Advertisement
E-Paper

মিশনারি স্কুলের পাশে দাঁড়ালেন সেই বাসিন্দারাই

রানাঘাট কাণ্ডের পর অভিযুক্তদের বিচার চেয়ে এককাট্টা হয়েছিলেন এলাকার মানুষ। সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকল নাগরাকাটাতেও। পরপর হুমকি চিঠি পেয়ে উদ্বিগ্ন সেন্ট ক্যাপিটানিও স্কুল কর্তৃপক্ষের পাশে দাঁড়ালেন ভুটানের গা লাগোয়া ডুয়ার্সের চাম্পাগুড়ির বাসিন্দারা। স্কুল ঘিরে তাঁরা নজরদারি রাখছেন। স্কুলের যে কোনও সমস্যায় পাশে দাঁড়ানোর তৎপরতাও শুরু হয়েছে। সে খবর পৌঁছেছে নবান্নেও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার জানিয়েছেন, এটাই করা উচিত।

সব্যসাচী ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৫ ০২:৩৫
হুমকি চিঠির জেরে পুলিশি প্রহরা নাগরাকাটা স্কুলে।  —নিজস্ব চিত্র।

হুমকি চিঠির জেরে পুলিশি প্রহরা নাগরাকাটা স্কুলে। —নিজস্ব চিত্র।

রানাঘাট কাণ্ডের পর অভিযুক্তদের বিচার চেয়ে এককাট্টা হয়েছিলেন এলাকার মানুষ। সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকল নাগরাকাটাতেও।

পরপর হুমকি চিঠি পেয়ে উদ্বিগ্ন সেন্ট ক্যাপিটানিও স্কুল কর্তৃপক্ষের পাশে দাঁড়ালেন ভুটানের গা লাগোয়া ডুয়ার্সের চাম্পাগুড়ির বাসিন্দারা। স্কুল ঘিরে তাঁরা নজরদারি রাখছেন। স্কুলের যে কোনও সমস্যায় পাশে দাঁড়ানোর তৎপরতাও শুরু হয়েছে। সে খবর পৌঁছেছে নবান্নেও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার জানিয়েছেন, এটাই করা উচিত। এই ভাবে স্থানীয় ব্যক্তিরা পাশে দাঁড়ালে এই ধরনের যে কোনও সঙ্কট এড়ানো যায়।

ডুয়ার্সের নাগরাকাটা ব্লকের ওই খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলের হস্টেলের সিঁড়ি ও বারান্দা থেকে মোট ৫টি হুমকি চিঠি পাওয়া গিয়েছে। নিজেকে ‘রানাঘাটের ধর্ষণকারী’ পরিচয় দিয়ে এই স্কুলের সিস্টারদেরও একই পরিণতি হতে পারে বলে ভয় দেখানো হয়েছে একটি চিঠিতে। স্কুল পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বারবার। এর পরেই নড়েচড়ে বসেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রথম চিঠিটি পাওয়া যায় রানাঘাট কাণ্ডের পরের দিনই। গত শনিবার শেষ চিঠিটি মিলেছে। প্রাথমিক ভাবে স্কুলের কিছু ছাত্রীই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আশঙ্কা করেছিলেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরপর হুমকি চিঠি আসতে থাকায় তাঁরা প্রশাসনকে তা জানান। মুখ্যমন্ত্রীও দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

সে কথা জানাজানি হওয়ার পরেই নিজেদের গর্বের স্কুলের এরকম বিপদের সময়ে নিজেরাই এগিয়ে আসবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন চা বাগান ঘেরা এই এলাকার বাসিন্দারা। এ দিন স্থানীয় বাসিন্দা পবন খেড়োয়ার বলেন, “ওই স্কুল আমাদের গর্ব। তাই এখন নিজেরাই স্কুলের বাইরের চত্বরে নজরদারি করছি।” স্কুলের কাছেই দোকান জগদীশ ওঁরাও-এর। তাঁর কথায়, “ওই স্কুলের জন্যই চাম্পাগুড়ির নাম সকলে চেনেন। নিরীহ সিস্টারদের যারা ভয় দেখাতে চাইছে, তাদের আমরাও খুঁজছি।” নাগরাকাটার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সঞ্জয় কুজুর জানান, স্কুলটিতে আজ অবধি কোনও ঝঞ্ঝাট হয়নি। ওই সব চিঠি কিন্তু দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, “বাসিন্দাদের নিয়ে একজোট হয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্ভয়ে পঠনপাঠন চালিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছি।” স্কুলের পাশে থাকার জন্য কমিটি গড়ার প্রস্তুতিও নিয়েছেন বলে জানান তাঁরা।

এ দিন স্কুলে যান জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথ। তিনি জানান, পুরো ঘটনাটিই পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। স্কুল চত্বরে সর্ব ক্ষণের জন্যে পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু যে ৫টি চিঠি মিলেছে সব ক’টিতেই হস্টেল সুপারের বিরুদ্ধে আক্রোশ দেখা গিয়েছে। হস্টেলে থাকে প্রায় ২০০ ছাত্রী। বিনা খরচে খরচে হিন্দি মাধ্যমের ওই স্কুলে তারা পড়াশোনা করে। রোজ সকালে উঠে শরীরচর্চা করা, সময় মতো পড়াশোনা করে স্কুলে যাওয়াটা বাধ্যতামূলক। টেলিভিশন দেখা প্রায় বন্ধ। সে সব কারণে ছাত্রীদের কেউ ওই কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করছে পড়ুয়াদের কয়েকজনই। তাদের কয়েকজন জানায়, যদি স্কুলের কেউ দুষ্টুমি করে চিঠি লিখে থাকে তা হলে তারও সিস্টারদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশেরও ধারণা, পড়ুয়াদের কেউই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।

স্কুলের পাশেই রয়েছে ছেলেদের পৃথক মিশনারি স্কুল সেন্ট মেরিজ। তাতেও আগুন লাগানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওই স্কুলের ফাদার মোতিয়ুস কেরকেটা বলেন, “দুশ্চিন্তা তো হচ্ছেই। তবে বাসিন্দারা পাশে রয়েছেন জেনে নিশ্চিন্ত লাগছে।”

convent school saint capitani sabyasachi ghosh nagrakata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy