পুরভোটের দিকে চেয়ে এলাকার অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের দলে ওয়ার্ড কমিটিতে নিয়ে আসতে উদ্যোগী হল বিজেপি। শুক্রবার শিলিগুড়ির বধর্মান রোড লাগোয়া একটি ভবনে কর্মিসভায় এই নির্দেশ দিয়েছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ।
এ দিনের সভায় আগামী নভেম্বরে শিলিগুড়ি পুরসভার নির্বাচন হবে বলে ধরে নিয়ে দলের কর্মীদের প্রস্তুতি শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কী ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হবে, তার কৌশলও এ দিন কর্মিসভায় ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। যে ওয়ার্ডে দলের কমিটি নেই, সেখানে দ্রুত কমিটি তৈরি করতে হবে। ওয়ার্ডের কমিটিগুলিকে শক্তিশালী করতে এলাকার ‘অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের’ রাখতে হবে। এলাকার বিশিষ্ট বাসিন্দা যেমন চিকিৎসক, আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত পদস্থ আধিকারিক, সমাজকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে দলের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
শিলিগুড়ি পুরসভায় ৪৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে তার মধ্যে ২০টিরও বেশি ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী প্রথম স্থানে ছিলেন। সে প্রসঙ্গ টেনেই রাহুলবাবু এ দিনের সভায় দলের কর্মীদের বলেন, “শিলিগুড়ির বাসিন্দাদের আশীর্বাদ বিজেপি-র সঙ্গে রয়েছে। সাধারণ বাসিন্দা, এলাকার বিশিষ্টদের দলের কাজে সামিল করুন, তাঁদের সমস্যার কথা শুনুন।” তাঁর কথায়, সাধারণ বাসিন্দাদের সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করলে, তাঁদের পাশে থাকলে, শিলিগুড়ি পুরসভা দখল করা সম্ভব।
গত জুনে শিলিগুড়ি পুরসভা সহ রাজ্যের অন্য বেশ কয়েকটি পুরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী নভেম্বর মাসে সেই নির্বাচন হতে পারে। এ প্রসঙ্গেও রাহুলবাবুর অভিযোগ, লোকসভা ভোটের ফল দেখে তৃণমূল ভয় পেয়েছে। তাই ভোট করাতে চাইছে না। কিন্তু তৃণমূল জানে না, যত দেরি করে ভোট করাবে ততই ওদের হার নিশ্চিত হবে।
এ দিন ভিড়ে ঠাসা হলে কর্মিসভা হওয়ায় জেলা বিজেপি নেতৃত্ব সন্তুষ্ট। এ দিনের সভাতে বিভিন্ন দল থেকে কর্মী সমর্থকরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলেও দলের তরফে দাবি করা হয়েছে। দলের জেলা সম্পাদক রথীন্দ্র বসু বলেন, “যা ভিড় হয়েছে, তাতে আগামী দিনে কর্মিসভা করতে হলেও মাঠে তার আয়োজন করতে হবে।”
এ দিন প্রায় ৪৫ মিনিটের বক্তৃতায় আগাগোড়া তৃণমূল এবং রাজ্য সরকারকে আক্রমণের নিশানা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে টাকা নিয়ে ছাত্র ভর্তি, দেশের মধ্যে রাজ্যেই নারী নির্যাতনের ঘটনা সর্বাধিক বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। সাংসদ তাপস পালকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে তৃণমূলই আড়াল করার চেষ্টা করছে বলে তাঁর অভিযোগ। সিপিএমের মতোই তৃণমূল নেতারা উদ্ধত হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ করে রাহুলবাবুর কটাক্ষ, “যে তৃণমূল কর্মীরা একসময়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল, এখন তাঁরাই অবহেলিত। সিপিএমের নেতারাই তৃণমূলে এসে দল চালাচ্ছেন।”
দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ পাল অবশ্য বলেন, “রেলবাজেট ও সাধারণ বাজেটে বাংলা বঞ্চিত হয়েছে। বিজেপি তাই নজর ঘোরাতে এখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে।” সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, শিলিগুড়ির বাসিন্দারা তৃণমূলের সঙ্গেই রয়েছে।