Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নেতাদের নিয়ে বৈঠকেও প্রশ্নের মুখে অর্পিতা

পাকা দাড়ি। ফ্রেঞ্চ কাট। রিমলেস চশমা।আপাত শান্ত চেহারার ভদ্রলোক উঠে দাঁড়িয়ে সটান প্রশ্ন করলেন, “নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ কে? তিনি কি আগে রাজনীতি করেছেন? জিতলে কি তাঁকে কলকাতায় খুঁজতে যাব?” বুধবার দলের কর্মিসভায় তাঁকে শুনছে হয়েছিল, “জেতার পরে জেলায় থাকবেন তো? আপনাকে দেখা যাবে তো?” চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে, বৃহস্পতিবার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ও ব্লক কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ফের অস্বস্তিতে ‘আক্রান্ত’ বালুরঘাটের তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ।কুমারগঞ্জের পরে গঙ্গারামপুর। নিচুতলার কর্মী থেকে জেলা নেতা‘বহিরাগত’ এই নাট্যকর্মী প্রার্থীকে নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের প্রশ্নের শেষ নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গঙ্গারামপুর শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৪ ০৪:০৭
Share: Save:

পাকা দাড়ি। ফ্রেঞ্চ কাট। রিমলেস চশমা।

আপাত শান্ত চেহারার ভদ্রলোক উঠে দাঁড়িয়ে সটান প্রশ্ন করলেন, “নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ কে? তিনি কি আগে রাজনীতি করেছেন? জিতলে কি তাঁকে কলকাতায় খুঁজতে যাব?”

বুধবার দলের কর্মিসভায় তাঁকে শুনছে হয়েছিল, “জেতার পরে জেলায় থাকবেন তো? আপনাকে দেখা যাবে তো?” চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে, বৃহস্পতিবার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ও ব্লক কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ফের অস্বস্তিতে ‘আক্রান্ত’ বালুরঘাটের তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ।

কুমারগঞ্জের পরে গঙ্গারামপুর। নিচুতলার কর্মী থেকে জেলা নেতা‘বহিরাগত’ এই নাট্যকর্মী প্রার্থীকে নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের প্রশ্নের শেষ নেই।

তবে কুমারগঞ্জের মতো এ দিনও ক্রমান্বয়ে উঠে আসা এই সব অস্বস্তিকর প্রশ্ন সামাল দিতে সভা থেকে বাইরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ওই জেলা কমিটির অন্যতম সম্পাদক জয়নাল আবেদিনকে। হরিরামপুর ব্লকের পুণ্ডরী এলাকার পরিচিত নেতা জয়নাল অবশ্য সভার বাইরে এসেও রীতিমতো ক্ষোভের সঙ্গেই বলতে তাকেন, “আমি ওঁকে চিনি না। তাই পরিচয় জানতে চেয়েছি। এতে অন্যায়ের আছেটা কী?”

বুধবারের কর্মিসভায় অর্পিতাকে ‘বিব্রত’ করেছিলেন যে প্রশ্নকর্তা তাঁর পরিচয় শেষ পর্যন্ত আর জানা যায়নি। তবে জয়নাল পরিচিত নেতা। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বিধানসভা নির্বাচনে দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের হাত ধরে কংগ্রেস থেকে শাসক দলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। নির্বাচনের পরে সংগঠনকে ঢেলে সাজতে তাঁকে জেলা সম্পাদক করা হয়। এক জেলা নেতা বলেন, “জয়নাল যে বিপ্লব-ঘনিষ্ঠ তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে ওঁর কথায় আড়াল থাকে না। সোজা সাপটা কথা বলেন।” বৈঠকের পরে জয়নালও বলছেন, “দেখুন ভাই, গ্রামের রাজনীতি করা লোক, শহরের লোকের মতো গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। প্রার্থীকে তো ওঁর রাজনৈতিক পরিচয়টুকু জানতে চেয়েছি। এর মধ্যে জটিলতার কী আছে!”

প্রচার শুরুর মুখেই দলনেত্রীর পছন্দের প্রার্থীকে এ ভাবে ঘন ঘন হেনস্থা হতে হচ্ছে কেন?

প্রশ্নটা দলের অন্দরে ঘুরপাক খাচ্ছে। দলের একটি শীর্ষ সূত্র জানাচ্ছে, বালুরঘাট কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে অর্পিতার নাম ঘোষণার পরেই জেলা জুড়ে প্রশ্ন উঠেছিল‘অর্পিতা কেন?’ বছরভর ওই জেলা জুড়ে দলীয় সংগঠনকে ‘মজবুত’ করেছেন বিপ্লবাবু। লোকসভার আগে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বালুরঘাট কেন্দ্রে দলের কর্মীদের অধিকাংশই ভেবেছিলেন বিপ্লবকেই প্রার্থী করা হবে। তাঁদেরই এক জন বলছেন, “সম্বৎসর খেটে ফসল বুনবেন এক জন আর তা ঘরে তুলবেন অন্য জন, এটা হতে পারে না।” ক্ষোভের সূত্রপাত এখানেই। দলের জেলা সভাপতি টিকিট না-পাওয়ায় একান্তে তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীর কাছে ‘দুঃখ’ও প্রকাশ করেন বলে খবর। কুমারগঞ্জের কর্মিসভায় সেই ক্ষোভই ফুটে বেরিয়েছিল। এ দিন গঙ্গারামপুরের ঘটনাও কি তারই বহিঃপ্রকাশ?

এ দিন ওই সভায় মঞ্চে ছিলেন জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র। সঙ্গে বিধায়ক শঙ্কর চক্রবর্তী। পরিস্থিতি সামাল দিতে দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রবীর রায় উঠে দাঁড়িয়ে জয়নালবাবুকে বলতে থাকেন, “দয়া করে এমন প্রশ্ন করবেন না।” জয়নাল অবশ্য তাতেও দমেননি। পরিস্থিতি ক্রমেই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে জয়নালকে থামাতে এগিয়ে আসেন প্রবীরবাবু। সেই সুযোগে প্রাথমিক অস্বস্তি কাটিয়ে অর্পিতা নিজের মতো করে প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকেন।

তাঁর দাবি, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় থেকেই তিনি সরাসরি রাজনীতি করছেন। তা ছাড়া বালুরঘাট পুরসভা ভোটের প্রচারও তিনি করেছেন। পরে অর্পিতা বলেন, “কোনও অপ্রীতিকর কিছু তো হয়নি, খোলামেলা পরিবেশেই সকলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আসলে কথা বলতে গিয়েই হয়তো একটু জোরে বাক্যালাপ হচ্ছিল।” বিপ্লববাবুও বলেন, “না না, তেমন কিছুই নয়। আলাপ আলোচনার সময়ে জয়নাল প্রার্থী সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন প্রশ্ন করছিলেন। দলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ নেই।”

তবে, এই ধরনের ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য বিপ্লববাবু এ দিন সব নেতা-কর্মীদের সর্তক করে দিয়েছেন। জেলা নেতাদেরও ভোট বা প্রার্থী নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেওয়ার উপরেও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। প্রার্থীর সভা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেওয়ায় এ দিন গঙ্গারামপুরের বিধায়ক সত্যেন রায়কে ভর্ৎসনাও করেন তিনি। বালুরঘাটের বিধায়ক শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র এবং প্রার্থী অর্পিতা ছাড়া আর কেউ বিবৃতি দিতে পারবেন না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arpita ghosh gangarampur balurghat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE