Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ি ভাড়া নিয়ে ছক ডাকাতির, জালে দুষ্কৃতীরা

তাদের বিরুদ্ধে হাওড়া ও হুগলিতে একাধিক ব্যাঙ্ক ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে এটিএম ভেঙে টাকা লুঠের অভিযোগও। এ বার ডোমকল ও করিমপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে তারা পর পর ডাকাতির ছক কষেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। তার আগেই সোমবার রাতে সেই ভাড়াবাড়ি থেকে ছয় দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার কর হাওড়ার বাউড়িয়া থানার পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাউড়িয়া ও করিমপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ০০:৫৩
Share: Save:

তাদের বিরুদ্ধে হাওড়া ও হুগলিতে একাধিক ব্যাঙ্ক ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে এটিএম ভেঙে টাকা লুঠের অভিযোগও। এ বার ডোমকল ও করিমপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে তারা পর পর ডাকাতির ছক কষেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। তার আগেই সোমবার রাতে সেই ভাড়াবাড়ি থেকে ছয় দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার কর হাওড়ার বাউড়িয়া থানার পুলিশ।

পুলিশ জানায়, ধৃতদের মধ্যে মহম্মদ ইকবাল মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির ভাদুরিয়াপাড়ার বাসিন্দা। নাসিম খান, দীপক যাদব, মহম্মদ ইফতিকার আনসারি, রঞ্জিত সাকসেনা ও নিত্যানন্দ পাণ্ডে ঝাড়খণ্ড ও বিহারের বাসিন্দা।

গত ১৩ মে বাউড়িয়ার বুড়িখালিতে একটি এটিএম কাউন্টার ভেঙে ১৩ লক্ষ টাকা লুঠ করার অভিযোগ রয়েছে ধৃতদের বিরুদ্ধে। ওই একই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১২ জুন দিঘা থেকে পুলিশ ধরে রাজেশ তিওয়ারি এবং ওমপ্রকাশ সিংহ নামে দু’জনকে। তারা বাউড়িয়ারই নর্থ মিল এলাকার বাসিন্দা এবং স্থানীয় একটি চটকলের কর্মী। তাদের জেরা পুলিশ ওই ছ’জনের নাম পায়। রাজেশ ও ওমপ্রকাশের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে বিহার এবং ঝাড়খণ্ড থেকে ছয় দুষ্কৃতীকে এনে তারা এটিএম কাউন্টার ভেঙে টাকা লুঠ করার ষড়যন্ত্র করেছিল। রাজেশের বাড়িতে কয়েক দিন আগে বন্ধু সেজে এসে তারা বসবাস শুরু করে। সেই সময় তারা বুড়িখালির এটিএমটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে। তারপরে সুযোগ বুঝে সেটি ভেঙে টাকা লুঠ করে। এটিএমে টাকা রাখতে আসা ব্যাঙ্কের নিরাপত্তারক্ষীদের মারধর করে বলে অভিযোগ।

তদন্তকারীরা জানান, বাউড়িয়ার কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ওই দুষ্কৃতীরা চলে যায় করিমপুরে। দুই জেলার পুলিশ সূত্রের খবর, বাউড়িয়ার কায়দাতেই ডোমকল ও করিমপুরে ব্যাঙ্ক ডাকাতির ছক কষেছিল তারা। করিমপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে নরেন অগ্রবাল নামে এক ব্যক্তির বাড়ি তারা ভাড়া নিয়ে থাকতেও শুরু করে। ভাড়া নেওয়ার সময় তারা তাদের বৈধ পরিচয়পত্রও দেখায়। এ দিকে হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে করিমপুর থানার পুলিশ সোমবার রাতে তাদের আটক করে বাউড়িয়া থানাকে খবর দেয়। গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘ধৃতেরা আন্তঃরাজ্য ব্যাঙ্ক ডাকাতি চক্রের সঙ্গে যুক্ত।’’

তবে করিমপুর থানার পুলিশ ওই ছ’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যা জানতে পেরেছে তা চমকে ওঠার পক্ষে যথেষ্ট। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের পরিকল্পনা ছিল মঙ্গল বা বুধবার ডোমকল এলাকার কোনও ব্যাঙ্কে ডাকাতি করা। পরের ‘টার্গেট’ ছিল করিমপুর। ধৃতেরা জেরায় সে কথা কবুলও করেছে। তবে, ধৃতদের কাছ থেকে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র মেলেনি।

জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ওরা নিজেদের কাছে কোনও অস্ত্র রাখে না। ‘অপারেশন’ এর আগে অন্য একটি দল সে সব নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়।

নদিয়ার পুলিশ সুপার ভরতলাল মিনা বলেন, ‘‘ছ’জনের একটি দল ব্যাঙ্ক ডাকাতির জন্য ওই এলাকায় ঢুকেছে বলে আমাদের কাছে খবর ছিল। সেইমতো এলাকার থানাগুলিকে সতর্ক করা হয়েছিল। হোটেল-সহ বেশ কিছু জায়গায় খোঁজখবর নিয়ে ওই ছ’জনকে আটক করা হয়। রাতেই বাউড়িয়া থানার পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছে।’’

২০০৯ সালে করিমপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনায় খুন হয়েছিলেন ব্যাঙ্কেরই চার কর্মী। ছ’ বছর আগে নভেম্বরের রাতের সেই ঘটনা আজও এলাকার মানুষ ভুলতে পারেননি। এ দিনের ওই ছ’জনের উদ্দেশ্য জানার পরে শিউরে উঠেছে সীমান্তের শহর করিমপুর। করিমপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিধান দত্ত বলেন, “ভাগ্যিস পুলিশ আগে থেকেই বিষয়টি জানতে পেরে ওদের ধরল। নাহলে আরও একটা বড়সড় বিপদ ঘটতে পারত।’’

ধৃতেরা করিমপুরে যে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল সেই বাড়ির মালিক নরেন অগ্রবাল বলছেন, ‘‘দিন চারেক আগে কাপড়ের ব্যবসা করার নাম করে ওরা সকলে বৈধ পরিচয়পত্র দেখিয়েই ঘরভাড়া নিয়েছিল। কিন্তু ওরা যে দুষ্কৃতী তা তো বুঝতেই পারিনি! খুব শিক্ষা হল। ভবিষ্যতে ঘরভাড়া দেওয়ার আগে হাজার বার ভাবব। প্রয়োজনে পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েই ঘরভাড়া দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE