এ বার হেফাজতে মারধরের জেরে অভিযুক্তের মৃত্যুর মতো অভিযোগ উঠল মালদহ পুলিশের বিরুদ্ধে।
গত বুধবার পড়শিকে খুনের অভিযোগে রতুয়ার বালুপুরে মেয়ের বাড়ি থেকে ওবাইদুল রহমান (৫২) নামে এক প্রৌঢ়কে গ্রেফতার করে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ। ওবাইদুলের পরিবারের লোকজন পরদিনই মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, গ্রেফতারের সময়ে ওবাইদুলের মাথায় ও শরীরে লাঠি ও টর্চ দিয়ে মারধর করা হয়েছিল। তাই পুলিশ হেফাজতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওবাইদুলকে হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতাল, মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা ওবাইদুলকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তবে মালদহ হাসপাতাল থেকে ‘রেফার’ করা রোগী বলে মৃতদেহের ময়না-তদন্ত করা হয়।
পুলিশ অবশ্য মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হরিশ্রচন্দ্রপুর ও মালদহ হাসপাতালের চিকিৎসকদের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে ‘সেরিব্রাল অ্যাটাক’-এ ওই অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন জেলার এক পুলিশ-কর্তা।
শনিবার ভোরে কলকাতা থেকে ওবাইদুলের মৃতদেহ নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুরে ফেরেন মৃতের পরিবারের লোকজন। বাড়ি না ফিরে সরাসরি থানায় যান তাঁরা। সেখানে মারধরে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের সাসপেন্ড করা-সহ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। বিক্ষোভে সামিল হন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশও। ওবাইদুলের মেয়ে হাসনারা বিবির অভিযোগ, “পুলিশের মারেই অসুস্থ হয়ে বাবার মৃত্যু হয়েছে। ওরা এখন সে কথা মানতে না চাইলে চলবে কেন?”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার ওবাইদুলকে গ্রেফতার করতে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে তদন্তকারী অফিসার সাব ইনস্পেক্টর বিকাশ হালদার, দুই এএসআইশ্যামল মজুমদার ও রাজু সরকার, দুই কনস্টেবলআবুল কালাম আজাদ এবং হুমায়ুন কবির ও এক গ্রামীণ পুলিশকর্মী জাহিদ হোসেন ছিলেন। ওবাইদুলের পরিবারের করা অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবারই বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়। ওই ছয় পুলিশকর্মীকে শুক্রবার রাতে থানা থেকে সরিয়ে মালদহ জেলা পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে। তদন্তকারী অফিসার বিকাশ হালদার এ দিনও দাবি করেন, “অভিযুক্তকে মারধর করা হয়নি। জিপে অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমরাই ওঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাই।”
পুলিশের দাবি মানতে নারাজ এলাকার একাধিক মানবাধিকার সংগঠন। তাঁরা মনে করিয়ে দিয়েছেন এ রাজ্যের ধনেখালিতে পুলিশ হেফাজতে তৃণমূল কর্মী কাজী নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই থানার ওসি-সহ সাত পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই চার্জশিট দিয়েছে। সেই সূত্র টেনে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা কমিটি’র জেলা সম্পাদক জিষ্ণু রায়চৌধুরী বলেন, “আমরা চাই, অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের সাসপেন্ড করে বিচারবিভাগীয় তদন্ত করা হোক।” আর এক মানবাধিকার সংগঠন ‘গৌড়বঙ্গ হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ারনেস সেন্টার’-এর সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় দাসও বলেন, “শুধু ক্লোজ কেন? এর শেষ দেখে ছাড়ব।”
সম্প্রতি জেলার পুলিশকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে একাধিক ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে মালদহ পুলিশ। পুকুরিয়া থানার প্রাক্তন ওসি-র বিরুদ্ধে থানায় সালিশিসভা বসিয়ে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগের মিটমাটের চেষ্টা করা, নির্যাতিতা মহিলাকে দিনভর থানায় আটকে মানসিক চাপে ফেলার মতো অভিযোগ উঠেছে। বিভাগীয় তদন্তে কর্তব্যে গাফিলতির প্রমাণ মেলায় ওই অফিসারকে ওসি-র পদ থেকে সরানো হয়েছে। চাঁচল থানার আইসির বিরুদ্ধে লোকসভার অধ্যক্ষের কাছে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ করেছিলেন উত্তর মালদহের সাংসদ মৌসম বেনজির নূর। সেই অভিযোগের তদন্ত করছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। এই হেফাজত-মৃত্যুর অভিযোগ ওঠায় জেলা পুলিশের ভাবমূর্তি কি ফের প্রশ্নের মুখে পড়ল না?
পুলিশ সুপারের বক্তব্য, “পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠা প্রত্যেকটি অভিযোগেরই তদন্ত হয়েছে বা হচ্ছে। এর বেশি কিছু বলার নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy