Advertisement
E-Paper

নয়া পদে বীরেন-পুত্র, ক্ষোভ তৃণমূলেই

তৃণমূলের যুব সংগঠনের সভাপতি নির্বাচন নিয়ে দলের মধ্যেই ক্ষোভের আঁচ দেখা দিয়েছে কোচবিহারে। প্রয়াত পুর-চেয়ারম্যান বীরেন কুণ্ডুর ছেলে শুভজিতকে ওই পদের জন্য বাছা হয়েছে বলে ক্ষুব্ধ দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, “যে যুবককে কখনও দলের মিটিং, মিছিল বা কোনও আন্দোলনে দেখা যায়নি, তাঁকে কীভাবে যুব সভাপতির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হল?”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৩১
রবীন্দ্রনাথ ঘোষের (বাঁ দিকে) সঙ্গে শুভজিত্‌ কুণ্ডু। নিজস্ব চিত্র।

রবীন্দ্রনাথ ঘোষের (বাঁ দিকে) সঙ্গে শুভজিত্‌ কুণ্ডু। নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূলের যুব সংগঠনের সভাপতি নির্বাচন নিয়ে দলের মধ্যেই ক্ষোভের আঁচ দেখা দিয়েছে কোচবিহারে। প্রয়াত পুর-চেয়ারম্যান বীরেন কুণ্ডুর ছেলে শুভজিতকে ওই পদের জন্য বাছা হয়েছে বলে ক্ষুব্ধ দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, “যে যুবককে কখনও দলের মিটিং, মিছিল বা কোনও আন্দোলনে দেখা যায়নি, তাঁকে কীভাবে যুব সভাপতির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হল?”

দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য এই প্রশ্নে শুভজিতবাবুর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। সোমবার জেলা পার্টি অফিসে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে শুভজিতবাবুকে পাশে বসিয়ে তাঁর পক্ষে সওয়াল করেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তিনি বলেন, “বীরেনবাবু আমাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর আগে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি ছিলেন তিনি। যা থেকে স্পষ্ট একটি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের মধ্যে বড় হয়েছেন শুভজিত্‌। তিনি যুব সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।” তিনি জানান, সেই বিশ্বাস থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুভজিতের হাতে জেলার দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন। শুভজিত্‌ বলেন, “দল আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে তা পালন করব। দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য কর্মসূচি নেব।”

তবে জেলা সভাপতির এই বক্তব্যেও আশ্বস্ত হননি দলের কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই। এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে দলের সহ সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদকে দেখা যায়নি। তিনি অবশ্য তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে জেলা কমিটির এক নেতা স্পষ্টই বলেন, “যারা দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল করছেন তাঁদের বঞ্চিত করে একদম নতুন কাউকে যুব সভাপতির মতো দায়িত্ব দেওয়া ঠিক হয়নি। এ ছাড়া শুভজিত্‌ কুণ্ডুকে কোনওদিনও ছাত্র রাজনীতি বা যুব রাজনীতি করতে দেখা যায়নি। শুধু জেলা সভাপতির ঘনিষ্ঠ এবং প্রয়াত নেতার ছেলে বলে তাঁকে এমন দায়িত্ব দেওয়া হবে?

বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন তৃণমূলের মাথাভাঙার শ্রমিক সংগঠনের নেতা আলিজার রহমানও। তাঁর ক্ষোভ, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন থেকে তৃণমূল তৈরি করেন সেদিন থেকে আমরা রাজনীতি করছি। আগামী দিনেও করব। সেখানে পুরনো কর্মীদের একদম বঞ্চিত করে নতুনদের দায়িত্ব দেওয়া ঠিক নয়।” তাঁর বক্তব্য, “যুব সংগঠনের জেলা সভাপতির দায়িত্ব নিতে গেলে অন্ততপক্ষে যুব আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন করে উঠে আসা উচিত। সে সব বিবেচনা না করে কেন জেলা সভাপতি হিসেবে শুভজিত্‌ কুণ্ডুুকে বেছে নেওয়া হল বুঝতে পারছি না।” তবে সদ্য-প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা তুফানগঞ্জের বিধায়ক অর্ঘ্য রায় প্রধান অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি সবরকম ভাবে নতুন সভাপতিকে সাহায্য করবেন।

কোচবিহার জেলা রাজনীতিতে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের হাত ধরেই কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন প্রয়াত চেয়ারম্যান বীরেন কুণ্ডু। তাঁকে দলের তরফে কোচবিহার জেলা কার্যকরি সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কয়েক মাস আগে বীরেনবাবু অসুস্থ হয়ে মারা যান। দলের একাংশ কর্মীরাই জানাচ্ছেন, তার আগে দু’জনের সখ্যতা ছিল চোখে পড়ার মতো। জেলা রাজনীতিতে দলের জেলা সহ-সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদ, বিধায়ক অর্ঘ্য রায় প্রধানরা রবীন্দ্রনাথ বিরোধী বলে পরিচিত। প্রায় তিন বছর ধরে অর্ঘ্যবাবু যুব সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। দলীয় সূত্রের খবর, এ বারে যুব সভাপতি বদলের ইঙ্গিত পেতেই রবীন্দ্রনাথ তাঁর অনুগামীকে ওই পদ দিতে উদ্যোগী হন। সেখানে বীরেনবাবুর ছেলে শুভজিত্‌ই ছিলেন তাঁর একমাত্র পছন্দ।

রবীন্দ্রনাথ-ঘনিষ্ঠ নেতাদের যুক্তি, গত লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার পুরসভার ২০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০টিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। এই অবস্থায় বিজেপিকে টেক্কা দিতে বীরেনবাবুর ছেলেই দলের একমাত্র হাতিয়ার। বীরেনবাবু পুরসভা এলাকায় ব্যক্তিগত ভাবে জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর ছেলের মাধ্যমে ওই হাওয়াকেই কাজে লাগাতে চায় তৃণমূল। সে জন্যই পুরসভা ভোটের আগে তাঁকে এমন দায়িত্ব দেওয়া হল।

new post rabindra ghosh shuvojit kundu cooch behar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy