Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
মেলেনি ভোটের বকেয়া

বাস ভাড়া দিতে নিমরাজি মালিকেরা

উত্তরবঙ্গ উত্‌সবে যোগ দেবেন সাত জেলার বহু মানুষ। তাঁদের যাতায়াতের সুবিধার কথা মাথায় রেখে দু-দফায় ৭০০ বাস ভাড়া নিচ্ছে রাজ্য সরকার। কিন্তু গত লোকসভা ভোটের সময় থেকে জেলা শাসকের আওতায় থাকা নির্বাচন দফতরের কাছ থেকে বাসভাড়া বাবদ প্রায় ৭ লক্ষ টাকা বকেয়া থাকায় বেশিরভাগ মালিকই নতুন করে বাস ভাড়া দিতে নারাজ। কিন্তু সরকারি কাজে বাস না দিলে রোষের মুখে পড়ার আশঙ্কায় সকলে নিমরাজি হয়েই বাস দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মালিক সংগঠনের অনেকে।

সংগ্রাম সিংহ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১১
Share: Save:

উত্তরবঙ্গ উত্‌সবে যোগ দেবেন সাত জেলার বহু মানুষ। তাঁদের যাতায়াতের সুবিধার কথা মাথায় রেখে দু-দফায় ৭০০ বাস ভাড়া নিচ্ছে রাজ্য সরকার। কিন্তু গত লোকসভা ভোটের সময় থেকে জেলা শাসকের আওতায় থাকা নির্বাচন দফতরের কাছ থেকে বাসভাড়া বাবদ প্রায় ৭ লক্ষ টাকা বকেয়া থাকায় বেশিরভাগ মালিকই নতুন করে বাস ভাড়া দিতে নারাজ।

কিন্তু সরকারি কাজে বাস না দিলে রোষের মুখে পড়ার আশঙ্কায় সকলে নিমরাজি হয়েই বাস দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মালিক সংগঠনের অনেকে। দার্জিলিঙের জেলাশাসক পুনীত যাদব অবশ্য বলেন, “কাউকে জোর করে গাড়ি দিতে বলা হয়নি। লোকসভা ভোটের টাকা কেন পাননি সেটা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।”

আজ, মঙ্গলবার উত্‌সব শুরুর দিন বাস নেওয়া হয়েছে ৩০০টি। আগামী ২৩ জানুয়ারি কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম চত্বরে ছবি আঁকা প্রতিযোগিতার দিনে প্রয়োজন অন্তত ৪০০টি বাস। জেলা পরিবহণ বোর্ডের একজন সদস্য এ কথা একান্তে স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, অংশগ্রহণকারীদের যাতায়াতের সুবিধার কথায় ভেবেই সরকারি ভাবে বেসরকারি বাস মালিকদের একাংশকে চিঠি পাঠিয়ে বাস ভাড়া নেওয়া হয়েছে।

বাস মালিকদের একাংশের অভিযোগ, জেলা পরিবহণ বোর্ডের ফতোয়াতেই তাঁদের বাস দিতে হচ্ছে। এক বাস মালিক অভিযোগ করেন, তৃণমূলের পক্ষ থেকেও বাস দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। জানা গিয়েছে, ১৭ এবং ১৮ জানুয়ারি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে বসে পরিবহণ দফতরের কর্তাদের নিয়ে বাসগুলো নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এ দিন থেকেই রাস্তায় নেমে পরিবহণ দফতরের কর্তাদের বাস ধরতে দেখা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যখন শহরে ঢুকেছেন, তাঁরা লক্ষ্যমাত্রা পূরণে তখন মরিয়া ছিলেন। তবে এ বিষয়ে জেলা পরিবহণ বোর্ডের সদস্য তথা তৃণমূল নেতা মদন ভট্টাচার্য কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

লোকসভা ভোটের সময়ে ব্যবহার হওয়া প্রায় একশোটি বাসের টাকা পাওয়া যায়নি। এই বাসগুলির মোট বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ছয় থেকে সাত লক্ষ টাকা। তবে তৃণমূলের বাস মালিক সংগঠনেরই এক সদস্য বলেন, “লোকসভা ভোটের টাকা পাইনি। তবু আবার বাস দিতে হচ্ছে। সরকারি নির্দেশ না মেনে উপায় নেই। না হলে অন্য সময় সমস্যায় পড়তে হবে।’’

শিলিগুড়ি ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রণব মানির ক্ষোভ, “আমাদের সংগঠনের ১৫টি বাস নেওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে প্রায় এক লক্ষ টাকা এখনও পাইনি।” আবারও বাস চাওয়া হয়েছে, তাতে রাজি না হয়ে উপায় নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। টাকা পাননি বলে জানিয়েছেন শিলিগুড়ি মিনিবাস সিন্ডিকেটের সম্পাদক মৃণাল সরকারও। তিনি বলেন, “আমাদের সংগঠনের ৪০টির বেশি গাড়ি লোকসভা ভোটে গিয়েছিল। সেগুলির টাকা পাওয়া যায়নি। একবার জানানো হয়েছিল, বিলে ত্রুটি রয়েছে। তা আবার সংশোধন করে ফের পাঠানো হয়েছে। সে টাকাও হাতে পাইনি।”

শিলিগুড়ির নিউ জলপাইগুড়ি, কোর্ট মোড়, জংশনের তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস এবং পিসি মিত্তল বাস টার্মিনাসের প্রায় ৬ শোর বেশি বাস রোজ লাগোয়া বিভিন্ন এলাকা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ও নেপাল সীমান্তের কয়েকটি এলাকায় চলে। তাতেও যাত্রী চাহিদা মেটে না। এর মধ্যে যদি এক চতুর্থাংশ বাসও বন্ধ হয়ে যায় তবে নিত্যযাত্রীদের হয়রানির আশঙ্কাও করছেন অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE