Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মেয়রের নির্দেশেও এফআইআর হয়নি

মেয়রের নির্দেশের পর ২ দিন কেটে গেলেও অনুমতি না নিয়ে বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে শহরে ফোর জি পরিষেবার কেবল পাতার অভিযোগে পুলিশে এফআইআর হল না। পুলিশে অভিযোগ জানাতে পুর কর্তৃপক্ষের অনীহা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সোমবার বিরোধী বাম কাউন্সিলররা ফের তাই শিলিগুড়ির মেয়রের সঙ্গে দেখা করতে চান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০২:৪৭
Share: Save:

মেয়রের নির্দেশের পর ২ দিন কেটে গেলেও অনুমতি না নিয়ে বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে শহরে ফোর জি পরিষেবার কেবল পাতার অভিযোগে পুলিশে এফআইআর হল না। পুলিশে অভিযোগ জানাতে পুর কর্তৃপক্ষের অনীহা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সোমবার বিরোধী বাম কাউন্সিলররা ফের তাই শিলিগুড়ির মেয়রের সঙ্গে দেখা করতে চান। বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত ছাড়াই ওই কাজ করাতে পুর কর্তৃপক্ষের একাংশ সক্রিয় বলে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন তারা। তৃণমূলের কাউন্সিলরদেরও অভিযোগ, ওই কাজে আর্থিক দুনীতি হয়েছে। শনিবার বামেরা মেয়রের সঙ্গে দেখা করে পুলিশে এফআইআর করার দাবি জানান। এর পরেই এ দিন মেয়র লিখিত ভাবে পুর কমিশনারকে এ ব্যাপারে নিদের্শ দিয়েছিলেন।

পুরসভার বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “কেন এখনও পুলিশে অভিযোগ করা হচ্ছে না তা স্পষ্ট নয়। পুর কর্তৃপক্ষের এই মনোভাব থেকেই সন্দেহ দানা বাঁধছে। ওই কাজে নিশ্চিয়ই কোনও দুর্নীতি হয়েছে। সোমবার আমরা মেয়রের কাছে ফের যাব। কী ভাবে দর ঠিক হয়েছে তার নথি দেখতে চাইব।” কেবল পাতার জন্য দুই দফায় দুই রকম দর ঠিক করা নিয়েই সন্দেহ দানা বেঁধেছে। প্রথমে কী জন্য বেশি টাকা চাওয়া হয়েছিল, পরে কেন তা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ যুক্তি সঙ্গত উত্তর দিতে পারছেন না বলে বাম এবং তৃণমূলের কাউন্সিলরদের অভিযোগ।

সবিস্তারে ক্লিক করুন....

মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “পুর কমিশনারকে পুলিশে অভিযোগ জানাতে লিখিত নির্দেশ দিয়েছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুরসভারই একটি সূত্র জানিয়েছে, মেয়রের চিঠি পেয়ে পুর কমিশনার পুরসভার এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়রের কাছে কোথায় কোথায় ওই সংস্থা কাজ করেছে, কী ক্ষতি হয়েছে সে ব্যাপারে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। বর্তমানে এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র ছুটিতে। তাঁর জায়গায় দায়িত্বে রয়েছেন সহকারি এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র। শনিবার ওই চিঠি তৈরি করতে বিকেল হয়ে যায় বলে তিনি হাতে পাননি। সোমবার তিনি চিঠি পেলে প্রক্রিয়া শুরু করবেন। গত ২৯ এপ্রিল বোর্ড মিটিংয়েই পুলিশে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত হলেও তার পর থেকে নানা অজুহাতে বিলম্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

গত বোর্ড মিটিংয়ে শহরে ওই ফোর জি পরিষেবার কেবল পাতার কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাম এবং তৃণমূল কাউন্সিলররা। সে সময় মেয়র জানিয়েছিলেন তিনি ওই ব্যাপারে কিছু জানেন না। তা নিয়ে হইচই হলে ফাইল চেয়ে পাঠানো হয়। ফাইল থেকে চিঠি বার করা হলে দেখা যায় মেয়র ওই কাজের অনুমোদন দিয়েছেন। সেই মতো টাকাও জমা করতে বলা হলেও ভোটের পর কাজ করার চূড়ান্ত অনুমতি দেওয়া কথা। পরে মেয়র দাবি করেন, তাঁকে অন্ধকারে রেখে কাজ হয়েছে।

মেয়র পারিষদ এর পর চিঠি পাঠিয়ে কখন কী সিদ্ধান্ত হয় তা বিস্তারিত জানিয়ে দাবি করেন মেয়রের জ্ঞাত সারেই সব কাজ হয়েছে। চিঠিতে তিনি জানিয়ে প্রথম দফায় প্রতি বর্গ মিটারের জন্য ১৫৯৮ টাকা করে কেবল পাতার দর ঠিক হয়। সংস্থার তরফে সরকারি দর প্রতি বর্গমিটার কেবল পাততে ১১৫০ টাকা বলে দাবি করা হয়। পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন তাঁদের নির্ধারিত দর দিতে। সেই মতো বেশি টাকা নেওয়া হলে পরে ফেরত্‌ দেওয়া হবে বা পরবর্তীতে সংস্থা আরও কাজ করলে ওই টাকা ছাড় মিলবে। সেই মতো ৮ কিলোমিটার কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ওই সংস্থা আরও কিছু জায়গায় কেবল পাতার কাজের অনুমতি চায়। দর ঠিক হয় ১১৫০ টাকা। ঠিক ছিল নির্বাচনের পর কাজ শুরুর অনুমোদন দেওয়া হবে। মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটক জানান, সেই হিসাবে সংস্থা কাজ শুরু করতে পারে না। তাই বোর্ড মিটিংয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা তিনি সমর্থন করেন। ওই ঘটনায় সুজয়বাবুর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসেরই একাংশ। তারা মেয়রকে দায়ী করতে রাজি নন। সুজয়বাবু জানান, কাউন্সিলরদের চিঠি দিয়ে বিস্তারিত জানাব।

তৃণমূলের অভিযোগ, এই কাজে আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। আগে বেশি দর দেওয়া হয়েছে। পরে তা কম নেওয়ার পিছনে উদ্দেশ্য রয়েছে। ওই সংস্থার সঙ্গে পুর কর্তৃপক্ষের নিশ্চিয়ই কিছু বোঝাপড়া রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল। তিনি বলেন, “মেয়র সবই জানান। অথচ তিনি কী কারণে পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে তা অস্বীকার করেছিলেন সেটাই স্পষ্ট নয়। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।” পুরসভার বিরোধী দলনেতা নুরুলবাবু জানান, ৩৯, ৪১, ৪২, ৪৭ নম্বরের মতো এলাকায় ওই সংস্থা কেবল পাতার কাজ করছে। কাউন্সিলররা পুর কর্তৃপক্ষকে জানালে মেয়র দুই এক বার ব্যবস্থা নেন। পরে এ ব্যাপারে তাঁদের সাড়া মিলছে না। পুর কমিশনার বা মেয়র পারিষদকে ফোন করেও পাওয়া যাচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

4-G cable FIR mayor siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE