, সিভিল জজ জুনিয়র ডিভিশনের কোর্ট, অতিরিক্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট চালু রয়েছে। গঙ্গারামপুর, বংশীহারি, হরিরামপুর ও কুশমন্ডিমোট চারটি ব্লকের মানুষ বিচারের জন্য আসেন এখানে। আইনজীবীর সংখ্যা ৮০ জনের উপরে। ভাড়া বাড়িতে চলা আদালত ভবনের সামনে পলিথিন ও বেড়ার ছাউনি দেওয়া গুমটি গুলিতে ল’ক্লার্ক ও মুহুরিদের সঙ্গে রোদ জল মাথায় নিয়ে বিচারপ্রার্থী ও তাদের আত্মীয়দের বসতে হয়। ল’ ক্লার্কদের অভিযোগ, চরম সমস্যার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। অথচ এই বাড়ির জন্য প্রতিমাসে ১৪ হাজার টাকা ভাড়াও গুনতে হচ্ছে সরকারকে।
সমস্যার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল আদালতের অতিরিক্ত সরকারি আইনজীবী চিরঞ্জীব মিত্রও। তিনি বলেন,“বুনিয়াদপুর মহকুমা আদালতে রোজ গড়ে অন্তত শতাধিক মামলার শুনানি হয়। বেশির ভাগ দিন একসঙ্গে নিয়ে আসা হয় প্রায় দু’শো আসামীকে। ছোট হাজত ঘরে তাদের স্থান সঙ্কুলান হয় না। তবে মহকুমা আদালতের নিজস্ব বাড়ি তৈরির জন্য জমি ঠিক করা হয়েছে।” গঙ্গারামপুরের সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী নারায়ণ বিশ্বাস বলেন, “বুনিয়াদপুরে মহকুমা আদালতের নিজস্ব ভবন তৈরির জন্য উদ্যোগ নিয়ে সরকারি জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু জমি হস্তান্তর নিয়ে নানা সমস্যায় প্রকল্পটি থমকে যায়।”
জেলার আইন পরিষদীয় সচিব বিপ্লব মিত্র অভিযোগ করেন, বাম আমলে মহকুমা আদালত চালু করে পরিকাঠামো সম্পূর্ণ করাতে কেউ উদ্যোগী হননি বলেই বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। তিনি জানান, গত দু’বছরে কোর্ট মোড় এলাকায় কৃষি ফার্মের দু একর জমি আদালতের জন্য চিহ্নিত করে আইন দফতরকে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। পূর্ত দফতর ভবন তৈরির খসড়া প্রকল্প তৈরি করে জমা দিয়েছে অর্থ দফতরে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায়। আগামী সাত আট মাসের মধ্যে মহকুমা আদালতের নিজস্ব বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে বিপ্লববাবুর আশা। তিনি এটাও জানান, বুনিয়াদপুরে মহকুমা সংশোধনাগার তৈরির জমিও ঠিক করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy