এক দিকে গাছ কাটা চলছে শিলিগুড়িতে। অন্য দিকে রমরমা অবৈধ নির্মাণের। —নিজস্ব চিত্র।
প্রোমোটারের দখলে শহর
স্কুলে পড়ার সময়ে ভাবতাম, শিলিগুড়ির মতো শহর হয়তো কমই আছে। বেশি দিন আগের নয়। ২০০৪ সালেও আমার ভাবনা এমনই ছিল। এখন ভাবি, এটা কোন শহর? এত দূষিত হয়ে গেল কী ভাবে? অথচ কয়েক বছর আগে স্কুলে পড়ার সময়ে শহরের পরিবেশ এতটা দমবন্ধ করা ছিল না। স্কুল বাস ফাঁকি দিয়ে মাঝেমধ্যে দাগাপুর থেকে হেঁটে দার্জিলিং মোড় পর্যন্ত পৌঁছতাম। বন্ধুদের সঙ্গে ওই রাস্তাটা হাঁটতে কী যে ভাল লাগত। শ্বাস নিতে আরাম লাগত। তাজা বাতাস বইত। এখন টাটকা বাতাস মেলাই ভার। যে ভাবে বায়ু দূষণ হয়েছে তাতে ফুসফুস, ত্বকে রোগ না হওয়াই আশ্চর্যের। গাড়ি, বাস, অটো যে ভাবে বায়ু দূষণ ঘটাচ্ছে। বিষাক্ত ধোঁয়ায় চোখ জ্বালা করে এখন। বর্ধমান রোডের হালও খুব করুণ। সেখানে চলাফেরা করা দায়। সেবক রোড ও হিলকার্ট বোধ হয় বায়ু ও শব্দ দূষণে সবচেয়ে এগিয়ে। দিল্লিতে যে ব্যাটারি কিংবা গ্যাস চালিত গানি চলে তা এখানে চালু হলে হয়তো শহরটা বাঁচতে পারে।
আরও খারাপ লাগে শহরের প্রমোটোরদের একাংশের কাজ-কারবার দেখে। গাছপালা নির্বিচারে কেটে ফ্ল্যাট বানিয়ে কোটিপতি হওয়ার জন্য যেন প্রতিযোগিতা চলছে। একটা পুরনো বাড়িতে যে গাছপালা, ফুল-ফুলের সম্ভার ছিল তা হাপিস করে শুধু বহুতল তুললে হবে? আমরা সকলে যদি চাই তা হলে কাজটা কিন্তু সহজ। আম-জাম-কাঠাঁল, লিচু, শিশু, সেগুন গাছ দিয়ে শহরকে সাজিয়ে তোলা যাবে। না হলে কিন্তু, রোগ বাড়তেই থাকবে। মনে রাখতে হবে, অতীতের শিলিগুড়িতে শহরবাসী এত রোগে ভূগতেন না। হিলকার্ট রোড, সেবক রোডের সিংহভাগ বাড়িতে একটিও গাছ নেই। কাজেই একজোট হয়ে আমাদেরই শিলিগুড়িকে বাঁচাতে হবে। শুরুতে ৫০ জন জোগাড় করে ‘সেভ শিলিগুড়ি’ স্লোগান তুলে প্রচার চালাতে হবে। শহরে গ্রিন অটো চালুর দাবি তুলতে হবে। যত দিন না শিলিগুড়িতে ‘গ্রিন অটো’ চালু না হয়, ততদিন আন্দোলন চালাতে হবে। তা চালু হলে ফের অন্য দাবি নিয়ে সরব হতে হবে।
শহরে প্রতিদিন বাইরে থেকে বহু মানুষ যাতায়াত করেন। তাঁরা শহরে আবর্জনা ফেলে চলে যান অনেকেই। সে জন্য রাস্তায় জরিমানা চালু করা হোক। কেন রাস্তায় পান মশলার পিক, থুতু ফেলে নোংরা করে দেওয়া হবে। কড়া ভাবে জরিমানা করা দরকার। আমি তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে শিলিগুড়ির সমস্ত বাসিন্দাদের কাছে অনুরোধ করছি, ‘শিলিগুড়িকে দূষণ মুক্ত করতে প্রত্যেকে কিছু করুন। যাতে শিলিগুড়ি হয়ে ওঠে সবুজ।’
মৌমিতা দেব, শিলিগুড়ি।
কোথায় গেল কাঞ্চনজঙ্ঘা?
‘আমার শহর’ বেশ বলিষ্ঠ বিভাগ। ভাল লাগছে। আমার কিছু বলার রয়েছে। ১৯৬২ সালে আমার জন্ম। শিলিগুড়ি হাসপাতালে। সে সময়ের শিলিগুড়ির ঘ্রাণ ছিল একেবারেই অন্যরকম। শহরের যেখানে দাঁড়ানো যেত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যেত। সকালে সেই শৃঙ্গ দেখলে মনটা জুড়িয়ে যেত। গত কয়েক দশকে, বাম আমলে নগরায়ণ প্রচুর হয়েছে।
কিন্তু, আরও যা হয়েছে তা হল, মহানন্দা নদীর চর দখল করে কলোনি হয়েছে। শহরের মূল বাসিন্দাদের জমি কিনে নিয়ে প্রমোটোররা অট্টালিকা তুলেছেন। ফুটপাত দখল করে ব্যবসা হচ্ছে অবাধে। বিধান মার্কেটে যাওয়ার ব্যস্ত রাস্তা বিধান রোডের মুখে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের উল্টোদিকে বহুতল তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নতুন রাস্তা না বানিয়ে শহরে আরও যান (সিটি অটো) চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিধান মার্কেটের ব্যবসায়ীদের একাংশ দোকানের সামনে রাস্তা দখল করে যানবাহন, মালপত্র রাখলেও জরিমানা নেওয়া হচ্ছে না। চাঁদমণির সবুজ, সেবক রোডের গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে।
এমন চলতে থাকলে শিলিগুড়ির পরিবেশ বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা। বর্তমান শাসক দল যদি সত্যিই বিধান রোডের স্টেডিয়ামের উল্টোদিকে বহুতল নির্মাণ ভেঙে নির্মাতা সংস্থাটিকে ক্ষতিপূরণ দিতে চান তা হলে আমার মতো শহরবাসীর সমর্থন পাবেন। ওই জায়গায় হাইড্রোলিক পার্কিং করা জরুরি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী যদি সেটা সত্যি করে দেখাতে পারেন তা হলে শিলিগুড়ির বাসিন্দাদের কাছ থেকে অনেক আশীর্বাদ ও ধন্যবাদ পাবেন।
রতন সাহা, উত্তরবঙ্গ সাংস্কৃতিক পরিষদ, শিলিগুড়ি।
পুর-আওতায় আসুক কাওয়াখালি
‘আমার শহর’-এর জন্য অভিনন্দন! শিলিগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে আমরা থাকি। এলাকাটা এক সময়ে গ্রাম থাকলেও এখন শহরের আকার নিয়েছে। যে জায়গার নাম কাওয়াখালি। লোকমুখে মেডিক্যাল মোড় হিসেবেও পরিচিত। যা কি না মেডিক্যাল কলেজের সামনে থেকে রানিডাঙা যাওয়ার মোড় পর্যন্ত। প্রায় ১০০ বছর আগে যে এলাকা ছিল ঘন জঙ্গলে ভরা। প্রচুর চিতাবাঘও ছিল। লচকা নদীর জলস্রোত ছিল খুব। মেডিক্যাল কলেজের জন্য রাস্তা, সেতু হয়েছে। জমির চাহিদা বেড়েছে। মহানন্দায় নিত্য নতুন সেতু হওয়ায় আমাদের জায়গাটা পাল্টে যাচ্ছে প্রতিদিন। শিলিগুড়ির সঙ্গে যোগাযোগ বেড়েছে। কিন্তু এলাকার শান্তি কমে গিয়েছে। গাড়ির আওয়াজে এখন প্রাণ ওষ্ঠাগত। এতসবের পরেও আমাদের এলাকাটা পুরসভার আওতায় নেই। ফলে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার আটকাতে কেউ ব্যবস্থা নিতে পারছে না। শিলিগুড়ির গা ছুঁয়ে থেকেও আমরা কেন পরিষেবা থেকে বঞ্চিত থাকব?
মণীষা আচার্য, কাওয়াখালি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy