মন্ত্রিত্ব থাকলেও গিয়েছিল দফতর। এ বার মালদহের জেলা তৃণমূলের সভানেত্রীর পদ থেকেও সরতে হল সাবিত্রী মিত্রকে। শুক্রবার তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদলের পরে জেলার নতুন সভাপতি হয়েছেন দক্ষিণ মালদহ কেন্দ্রে দলের পরাজিত প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন।
লোকসভা ভোটে জেলায় খারাপ ফলের পরে সাবিত্রী ও আরেক মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। কিছুদিন আগে মন্ত্রিসভায় রদবদলের সময়েও কৃষ্ণেন্দুর দফতর বদল করা হয়। সাবিত্রীর মন্ত্রিত্ব থাকলেও তিনি দফতর পাননি। ইঙ্গিত ছিল তখনই। তৃণমূল সূত্রে খবর, এ দিন এই রদবদলের জেরে কার্যত ভেঙে পড়েছেন সাবিত্রী মিত্রের অনুগামীরা। বরং জেলায় তৃতীয় শিবিরের নেতা হিসাবে পরিচিত ইংরেজবাজার পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান দুলাল সরকার ও কৃষ্ণেন্দু অনুগামী কাউন্সিলর প্রতিভা সিংহকে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের যুগ্ম কার্যকরী সভাপতি করায় কিছুটা উজ্জীবিত কৃষ্ণেন্দু-শিবির। তার সঙ্গেই নতুন করে যেন অক্সিজেন পেয়েছেন দুলাল সরকারের অনুগামীরা।
নতুন জেলা সভাপতি হওয়ার পর মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার জন্য আমি আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সংগঠনের সবাইকে নিয়ে স্বচ্ছ্বতা, সততা ও দ্রুততা এই তিনকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই। আমি যদি কোথাও ভুল করি তবে ভুল ধরিয়ে দিন। ঠিক পথে চলতে চাই। শিক্ষা জগতে এখন যাঁরা আমাদের সংগঠন থেকে দূরে আছেন তারা কাছে নিয়ে আসতে চাই।”
দল সূত্রে খবর, নতুন জেলা সভাপতিকে ১৫ দিনের মধ্যে ব্লক সভাপতি তালিকা তৈরি করে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতদিন জেলার ১৫টি ব্লকের বেশিরভাগ সাবিত্রী মিত্রের অনুগামীরা ব্লক সভাপতি ছিলেন। এখন নতুন ব্লক সভাপতি করতে নবনিযুক্ত জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন কার কথা রাখেন ও কার অনুগামীকে ব্লক সভাপতি করেন এখন সেটাই দেখার। বিদায়ী সভাপতি সাবিত্রীদেবী অবশ্য বলেছেন, “জেলা সংগঠনকে সাজাতে জেলা সভাপতি পদে নতুন মুখ আনা হয়েছে। এটা দলের খুব ভাল দিক। দলের নতুন সভাপতিকে সম্পূর্ণভাবে সাহায্য করব।” সহযোগিতার কথা বলেছেন কৃষ্ণেন্দুবাবুও। তাঁর কথায়, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের হাতে দলটা গড়েছেন। দলের ও সরকারে উন্নতির জন্য মুখ্যমন্ত্রী সরকার ও দলের পুনর্গঠন করছেন। আমরা চাই নতুন মুখ কাজ করুক। আমরা তাঁকে সবদিক থেকে সহযোগিতা করব।”
সংগঠন প্রসঙ্গে মোয়াজ্জেম এ দিন বলেছেন, “বুথস্তর থেকে সংগঠন সাজাতে চাই। বুথস্তরের চেয়ারম্যান ও দু’জন কো-চেয়ারম্যানই ঠিক করবেন কে অঞ্চল সভাপতি হবেন। অঞ্চল সভাপতিরা ঠিক করবেন ব্লক সভাপতি।” তবে সবাইকে নিয়ে চলার কথা বলেও মোয়াজ্জেম কার্যক্ষেত্রে সাবিত্রী, কৃষ্ণেন্দু বা দুলাল সরকারের সহযোগিতা পাবেন কি না সেই প্রশ্ন উঠছেই।
লোকসভা ভোটে প্রার্থী হয়ে জেলায় তিন শিবিরের মধ্যে লড়াই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। শুধু হার নয়, চতুর্থ স্থানে ছিলেন তিনি। তার পরে মোয়াজ্জেম আক্ষেপের সঙ্গে বলেছিলেন, “মালদহ রাজনীতি হয় না, ব্যবসা হয়।” এ বার দায়িত্ব নিয়ে তিনি কি তা পাল্টাতে পারবেন? মোয়াজ্জেমের সাফ জবাব, “সময়ই এর জবাব দেবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy