Advertisement
E-Paper

বিয়ের সাজে গাঁজা পাচার, গ্রেফতার তিন

তরুণীর বয়স ২৫ বছর। ছোট গাড়ির পিছনে বসে, সাজ পোশাকে একেবারে নববধূ। পাশে ৩০ বছরের আশেপাশের বয়সী স্বামীও আছেন। সামনের আসনে ভাড়া গাড়ির চালক জোরে ছুটিয়ে চলছেন গাড়ি। কোচবিহার থেকে আসার পথে রাস্তার কয়েকবার গাড়ি নিয়ে দাঁড়ানও তারা। কিন্তু শিলিগুড়ি ঢোকার মুখে এনজেপি ফাঁড়ির ফুলবাড়ি বাজারে গাড়িটি দাঁড় করালেন পুলিশ অফিসারেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৫ ০২:৩২

তরুণীর বয়স ২৫ বছর। ছোট গাড়ির পিছনে বসে, সাজ পোশাকে একেবারে নববধূ। পাশে ৩০ বছরের আশেপাশের বয়সী স্বামীও আছেন। সামনের আসনে ভাড়া গাড়ির চালক জোরে ছুটিয়ে চলছেন গাড়ি। কোচবিহার থেকে আসার পথে রাস্তার কয়েকবার গাড়ি নিয়ে দাঁড়ানও তারা। কিন্তু শিলিগুড়ি ঢোকার মুখে এনজেপি ফাঁড়ির ফুলবাড়ি বাজারে গাড়িটি দাঁড় করালেন পুলিশ অফিসারেরা। গাড়ির জানলার কাঁচের কাছে যেতেই স্বামী ভদ্রলোক আগ বাড়িয়ে বললেন, “আমরা স্বামী-স্ত্রী। কোচবিহারের দিকে থাকি। শ্বশুরবাড়ি লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে বিহারে গাড়ি ভাড়া করে যাচ্ছি। বিকাল বিকাল সেখানে পৌঁছতে চাই। তাই তাড়াতাড়ি যাচ্ছিলাম।”

কিন্তু পুলিশ অফিসারদের কাছে খবর ছিল অন্যরকম। তাই গাড়ি থামিয়ে নামতে বলা হয় সকলকে। শুরু হয় গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি। সিটের নিচের পাদানি, পিছনের ডিকিতে লুকিয়ে রাখা আটটি প্যাকেট দেখে চমকে ওঠেন পুলিশ অফিসারেরা। শক্তপোক্তভাবে প্লাস্টিকে মোড়ে ব্যাগগুলি খোলার পর দেখা যায়, তাতে থরেথরে সাজানো রয়েছে গাঁজা। প্রায় ৮০ কেজি। ইতিমধ্যে গাড়ি ওই ‘দম্পতি’-সহ তিনজকে গ্রেফতার করা গাড়িতে তোলা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে ভক্তিনগর থানার এনজেপি ফাঁড়ির ফুলবাড়ি বাজার এলাকার ঘটনা।

শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা থেকে শুরু করে এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত এসিপি পিনাকী মজুমদারকে সব জানানো হয়। থানায় এনে শুরু হয় ধৃতদের টানা জেরা। পুলিশ সূত্রের খবর, জেরার মুখে ধৃতকে প্রথমেই জানায় তিনজনই আলাদা আলাদা এলাকার বাসিন্দা। কেউ স্বামী-স্ত্রী নন। ওই গাঁজা তাঁরা বিহারের ভাগলপুরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার বলেন, “ধৃতদের সঙ্গে থাকা ছোট গাড়িটিও আটক করা হয়েছে। তিনজনই গাঁজা পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। কোচবিহার থেকে গাঁজা ওই কায়দায় বিহারের পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল। ওই চক্রের সঙ্গে আর কারা জড়িত রয়েছে তা দেখা হচ্ছে।”

পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম বিশ্বনাথ দাস, সুনীল কুমার এবং পিঙ্কি দেবী। এরমধ্যে সুনীলের বাড়ি বিহারের কাটিহারে, পিঙ্কির পূর্ণিয়াতে এবং বিশ্বনাথের শিলিগুড়ির সুভাষপল্লিতে। বিশ্বনাথই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। তবে গাড়িটি কার তা কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ধৃতেরা একই কায়দায় এর আগেও কোচবিহার থেকে গাঁজা বিহারের নিয়ে গিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তের পর জানা গিয়েছে। এদিন উদ্ধার করা গাঁজার মূল্য প্রায় ৮ লক্ষ টাকা বলে তদন্তকারী অফিসারদের দাবি। আজ, শুক্রবার ধৃতদের জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হবে। সেখানে গোটা চক্রটিকে ধরতে ধৃতদের পুলিশ হেফাজত চাওয়া হবে। এ ছাড়া ধৃতদের আর কোনও পুরানো মামলা রয়েছে কি না তাও দেখা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকা উত্তরবঙ্গের মধ্যে গাঁজা চাষের জন্য পরিচিত। কোথাও লুকিয়ে আবার কোথাও খোলাখুলিভাবেই গাঁজার চাষ হয়। কোচবিহার সদর মহকুমার মাকপালা, চিলকিরহাট, চান্দামারি, দিনহাটা মহকুমার সিতাই, দিনহাটা, চৌধুরীহাট, নয়ারহাট, গীতালদহ, তুফানগঞ্জের বালাভূত ছাড়াও মাথাভাঙা ও মেখলিগঞ্জ এলাকাতে গাঁজা চায় হয়।

কোচবিহার জেলার কয়েকজন পুলিশ অফিসার জানান, অনেক জায়গায় বাড়ির মধ্যে দরমার বেড়া দেওয়া জমিতে ওই চাষ হয়। আবার কোথাওবা মাঠের পর মাঠ। পুলিশ, নারকোটিক্স কল্ট্রোল ব্যুরো এবং আবগারি দফতর অভিযান চালালেও তা এখনও পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। প্রায় ৪-৫ হাজার টাকা কেজি দরে গাঁজা বিক্রি হয়। শিলিগুড়ি হয়েই ওই গাঁজা বিহার এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। মাস খানেক আগেই এনজেপি ফাঁড়ির ঘোড়ামোড় এলাকা থেকে একইভাবে ২৫ কেজি গাঁজা-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

এরই মধ্যে এদিন এনজেপি ফাঁড়ির পুলিশ ফুলবাড়ি ক্যানেল থেকে তিনটি ট্রাক সমেত ৮০টি গরু উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে পাঁচজনকে। পুলিশ জানিয়েছে, গরুগুলি দুটি ১০ চাকার এবং একটি কন্টেনার ক্যারিং ট্রাকে করে বিহার থেকে অসমে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ধৃতদের বিহার এবং অসমের বাসিন্দা। সম্ভবত উত্তর পূর্বাঞ্চলে গরুগুলি বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছিল।

siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy