রাত্রিযাপন এ ভাবেই। মেয়রের ঘরের সামনে করিডরের মেঝেতে অবস্থানে পুরসভার বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম-সহ অন্য বাম কাউন্সিলরেরা। সোমবার রাতে বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
‘কফি হাউসের সেই আড্ডা’-র পরেই ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’! ‘বামফ্রন্ট জিন্দাবাদ’ স্লোগানের পরেই ‘আগুনের পরশমণি’!
কখনও গান, কখনও স্লোগান। এ ভাবে রাতভর অবস্থানে লোকসভা ভোটের আগে যেন নিজেদের উদ্দীপ্ত করার চেষ্টা করলেন শিলিগুড়ি পুরসভার বাম কাউন্সিলররা। আরও একটি এগিয়ে ভাবলেই আগামী জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই পুরসভার ভোটও হওয়ার কথা। সিপিএমের অন্দরের খবর, যৌথ লড়াইয়ের মনোভাব চাগিয়ে ফের সংখ্যাগরিষ্ঠ শহরবাসীকে পাশে পাওয়াই এই আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য। সোমবার দুপুর দু’টো থেকে পুরসভা ভবনের সামনে মঞ্চ বেঁধে শহরের উন্নয়নের দাবি দাওয়া নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বিরোধী বামফ্রন্ট কাউন্সিলররা। রাতের বেলায় অবস্থান মঞ্চ সরে এলো পুরসভা ভবনের ভিতরে। মেয়রের ঘরের সামনের করিডরে গদি বিছিয়ে গোল হয়ে বসলেন ১৬ জন বাম কাউন্সিলর। অসুস্থতার কারণে একজন কাউন্সিলর অবস্থানে আসতে পারেননি। মুখোমুখি বসে বেশ খানিকক্ষণ স্লোগান চলার পরে, হঠাৎই এক বাম সমর্থক গণসঙ্গীত গেয়ে উঠলেন। তার পরে কখনও রবীন্দ্রসঙ্গীত কখনও মান্না দে। মোবাইলেও গান বাজালেন কেউ কেউ। পুরসভার বিরোধী সিপিএম কাউন্সিলর তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলামের কথায়, “এই প্রথম বাম কাউন্সিলররা একসঙ্গে রাতভর অবস্থান করলাম। কেউ অবস্থান মঞ্চ ছেড়ে যাননি। সকলেই একসঙ্গে খাওয়াদাওয়াও করেছেন।”
সিপিএমের সক্রিয় সদস্যদের সঙ্গে অনেরক কাউন্সিলরের আত্মীয়স্বজনেরাও এ দিন রাতে পুরসভায় চলে এসেছিলেন। আত্মীয়দের একাংশের তাগিদ অবশ্য নিছকই ব্যক্তিগত। কেউ কেউ বাড়ি থেকে খাওয়ারও নিয়ে এসেছিলেন। রাত বাড়লেও ভিড় কিন্তু একেবারে কমেনি। তবে বাম কাউন্সিলরদের জন্য এ দিন মেনুও ছিল একই। সেগুলিও অবশ্য কাউন্সিলরারই নিয়ে এসেছেন। দুপুরের অগুনতি বার লাল চায়ের পরে রাতের মেনুতে ছিল লিট্টি। পুরসভার তিন তলায় বিরোধী দলনেতার ঘরে খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। লিট্টি, পরোটা আর সব্জি। রাত এগারোটা থেকে পাঁচ জন করে কাউন্সিলর দোতলার অবস্থাান-করিডর থেকে তিন তলায় উঠে বিরোধী দলনেতার ঘরে গিয়ে লিট্টি-সব্জি দিয়ে রাতের খাওয়া সেরেছেন। অবস্থানে গান-স্লোগানের ফাঁঁকে ফাঁকে কাউন্সিলর দিলীপ সিংহ, কমল অগ্রবাল, মুকুল সেনগুপ্ত থেকে মায়া পাসোয়ান, অঞ্জু মাহাতোরা আলাপচারিতায় বারবার উঠে এসেছে তাদের ওয়ার্ডে কেন উন্নয়নের কাজ হচ্ছে না তার ক্ষোভ।
রাত তখন বারোটা। দলের সব কাউন্সিলরদের খাওয়ার তদারকি করে পুরসভার তিন তলায় নিজের ঘরের দিকে উঠে গেলেনন মুন্সি নুরুল ইসলাম। যাওয়ার সময়ে বলে গেলেন, “আমরা বাম কাউন্সিলররার মাঝে মধ্যেই একসঙ্গে সিনেমা দেখি, বাইরে খেতে যাই। এতে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ভাল থাকে। লড়াই আন্দোলনে মনোবল আসে। তবে আজকের এই রাত জেগে অবস্থান সত্যিই বাড়তি মাত্রা দিল।” খাওয়া সেরে এসে সকালের প্রাতরাশ নিয়ে আলোচনা করলেন তিনি।
জানা গেল, এক কাউন্সিলরের বাড়ি থেকে লুচি এবং আলুর তরকারি আসার কথা রয়েছে সকলের জন্য। নিশ্চিত হয়ে মেয়রের ঘরের সামনে অবস্থানের দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। করিডরে অবস্থানরত কাউন্সিলরেরা তখন সমবেত কণ্ঠে গাইছেন, “আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে...।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy