Advertisement
E-Paper

সিলিন্ডারের ত্রুটিতেই পুড়ে মৃত তিন, সন্দেহ

গ্যাস সিলিন্ডারে ত্রুটির জন্যই আগুন লেগে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। কিন্তু, গ্যাস সরবরাহকারী ডিলারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা তো দূরের কথা, কাউকে এখনও পুলিশ চিহ্নিতই করতে পারেনি। শুধু তা-ই নয়, মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে ওই পরিবারের কর্তা উত্তম সাহা প্রধাননগরের একটি গ্যাস ডিলার সংস্থার নাম জানালেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না-নেওয়ায় জনমানসে নানা প্রশ্ন দানা বাঁধছে। এমনকী, পুলিশের একাংশ ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাকারী সংস্থাকে বাঁচাতে সক্রিয় কি না তা নিয়েও মৃতের আত্মীয়দের অনেকের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০২:০২
মৃত বাবা-মা, বোনের ছবি দেখাচ্ছেন বাবু। —নিজস্ব চিত্র

মৃত বাবা-মা, বোনের ছবি দেখাচ্ছেন বাবু। —নিজস্ব চিত্র

গ্যাস সিলিন্ডারে ত্রুটির জন্যই আগুন লেগে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। কিন্তু, গ্যাস সরবরাহকারী ডিলারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা তো দূরের কথা, কাউকে এখনও পুলিশ চিহ্নিতই করতে পারেনি। শুধু তা-ই নয়, মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে ওই পরিবারের কর্তা উত্তম সাহা প্রধাননগরের একটি গ্যাস ডিলার সংস্থার নাম জানালেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না-নেওয়ায় জনমানসে নানা প্রশ্ন দানা বাঁধছে। এমনকী, পুলিশের একাংশ ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাকারী সংস্থাকে বাঁচাতে সক্রিয় কি না তা নিয়েও মৃতের আত্মীয়দের অনেকের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধছে।

মৃত উত্তমবাবুর ছেলে তথা কলেজে প্রথম বর্ষের পড়ুয়া বাবু বলেন, “মৃত্যুর আগে বাবা যা বলেছে, তাতে সিলন্ডারের মুখ খোলার পরেই গ্যাস বের হতে শুরু করেছিল। অন্ধকারে রেগুলেটর বসাতে না পারায়, সামনে কূপি নিতেই আগুন লেগে যায়।” বাবুর কাকা বিপ্লব সাহা বলেন, “সিলিন্ডারের ত্রুটির জন্যই যে আগুন লাগে তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। দাদা মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে প্রধাননগরের একটি গ্যাস ডিলার সংস্থার নামও বলেছে। তার পরেও ওই সংস্থার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না করায় পাড়া-পড়শিরা নানা সন্দেহ করছেন। আমরা কিন্তু পুলিশের উপরে এখনও ভরসা রাখছি।” তবে পড়শিদের অনেকেই পুলিশি তদন্তের হাল নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের প্রশ্ন, একটি পরিবারের বাবা-মা ও কিশোরী মেয়ে ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহের কারণে পুড়ে মারা যাওয়ার পরে ৫ দিন কাটলেও কেন গ্যাস ডিলারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে না? কয়েকজন বাসিন্দা জানান, পুলিশ ইচ্ছে করলেই তদন্তে নেমে দোষীকে চিহ্নিত করতে পারে। কিন্তু, ঘটনার পরে বিশেষজ্ঞদের ডেকে পুড়ে যাওয়া সিলিন্ডার পরীক্ষা করাতে পুলিশ উদ্যোগী না হওয়ায় এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে বলে ওই বাসিন্দারা মনে করেন। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগ মোহন বলেন, “তদন্ত কোন পথে এগোচ্ছে নিজে খোঁজ নেব। কারণ গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে আগুন লেগে যাওয়ার ঘটনা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কোথা থেকে গ্যাস সিলিন্ডারটি এল, কোন সরবারহকারী সংস্থার সিলিন্ডার সব খতিয়ে দেখতে হবে। গাফিলতি বরদাস্ত হবে না।”

গত শুক্রবার রাতে চম্পাসারির ঠিকনিকাটার টিনের ছাউনি দেওয়া দরমা-বেড়া বাড়িতে আগুন লেগে পুড়ে মৃত্যু হয় উত্তম সাহা, তাঁর স্ত্রী আদরিদেবী এবং মেয়ে বন্দনার। বাসিন্দাদের কয়েকজনের দাবি, ওই দরিদ্র পরিবারের নিজস্ব গ্যাসের সংযোগ না থাকলেও, তাঁদের পরিচিত সাধন পালের নামে থাকা গ্যাসের সংযোগ তাঁরা ব্যবহার করতেন। সাধনবাবুর স্ত্রী রেখাদেবীও মঙ্গলবার জানিয়েছেন, “দেড় বছর ধরে আদরিদেবীরা আমাদের গ্যাস ব্যবহার করছে। প্রধাননগরের গ্যাস ডিলারের থেকে সংযোগ নিয়েছিলাম। আর্থিক কারণে ওঁরা নিজেরা সংযোগ নিতে পারেনি, আর আমাদেরও গ্যাস ব্যবহার হচ্ছিল না। সে কারণেই ওদের ব্যবহার করতে দিয়েছিলাম।”

এর পরেই বাসিন্দাদের তরফে কয়েকজন জানান, সাধন পালের নামে গ্যাস সংযোগ থাকার কথা জানালেও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ করেনি। পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, গত সোমবার ওই বাড়িতে গিয়েও কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাসিন্দাদের পাল্টা দাবি, সাধনবাবু বা তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বললেই গ্যাস সরবারহকারী সংস্থার সম্পর্কে তথ্য সহজেই পাওয়া যেতে পারে। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, মৃত্যুর আগে উত্তমবাবু গ্যাস সরবারহকারী সংস্থার নাম জানালেও, সংস্থার কাউকে পুলিশ জেরা করেনি। মৃতদের আত্মীয়ের তরফে যে গ্যাস সংস্থার নাম উঠে এসেছে সেই সংস্থাটির অফিস রয়েছে মাল্লাগুড়িতে। সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে, যে নামে সংযোগের কথা বলা হয়েছে, তাদের নথিতে সে নাম উল্লেখ নেই।

মঙ্গলবার তিন জনের শ্রাদ্ধশান্তির কাজ হয়েছে। পরিবারের তরফে যে গ্যাস সংস্থার নাম জানানো হয়েছে, সেই সংস্থা ওই পরিবারকে সরবারহ করার ঘটনা অস্বীকার করেছে। স্বভাবতই, এই পরিস্থিতিতে যে পরিবারের নামে সংযোগ তাঁদের বয়ান কেন পুলিশ নথিবদ্ধ করছে না, কেনই বা সংস্থার নথি পরীক্ষা করছে না সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বাসিন্দারা।

cylinder siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy