Advertisement
১০ মে ২০২৪

বিধায়কের ছেলেরই চাকরি, ক্ষোভ তৃণমূলে

কলেজের চাকরিতে স্বজন পোষণের অভিযোগে দলের অন্দরেই ক্ষোভের মুখে পড়েছেন ফালাকাটায় তৃণমূলের বিধায়ক অনিল অধিকারী এবং ওই ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সমরেশ পাল। অনিলবাবুর ছেলে ফালাকাটারই জটেশ্বর গ্রামের লীলাবতী মহাবিদ্যালয়ে একটি অশিক্ষক পদে চাকরি পেয়েছেন। সমরেশবাবুর ভাগ্নেও ওই কলেজে অশিক্ষক পদে চাকরি পেয়েছেন। অনিলবাবু কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি এবং সমরেশবাবু ওই কমিটির সম্পাদক।

নিলয় দাস
ফালাকাটা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫১
Share: Save:

কলেজের চাকরিতে স্বজন পোষণের অভিযোগে দলের অন্দরেই ক্ষোভের মুখে পড়েছেন ফালাকাটায় তৃণমূলের বিধায়ক অনিল অধিকারী এবং ওই ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সমরেশ পাল। অনিলবাবুর ছেলে ফালাকাটারই জটেশ্বর গ্রামের লীলাবতী মহাবিদ্যালয়ে একটি অশিক্ষক পদে চাকরি পেয়েছেন। সমরেশবাবুর ভাগ্নেও ওই কলেজে অশিক্ষক পদে চাকরি পেয়েছেন। অনিলবাবু কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি এবং সমরেশবাবু ওই কমিটির সম্পাদক।

স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দাবি, তাঁরা নিজেদের ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে স্বজন পোষণ করেছেন। তবে অনিলবাবু ও সমরেশবাবুর দাবি, প্রত্যেকেই নিজেদের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছেন। এ নিয়ে দলে কোনও ক্ষোভও নেই বলে দাবি করেছেন তাঁরা।

লীলাবতী মহাবিদ্যালয়ে পঠনপাঠন শুরু হয় ২০১৩ সালে। জটেশ্বর হাইস্কুলের তিনটি ঘরে অস্থায়ী ভাবে কলেজ চলছে।

শিক্ষকেরা কেউই স্থায়ী নন। মাস ছ’য়েক আগে স্থায়ী পদের জন্য উচ্চ শিক্ষা দফতরের কাছে ১০টি পদের অনুমোদন চান কর্তৃপক্ষ। তবে মাত্র তিনটি অশিক্ষক পদের জন্য তিন মাস আগে অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই তিনটি পদের জন্য ১৮ জুলাই সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রার্থীদের আবেদন করতে বলা হয়। ৩১ অগস্ট ৩৫০ জন পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার মধ্যে মোট ৪৫ জনকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। শেষ পর্যন্ত অনিলবাবুর পুত্র ও সমরেশবাবুর ভাগ্নে এবং স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মী সুদীপ্ত ঘোষকে নিয়োগ করা হয়। সুদীপ্তবাবু ওই কলেজের অবৈতনিক অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। তাঁরা তিন জনেই গত ১ নভেম্বর নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন।

এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে তৃণমূলের কিছু কর্মী জেলা নেতাদের কাছে ক্ষোভ জানিয়েছেন। ওই পদগুলিতে যাঁরা চাকরির আবেদন করেছিলেন, তাঁদের অনেকে এখন নিয়োগ বাতিল করে স্বচ্ছ পদ্ধতিতে ফের পরীক্ষা নিতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন। হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন বলেও তাঁরা হুমকি দিয়েছেন। জটেশ্বরের তৃণমূলের নেতা নির্মল দাস ওই কলেজে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। তিনি বলেন, “সিপিএমের স্বজনপোষণ নিয়ে আন্দোলন করেছি, এখন আমাদের দলের এক বিধায়ক নিজের ছেলেকে যে ভাবে চাকরি পাইয়ে দিলেন, তা মেনে নিতে পারছি না।” তিনি জানান, পুরো বিষয়টি তাঁরা জেলা সভাপতিকে জানিয়েছেন। অপর এক তৃণমূল কর্মী পীযূষ সরকার বলেন, “বাম আমলে যা হয়েছে এখন তারই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।” তবে আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর কথায়, “কলেজের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টি আমার জানা নেই। আমাকে কেউ জানায়ওনি।”

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অস্থায়ী অধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ নাগ জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষের কেউ লিখিত পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা পরীক্ষা নিয়েছেন। তবে মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছেন অন্য এক কলেজের অধ্যক্ষ এবং এই কলেজের পরিচালন সমিতির সম্পাদক সমরেশবাবু সহ মোট পাঁচ জন। সমরেশবাবুর অবশ্য দাবি, “লিখিত পরীক্ষার প্রক্রিয়ায় আমি জড়িত ছিলাম না। আমার মামাতো বোনের ছেলে সহ যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, সকলেই যোগ্যতা রয়েছে বলেই তা পেয়েছেন।” অনিলবাবুর বক্তব্য, “পদ্ধতি মেনে আমার ছেলে চাকরি পেয়েছে। কোনও অনিয়ম হয়নি। এ নিয়ে দলে কোনও বিতর্কও নেই।” সুদীপ্তবাবুও দাবি করেছেন, “পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে তারপর চাকরি পেয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

member of assembly tmc niloy das falakata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE