Advertisement
০৫ মে ২০২৪

যুদ্ধ চাই, শান্তি নয়! তৃণমূলের এখন এই স্লোগান

রবিবার সকাল সাড়ে দশটা। কেশপুর বাজারে শাসক দলের মিছিল থেকে ‘শান্তি নয়, যুদ্ধ চাই’ স্লোগান শুনে খটকা লেগেছিল স্থানীয় যুবক শেখ শামিমের।

তৃণমূলের মিছিলে সামনের সারিতে মহম্মদ রফিক (সবুজ পাঞ্জাবি)।  রবিবার কেশপুরে। নিজস্ব চিত্র

তৃণমূলের মিছিলে সামনের সারিতে মহম্মদ রফিক (সবুজ পাঞ্জাবি)। রবিবার কেশপুরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কেশপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯ ০৩:৩৪
Share: Save:

দলে তাঁর জায়গা বদলেছে। সাধারণ কর্মী থেকে তিনি এখন জেলা সাধারণ সম্পাদক।

সেই মহম্মদ রফিকের নেতৃত্বে কেশপুরের মাটিতে তৃণমূলের মিছিলের স্লোগানও বদলে হল— শান্তি নয়, যুদ্ধ চাই!

রবিবার সকাল সাড়ে দশটা। কেশপুর বাজারে শাসক দলের মিছিল থেকে ‘শান্তি নয়, যুদ্ধ চাই’ স্লোগান শুনে খটকা লেগেছিল স্থানীয় যুবক শেখ শামিমের। কান পেতে আবার শুনছিলেন স্লোগানটা। না, ঠিকই শুনছেন। ‘যুদ্ধ চাই, যুদ্ধ চাই’-এর সঙ্গে জুড়েছে ‘ধোলাই খাবে, পেটাই খাবে’-ও।

লোকসভা ভোটে ধাক্কার পরে জঙ্গলমহল পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব পেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। দলে রফিকের গুরুত্ব বৃদ্ধিও তার পরেই। তিরিশ বছরে যে যুবক অবিভক্ত মেদিনীপুরে তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, এখন পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই সেই রফিক পুরনো পদেই ফিরেছেন। কেশপুরে বিজেপিকে ঠেকাতে দল যে এখন পুরনো দাপুটে নেতাতেই ভরসা রাখছে, তাও স্পষ্ট।

দায়িত্ব পেয়ে রফিক যখন কেশপুরে ব্লক নেতাদের সঙ্গে প্রথম মিছিল করলেন, ঘটনাচক্রে সেই দিনই কেশপুর সিপিএমের মুখ এন্তাজ আলির স্মরণসভা হয়েছে জামশেদ আলি ভবনে। উত্থান পর্বে এই এন্তাজদের সঙ্গেই লড়েছেন রফিক। সিপিএমের সে দিন গিয়েছে। দীর্ঘ দিনের ঘরছাড়া এন্তাজ কেশপুরে ফিরেছেন কফিন বন্দি হয়ে, আট বছর পরে। আর নেতা রফিক ফিরলেন ন’বছর পরে। ২০১০ থেকে ছ’বছর কংগ্রেসে কাটিয়ে ২০১৬ সালে তৃণমূলে ফিরলেও এত দিন সাধারণ কর্মী ছিলেন রফিক।

রাজ্য রাজনীতিতে বরাবর রণভূমি কেশপুর। এই বিধানসভা কেন্দ্র এ বারও লোকসভা ভোটে ৯০ হাজারের বেশি লিড দিয়েছে তৃণমূলকে। ভোটের দিন বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষকে হেনস্থা, ভুয়ো ভোটের অভিযোগও উঠেছে। ফলপ্রকাশের পরে অবশ্য বিভিন্ন এলাকায় বিজেপির পতাকা উড়ছে। শনিবার ব্লক সদরেও বিজেপির পতাকা তোলা হয়, বেরোয় মিছিল। তার পরেই তড়িঘড়ি মিছিল ডাকে তৃণমূল।

স্লোগান পাল্টে গেল কেন?

১৯৯৮-২০০০ সালে কেশপুরে তৃণমূলের ‘রবিনহুড’ রফিকের জবাব, ‘‘দু’-এক জন ভুল করে ওই স্লোগান দিয়ে ফেলেছে।’’ তবে যুদ্ধের ইঙ্গিত রফিকের বক্তব্যেই। তাঁর কথায়, ‘‘বুনো হাতি খাবারের খোঁজে গ্রামে এসে তাণ্ডব করলে গ্রামের মানুষ হুলা জ্বালিয়ে তাদের তাড়ায়। বিজেপি গ্রাম দখলের চেষ্টা করলে সেটাই হবে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতিও বলছেন, ‘‘কেশপুরকে অশান্ত করার চেষ্টা হলে মানুষ জবাব দেবেন।’’

বিজেপি নেতৃত্বের মতে, রফিককে ফিরিয়ে কেশপুরে সন্ত্রাস তৈরির চেষ্টা করবে তৃণমূল। তবে ভয় পাইয়ে মানুষকে চুপ করানো যাবে না বলেই ধারণা বিজেপি নেতৃত্বের। দলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘ভয় ভাঙতে আর সময় লাগবে না।’’

দু’দশক আগে তৃণমূলের স্লোগান এখন বিজেপির মুখে। বদলেছে শুধু শাসক দলের নাম। বিজেপির মিছিলে রব উঠছে— ‘কেশপুর এ বার তৃণমূলের শেষপুর হবে!’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Keshpur কেশপুর তৃণমূল
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE