Advertisement
১৯ মে ২০২৪

নকলে বাধা দেওয়ায় কুরুক্ষেত্র বুনিয়াদপুর

নকল ধরার প্রতিবাদে দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুর কলেজে একদল ছাত্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও শিক্ষকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। কালিয়াগঞ্জ কলেজের ওই ছাত্রদের উপরে এর পরে বুনিয়াদপুর কলেজের ছাত্ররাও চড়াও হয় বলে অভিযোগ। শুক্রবার ঐচ্ছিক বাংলার পরীক্ষা চলাকালীন দ্বিতীয় বর্ষের ইলেকটিভ বাংলা পরীক্ষা চলাকালীন উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ কলেজের ৫ ছাত্রকে ধরা হয়।

(বাঁ দিকে) বুনিয়াদপুরে অবরোধ। (ডান দিকে) অবরোধ তুলে দিচ্ছে পুলিশ। অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

(বাঁ দিকে) বুনিয়াদপুরে অবরোধ। (ডান দিকে) অবরোধ তুলে দিচ্ছে পুলিশ। অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৪ ০১:৩৬
Share: Save:

নকল ধরার প্রতিবাদে দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুর কলেজে একদল ছাত্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও শিক্ষকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। কালিয়াগঞ্জ কলেজের ওই ছাত্রদের উপরে এর পরে বুনিয়াদপুর কলেজের ছাত্ররাও চড়াও হয় বলে অভিযোগ।

শুক্রবার ঐচ্ছিক বাংলার পরীক্ষা চলাকালীন দ্বিতীয় বর্ষের ইলেকটিভ বাংলা পরীক্ষা চলাকালীন উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ কলেজের ৫ ছাত্রকে ধরা হয়। পরীক্ষা শেষ হতেই একদল ছাত্র বিক্ষোভ শুরু করে। বুনিয়াদপুর কলেজের অধ্যক্ষ জীতেশচন্দ্র চাকি জানান, “গত তিনদিনে প্রথম বর্ষ এবং দ্বিতীয় বর্ষ মিলিয়ে ১০৯ জন পড়ুয়ার নকল ধরা হয়েছে। এ দিনও ৫ জনকে ধরা হয়। পরীক্ষা শেষ হতেই একদল ছাত্র বিক্ষোভ শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়কে সব জানাচ্ছি।” তাঁর অভিযোগ, “অকথ্য গালিগালাজ করা হয়। ইট ছোড়া শুরু হয়।”

এর পরে, বুনিয়াদপুর কলেজের একাংশ ছাত্র প্রতিবাদ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে মারপিট বেধে যায়। সংঘর্ষে কালিয়াগঞ্জ কলেজের ৭ জন পড়ুয়া এবং বুনিয়াদপুর কলেজের ১ জন ছাত্র জখম হন। প্রতিবাদে কালিয়াগঞ্জ কলেজের পরীক্ষার্থীরা কলেজের সামনে রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। গণ্ডগোলের খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাঠি চালিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। গঙ্গারামপুরের এসডিপিও স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় মৃদু লাঠি চালানোর কথা স্বীকার করে বলেন, “অবরোধস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।”

কালিয়াগঞ্জ এবং বুনিয়াদপুর দুটি কলেজেরই ছাত্র সংসদ টিএমসিপির দখলে রয়েছে। সেখানে ওই বিক্ষোভকারী ছাত্রদের ভূমিকায় সংগঠনের মধ্যে অস্বস্তি বেড়েছে। বুনিয়াদপুর কলেজের তৃণমূল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কর্মকার বলেন, “একদল ছাত্র অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের গালিগালাজ করে চড়থাপ্পড় মারে। তখন প্রতিবাদ করা হয়।” যদিও টিএমসিপির দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি অতনু রায় বলেন, “ঘটনার সঙ্গে যুক্তরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থক হতে পারে না।” কালিয়াগঞ্জ কলেজ ছাত্র সংসদের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পবন প্রসাদ বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন। তবে সংগঠনের কালিয়াগঞ্জ কলেজের ছাত্র ইউনিটের সভাপতি দেবাজ্য দেবে’র অভিযোগ, “বুনিয়াদপুর কলেজের অধ্যক্ষ ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা দিতে দেননি।”

গোলমালের জেরে দ্বিতীয় হাফে প্রথমবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরীক্ষা কার্যত ভণ্ডুল হয়ে যায়। শতাধিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে এ দিন মাত্র ৭ জন পড়ুয়া পরীক্ষা দেন। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সমূহের নিয়ামক সনাতন দাস বলেন, “অধ্যক্ষকে রিপোর্ট দিতে বলেছি। বাকিরা কেন পরীক্ষা দেয়নি তা দেখা হচ্ছে।”

গত ২৩ জুন থেকে বুনিয়াদপুর কলেজে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে। চলবে ২৮ জুলাই পর্যন্ত। কালিয়াগঞ্জ কলেজের ছাত্রছাত্রীদের বুনিয়াদপুর কলেজে পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে। কলেজ সূত্রের খবর, মোট ৫১৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় বর্ষের ১৮৪ জন গত ২৫ জুন থেকে ইলেকটিভ বাংলার পরীক্ষায় বসেন। প্রথমদিনেই নকল করার দায়ে ২৯ জনের খাতা কেড়ে নেওয়া হয়। ২৬ জুন দ্বিতীয় দিনে ১৩ জনের পরীক্ষা বাতিল করা হয়।

এ দিনই নকল করা নিয়ে বিতর্কে জড়ান বালুরঘাট কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক টিএমসিপি নেতা ভীম হালদার। দুপুরে গঙ্গারামপুর কলেজে ইলেকটিভ বাংলার ষষ্ঠ পত্রের পরীক্ষা চলার সময় ঘটনাটি ঘটে। ভীমবাবুর দাবি, “অনেকে ভুল করে মোবাইল পকেটে রেখেছিলেন। তা বাজলে তাঁরা বন্ধ করে দেন। তা সত্ত্বেও তাঁদের খাতা কেড়ে নেওয়া হয়। আমি প্রতিবাদ করায় আমার খাতা কেড়ে নেওয়া হয়।” তাঁর অভিযোগ, “পায়ের নীচ থেকে শিক্ষক একটি কাগজের টুকরো পান। তাতেই পরীক্ষা শেষের মিনিট ১৫ আগে সন্দেহ করে আমার খাতা কেড়ে নেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে আমি আপত্তি জানিয়ে পরীক্ষার হল থেকে বার হয়ে যাই।” গঙ্গারামপুর কলেজের অধ্যক্ষ সৌরভ শর্মাধিকারী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী নকল ধরা হচ্ছে। এ নিয়ে আর কিছু বলব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE