Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

শিশু শ্রমিক উদ্ধারে গিয়ে হেনস্থা আধিকারিকদের

শিশুদের দিয়ে বিড়ি শ্রমিকের কাজ করানো হচ্ছে, এই অভিযোগ পেয়ে কারখানায় হানা দিয়ে হেনস্থার শিকার হলেন মালদহ জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিক ও সহকারি শ্রম কমিশনার। শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করতে গেলে তাঁদের কারখানায় আটকে রাখেন কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০২:১৭
Share: Save:

শিশুদের দিয়ে বিড়ি শ্রমিকের কাজ করানো হচ্ছে, এই অভিযোগ পেয়ে কারখানায় হানা দিয়ে হেনস্থার শিকার হলেন মালদহ জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিক ও সহকারি শ্রম কমিশনার। শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করতে গেলে তাঁদের কারখানায় আটকে রাখেন কর্তৃপক্ষ। পরে পুলিশ গিয়ে দু’জনকে উদ্ধার করে। দুই আধিকারিকের অভিযোগ, পুলিশ সাহায্য না করায় ওই বিড়ি কারখানা থেকে একজন শিশু শ্রমিককেও উদ্ধার করতে পারেননি তাঁরা। বিড়ি কারখানায় আটকে রেখে হেনস্থা করার অভিযোগে জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক অরুণায়ণ শর্মা ওই বিড়ি কারখানার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কালিয়াচক থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কারখানায় আটক দুই আধিকারিককে পুলিশ উদ্ধার করেছে। তবে বিড়ি কারখানা থেকে শিশু শ্রমিকদের উদ্ধার করার ব্যাপারে পুলিশি অসহযোগিতার যে অভিযোগ উঠছে তা খতিয়ে দেখা হবে। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয় তবে অভিযুক্ত পুলিস কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কালিয়াচকে ওই বিড়ি কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে ন’বছর থেকে ১৫ বছরের প্রায় ৫০ জন শিশুকে দিয়ে বিড়ি বাঁধার কাজ চলছে। এই খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক ও জেলা সহকারি শ্রম কমিশনার ওই কারখানায় হানা দেন। অরুনায়ণ শর্মা বলেন, “ওই বিড়ি কারখানার ভিতরে ঢুকে দেখি ৫০ জনের বেশি শিশু শ্রমিক বিড়ি বাঁধছে। যাদের বয়স ৯-১৫ বছর। ভোর পাঁচটা থেকে রাত বারোটা পযর্ন্ত দুই শিফটে ওই শিশু শ্রমিকদের দিয়ে বিড়ি বাঁধানোর কাজ করানো হচ্ছে। প্রত্যেকটি শিশুর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। ওই শিশু শ্রমিকদের কারখানা থেকে বের করতে গেলে কর্তৃপক্ষ আমাদের দু’জনকে ম্যানেজারের ঘরে আটকে রেখে তালা বন্ধ করে দেয়। আমাদের নিগ্রহ করে। পরে পুলিশ আমাদের ওই কারখানা থেকে উদ্ধার করে।”

অরুনায়ণবাবুর অভিযোগ, ৫০ জনের বেশি শিশু শ্রমিককে উদ্ধারের জন্য সকাল থেকে পুলিশি সাহায্য চেয়েও পাননি তাঁরা। পুলিশের সাহায্য না মেলায় ওই বিড়ি কারখানা থেকে একজন বিড়ি শ্রমিককেও উদ্ধার করা যায়নি। এরপরেই বিষয়টি জেলাশাসক ও জেলার পুলিশ সুপারকে জানিয়েছেন তাঁরা।

জেলার সহকারি শ্রম কমিশনার দেবু কর বলেন, “বিড়ি কারখানায় শিশু শ্রমিকদের বেআইনিভাবে কাজ করানো হচ্ছে। কিন্তু সব দেখেও আমরা সেই শিশু শ্রমিকদের উদ্ধার করতে পারলাম না। কারণ ওই শিশু শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য পুলিশের সাহায্য মেলেনি।” যে বিড়ি কারখানার বিরুদ্ধে শিশু শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ উঠেছে, সেই কারখানার মালিক মহম্মদ জালালউদ্দিন বিশ্বাস অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমার বিড়ি কারখানায় একজনও শিশু শ্রমিক কাজ করে না। আর কাউকে আমার বিড়ি কারখানায় হেনস্থা করা হয়নি।”

জেলার চাইন্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান হাসান আলি শাহ জানান, বিড়ি কারখানায় সরকারি আধিকারিকদের হেনস্থার খবর পেয়ে তিনিই কালিয়াচক থেকে পুলিশ পাঠিয়ে ওই দু’জনকে উদ্ধার করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত পুলিশ না মেলায় ওই বিড়ি কারখানা থেকে শিশু শ্রমিকদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

child labour harrassment officers malda bidi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE