শুক্রবার জয়ের পরে অর্পিতা ঘোষ ও বিপ্লব মিত্র। ছবি: অমিত মোহান্ত।
তিন রাউন্ড গণনার পরেই সবুজ আবিরে ঢেকে যায় হলুদ-বেগুনি রঙের চুড়িদার। বারবার হাত দিয়ে ঝাড়লেও, একের পর এক কর্মী সমর্থকরা সবুজ আবির ঢেলে দিয়েছেন মাথায়। বরাবরই হাসিমুখে মাথা পেতে আবির নিয়েছেন বালুরঘাটের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ। শুক্রবার ফল প্রকাশের দিন সকাল থেকে তিনিই ছিলেন কর্মী সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু। এক লক্ষেরও বেশি ভোটে নাট্যকর্মী অর্পিতা পরাজিত করেছেন আরএসপির প্রার্থী বিমল সরকারকে। তখন দেখে বোঝা দায়, তাঁর প্রার্থীপদ ঘোষণার পরে ‘বহিরাগত’ অভিযোগে দলের অন্দরেই একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছিল।
বিপুল ভোটের জয়ের পরেও, নাট্যকর্মীর কথাতেও ছিল ‘বহিরাগত’ প্রসঙ্গ। নাটকের শহর বলে পরিচিত বালুরঘাটে, অর্পিতা ‘ঘরের মেয়ে’ বলে প্রচারও করে গিয়েছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব তথা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, সুবোধ সরকার, মনোজ মিত্র, ব্রাত্য বসু, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়েরা। ফল ঘোষণার পরে অর্পিতা বলেন, “বিরোধীরা যাই বলুন পশ্চিমবঙ্গে বহিরাগত তত্ত্ব খাটে না। এখানে অন্য সমীকরণ। তাই অর্পিতা ঘোষ বহিরাগত, এই তত্ত্বও খাটেনি।” শনিবার অর্পিতা জানান, আপাতত তিনি ক’দিনের জন্য কলকাতা যাবেন। ফিরে উন্নয়ন নিয়ে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বসবেন। তাঁর কোথায়, “অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জেলা উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে বিপ্লবদা-সহ নেতৃত্বের সঙ্গে বসে যাবতীয় রূপরেখা তৈরি করা হবে।”
শুক্রবার সকাল থেকেই বালুরঘাট কলেজের গণনা কেন্দ্রেই ছিলেন অর্পিতা। কংগ্রেসের ওমপ্রকাশ মিশ্র এবং আরএসপি প্রার্থী বিমল সরকারও দিনভর গণনাকেন্দ্রে ছিলেন। কলেজের ১৪টি হলে ঢুকে গণনার খোঁজ নেন অর্পিতা। প্রতি রাউন্ডেই নিজের এগিয়ে থাকার কথা শুনে, কলেজের বাইরে এসে কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়তেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ রাউন্ডের পরে লাফিয়ে বাড়তে থাকে ব্যবধান। ২৪ রাউন্ডের শেষে ব্যবধান যখন ৫৪ হাজার ছাড়িয়েছে, তখন গণনা কেন্দ্র ছেড়ে চলে যান আরএসপি প্রার্থী বিমল সরকার। কংগ্রেস প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্রের চোখেমুখেও হতাশা। শান্তভাবেই তিনি বললেন, “ফল ভাল হলো না। ১৪ শতাংশ ভোটও রাখতে পারলাম না।”
প্রায় ৩৮ বছর পরে, বালুরঘাট লোকসভায় বাম বিরোধীদের জয় হল। গত লোকসভা ভোটে সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল কংগ্রেস ও তৃণমূল জোটের প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র। দলের কর্মী সমর্থকদের কাছে তিনি অপির্তার জয়ের অন্যতম কারিগর। এ দিন দিনভর অবশ্য তিনি জেলা পরিষদে সহকারী সভাধিপতির চেম্বারে বসে ছিলেন। সেখানে বসেই প্রতি মুহূর্তে মোবাইলে ফোন করে দলের প্রার্থীর এগিয়ে থাকার খবর নিয়েছেন। ব্যবধান যত বেড়েছে, ততই যেন নিশ্চিন্ত হয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী ছিলেন গণনাকেন্দ্রের পাশেই নাট্যতীর্থ কেন্দ্রের বারান্দায়। ফলাফলের দিনও দলের দুই শীর্ষ নেতার একসঙ্গে না থাকায় কর্মী মহলে জল্পনা তৈরি হয়। যদিও, বিপ্লববাবু সে জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “ওসব কিছই নয়, গণনা কেন্দ্রে বসার জায়গা নেই বলে জেলা পরিষদে রয়েছি। জনতার বিপুল সমর্থন দলের সঙ্গে রয়েছে।” বিপ্লববাবুর হরিরামপুর বিধানসভা থেকে ১৬ হাজারেরও বেশি ভোটে ‘লিড’ পেয়েছেন অর্পিতা। তাঁর কথায়, “বিপ্লব মিত্রের নেতৃত্বে কর্মীদের চেষ্টায় এতবড় জয় সম্ভব হয়েছে।”
এ দিন বিকেলে কলেজ পাড়া চত্বরে ৩ নম্বর লোকাল পার্টি অফিসে এসে বসেন আরএসপির জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরী। তাঁকে দেখে আবির মাখা তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়ায়। মিছিল থেকে কটূক্তি উড়ে আসে। উত্তেজনার খবর পেয়ে পুলিশ বাহিনীও ঘটনাস্থলে চলে আসে। এলাকার দোকান বাজারও বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিশ্বনাথবাবু বলেন, “জনগণের রায় মেনে নিয়েও বলছি। তৃণমূল নিজেদের মত করে ভোট করেছে। জনগণ সবই দেখেছে।” আরএসপি প্রার্থী বিমলবাবু অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy