শিলিগুড়ির গুরুঙ্গবস্তিতে রাস্তার একদিক আটকে বাজার। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
ব্যস্ত রাস্তার দুধারে শাক-সব্জি, মাছ বাজার বসে যাওয়ার ঘটনা শিলিগুড়িতে নতুন কিছু নয়। শহরের পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ, এমন অন্তত ৩০টি বাজার বসে গিয়েছে। কোথাও রাস্তা দিয়ে চলাচল করা দায় হয়ে পড়ে। আবার কোথাও বসতবাড়ির গেট জুড়ে বাজার বসেছে। পুরসভা, প্রশাসন সব জেনেও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, আশ্বাস দিলেও বাস্তবে বাজারের ছোট ব্যবসায়ীদের সুষ্ঠু পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হন নেতা-কর্তারাও।
শিলিগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি যাওয়ার পথে ৩১-ডি জাতীয় সড়কের জলপাই মোড়ের বাজার বসছে দু-দশক ধরে। সকালের থেকে সন্ধ্যায় ওই বাজার বেশি জমজমাট। জলপাইগুড়ি জেলা এবং শিলিগুড়ি মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাজা শাক-সব্জি নিয়ে ব্যবসায়ীরা বাজারে এসে বসেন। গেটবাজার ও পিডব্লিউডি মোড় বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা সন্ধ্যায় এই বাজারে যান। তবে বাজারের নিকাশি, শেড, রাস্তা বলে কিছুই নেই। এমনকী, জাতীয় সড়কের ধারে থাকায় সব সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও লেগে থাকে। এলাকার তৃণমূল নেতা কৌশিক দত্ত বলেন, “একাধিকবার বাজারটি নৌকাঘাট লাগোয়া এলাকায় সরানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জমিও আছে। কিন্তু এখনও হয়নি।”
কাছেই বর্ধমান রোড এলাকার সবচেয়ে বড় বাজার ঝঙ্কার মোড় বাজার। একটা সময়ে ওই এলাকায় ছিল ঝঙ্কার সিনেমা হল। সেই সুবাদেই এলাকার নাম ঝঙ্কার মোড়। সেখানে রেলের উড়ালপুলের নিচের রাস্তায় থাকা বাজারটি প্রায় ৩ দশকের পুরনো। সকাল থেকে রাত অবধি বাজারের মধ্যে রাস্তাটি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছুদিন আগে ব্যবসায়ীদের রাস্তার একপাশে সরানো হয়। উড়ালপুলের ঢালে প্রায় ২ লক্ষ টাকা খরচ করে পাকা কংক্রিটের মাছ বাজার তৈরি হয়েছে। তবে নিকাশি, জল, শেড কিছুই নেই। এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর কংগ্রেসের স্বপন চন্দ বলেন, “এলাকার জল প্রকল্প, কয়লাডিপো, আন্ডারপাসের মত জায়গায় বাজারটির সরানোর চেষ্টা হয়েছিল। সফল হয়নি। আন্ডারপাসের কাজ চলছে। এর পরে গাড়ি চলাচল আরও বাড়বে। তখন কী হবে কে যানে! কারণ, এখানে যানজট বাজারের অন্যতম সমস্যা।”
আর পাঁচটা জায়গায় রাস্তার ধারে বাজার বসে। কিন্তু, গুরুঙ্গ বস্তির বাজারের ব্যাপারই আলাদা। সেখানে একটা রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ করে বাজার বসছে দিনের পর দিন। সম্প্রতি গুরুঙ্গ বস্তি বাজার থেকে মিলন মোড় পর্যন্ত রাস্তার মজবুত করতে ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। ওই বাজারের অংশ তৈরিও হয়ে গিয়েছে। প্রশস্ত রাস্তার মাঝে রয়েছে ‘ডিভাইডার’।
অথচ রাস্তার একদিকে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। কারণ, ওই ঝাঁ চকচকে রাস্তা জুড়ে শাক-সবজির বাজার বসেছে। অন্তত ১২০ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। ডিভাইডারের উপরেই বসেছে মাছ-মাংসের দোকান। একটা গোটা রাস্তা বন্ধ করে এমন বাজার বসলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে গুরুঙ্গবস্তিতে। রোজই অফিস, স্কুলের সময়ে ডিভাইডারের একদিক দিয়েই যান চলাচল করতে গিয়ে যানজট হচ্ছে। তার উপরে রাস্তার উপরেই যথেচ্ছ রিকশা দাঁড় করিয়ে রাখার ঘটনাও রয়েছে।
এই রাস্তা আটকে বাজারের কথা জানেন সকলেই। ওই এলাকায় রয়েছে একাধিক স্কুল। ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পক্ষ থেকে বাম আমলে বহুবার পুরসবা, প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। সেই সময়ে রাস্তা থেকে বাজার সরিয়ে অন্যত্র নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়। তবে ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের একাংশের প্রতিরোধে পিছু হটে পুরসভা, প্রশাসন।
সিপিএমের শিলিগুড়ি জোনাল কমিটির সম্পাদক তথা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (সাফাই) মুকুল সেনগুপ্ত ওই এলাকাতেই থাকেন। তিনি বলেন, “শাক-সব্জি বিক্রেতাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেটা মাথায় রেখে আমরা পুরসভার তরফে নতুন জায়গায় বাজার সরানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু, সে সময়ে পুরকর্মীরা অভিযানে গেলে নানাভাবে প্রতিরোধ করা হয়। তাই আমরা রাস্তাটা দখল মুক্ত করাতে পারিনি। কিন্তু, গত ৫ বছরে শিলিগুড়ি পুরসভার কংগ্রেস-তৃণমূলের বোর্ড করলটা কী? গুরুঙ্গবস্তি বাজারের হাল ফেরাতে পারল না কেন? ব্যবসায়ীদের সুষ্ঠুভাবে ব্যবসার ব্যবস্থা করে দিতে পারল না কেন?”
সুভাষপল্লি থেকে গুরুঙ্গবস্তি, ফুলেশ্বরী থেকে হায়দরপাড়া, সর্বত্রই যে শাক-সব্জি, মাছ বাজারের নানা সমস্যা রয়েছে সে কথা মানছেন খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। তিনি বলছেন, “আমরা রাস্তাঘাটের হাল ফেরানোর কাজ অনেকটা করে ফেলেছি। এ বার আমরা বাজারের হতশ্রী চেহারা ঠিক করার পরিকল্পনা নিয়েছি। শহরের সবকটি বাজারের হাল ফেরাতে কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। কোনও রাস্তা আটকে বাজার যাতে না বসে সেটা নিশ্চিত করা হবে। শাক-সব্জি ব্যবসায়ীদের যাতে রুটি-রুজিতে টান না পড়ে সে দিকেও খেয়াল রাখা হবে।”
ঘটনা হল, বামেরাও অতীতে এমন আশ্বাস দিয়েছে। তৃণমূল ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে প্রায় একই সুরে আশ্বাস দিয়ে চলেছে বলে অভিযোগ করেছেন শিলিগুড়ির নানা বাজারের ব্যবসায়ীদের অনেকেই। বাজারের হাল ফেরানো দূরের কথা, কয়েক কোটি টাকা খরচে তৈরির পরে একটা বিশাল বাজার পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকলেও নেতা-কর্তাদের হুঁশ ফেরে না বলে অভিযোগ। অবহেলায় সরকারি খরচে তৈরি কোল্ড স্টোরেজ অবধি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। রাত নামলে সেই পরিত্যক্ত বাজারে যা হয় তাতে এলাকাবাসীরা অনেকেই আতঙ্কে থাকেন।
(চলবে)
কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-শহরের নাম’। অথবা চিঠি পাঠান, ‘আমার শহর-শহরের নাম’, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৩৬/৮৯ চার্চ রোড, শিলিগুড়ি ৭৩৪০০১। প্রতিক্রিয়া জানান এই ফেসবুক পেজেও: www.facebook.com/
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy