Advertisement
E-Paper

সালিশি কুলটা বলায় আত্মঘাতী ধর্ষিতা

ধর্ষণে অভিযুক্ত এক কিশোরের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে নালিশ জানাতে চেয়েছিলেন অভিযোগকারিণী। গ্রামের সালিশি সভায় মাতব্বরেরা কিন্তু তাতে আপত্তি করেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত ছিল, অভিযুক্ত কিশোরকে কেবল অভিযোগকারিণীর পা ধরে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তারপরে ২০ বার কান ধরে ওঠবস করলেই হবে।

পীযূষ সাহা

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:০২

ধর্ষণে অভিযুক্ত এক কিশোরের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে নালিশ জানাতে চেয়েছিলেন অভিযোগকারিণী। গ্রামের সালিশি সভায় মাতব্বরেরা কিন্তু তাতে আপত্তি করেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত ছিল, অভিযুক্ত কিশোরকে কেবল অভিযোগকারিণীর পা ধরে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তারপরে ২০ বার কান ধরে ওঠবস করলেই হবে। ওই মহিলা তা মানতে পারেননি। তিনি পুলিশে অভিযোগ জানাতে অনড় ছিলেন। তখন মাতব্বরেরা ভরা সভার মধ্যেই তাঁকে ‘কুলটা’ বলে মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ। সেই অপমানে বুধবার সকালে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই মহিলা। বৃহস্পতিবার ভোরে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

চার সন্তানের মা সদ্য ত্রিশের ঘরে পা দেওয়া ওই মহিলার বাড়ি মালদহের মানিকচকের বসন্তপুরে। অত্যন্ত গরিব পরিবারের এই বধূর স্বামী তৃণমূলকর্মী। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি। সোমবার রাতে তাঁর স্ত্রী বাড়িতে একাই ছিলেন। অভিযোগ, সেই সময়ে তাঁদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত সম্পন্ন পরিবারের এক প্রতিবেশী কিশোর তাঁকে ধর্ষণ করে। ওই মহিলার চিৎকারে গ্রামের লোকজন ছুটে এসে সেই কিশোরকে ধরে ফেলে। মঙ্গলবার বসে সালিশি সভা। ওই বধূর স্বামী বলেন, “সালিশি সভায় মাতব্বররা ধর্ষণে অভিযুক্ত কিশোরকে কান ধরে ওঠবস করে আমার স্ত্রীর পা ধরে ক্ষমা চাইয়ে ছেড়ে দেয়। তখন আমরা বারবার বলি, এই বিচার চাই না। থানায় অভিযোগ জানাতে চাই। শুনে সভার মাতব্বররা আমার স্ত্রীকে কুলটা বলে অপমান করে। সেই অপমানেই আমার স্ত্রী আত্মঘাতী হয়েছেন।” ওই বধূর বাবা জানান, মঙ্গলবার রাত থেকেই মনমরা হয়ে ছিলেন তাঁর মেয়ে। পরদিন সকালে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন। তাঁর কথায়, “মৃত্যুশয্যায় মেয়ে আমাকে বলে গিয়েছে, অপমানের জ্বালাতেই ও আত্মঘাতী হয়েছে।”

অভিযুক্ত কিশোর পলাতক। তবে তার মা-কে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। জেলার পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “অভিযুক্ত ওই নাবালকের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে ওই মহিলা জানিয়েছেন, তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।” পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে তাঁরা জেনেছেন, ওই কিশোরের সঙ্গে ওই মহিলার পরিচয় ছিল। গোটা ঘটনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রর অভিযোগ, “সালিশি সভা বসিয়েছিল গ্রামের কিছু সিপিএম ও কংগ্রেসের মাতব্বর। তাঁরা ধর্ষণকারীকে পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে মুক্তি দিয়েছেন। উল্টে যে ধর্ষিতাকে কুলটা বলে অপমান করেছেন। পুলিশকে বলেছি যারা সালিশি সভায় ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে গ্রেফতার করা হোক।”

তবে সিপিএম ও কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্ব জানিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। জেলা কংগ্রেস সভাপতি মৌসম বেনজির নূর জানান, সালিশি সভায় যারা ধর্ষণের বিচার করেছে তারা যে দলেরই হোক না কেন, কংগ্রেস তাদের শাস্তি চায়। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রেরও একই বক্তব্য। পুলিশের ডিআইজি (মালদহ রেঞ্জ) সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “সালিশি সভার মাতব্বররদের ধরতে পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে।”

চলতি বছরে মালদহে এই নিয়ে ১২টি ধর্ষণের অভিযোগ উঠল। এর মধ্যে দু’জনকে খুনও করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

rape suicide
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy