প্রতিবাদ: তখনও চলছে চিকিৎসকদের অবস্থান-বিক্ষোভ। শুক্রবার, সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে। ছবি: সুমন বল্লভ।
সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকলে তাঁরা হেনস্থার শিকার হন। আবার বেসরকারি হাসপাতাল চিকিৎসার খরচ বাড়ালেও রোগীর পরিবার তাঁদের হেনস্থা
করে। তাই তাঁদের প্রশ্ন, এই হেনস্থা বন্ধ করতে কেন উদ্যোগী হচ্ছে না স্বাস্থ্য দফতর?
চিকিৎসকদের হেনস্থার ঘটনায় প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপের দাবিতে শুক্রবার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে সমাবেশ এবং অবস্থান-বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ইউনাইটেড ডক্টর্স ভয়েস অব বেঙ্গল’ (উদ্ভব)। সমাবেশে চিকিৎসকেরা দাবি তোলেন,
স্বাস্থ্য দফতর যদি হেনস্থার প্রতিকার করতে না পারে, তা হলে স্বাস্থ্যসচিব পদত্যাগ করুন।
বিগত কয়েক মাসে বিভিন্ন ঘটনায় একাধিক বার হেনস্থার শিকার হয়েছেন চিকিৎসকেরা। সম্প্রতি চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে ডেবরায় এক চিকিৎসকের গায়ে বিষ্ঠা মাখানো সেই তালিকায় নবতম সংযোজন। এর পরেই চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠন যৌথ ভাবে এই প্রতিবাদ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়।
বিভিন্ন অরাজনৈতিক চিকিৎসক সংগঠন এবং আইএমএ-র কয়েকটি শাখার সদস্যেরা এ দিনের সমাবেশে যোগ দেন। সম্প্রতি সিএমআরআই হাসপাতালে চিকিৎসকদের হেনস্থার ঘটনার পরে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে শহরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা গত ২৬ তারিখ আউটডোর বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানান। তার পরেই স্বাস্থ্য দফতর বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে নোটিস পাঠিয়ে আউটডোর বন্ধ
রাখার কারণ জানতে চায়। পাশাপাশি, যে সব চিকিৎসক প্রতিবাদ
কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের নামের তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের এই নির্দেশ প্রসঙ্গে এ দিন উদ্ভব-এর তরফে চিকিৎসক রেজাউল করিম প্রশ্ন তোলেন, সরকার কেন চিকিৎসকদের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন না? ব্যক্তিগত ভাবে কোনও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কি উচিত? তিনি আরও বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন এ ভাবে চলতে পারে না। স্বাস্থ্যসচিব যদি এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে না পারেন, তা হলে তিনি পদত্যাগ করুন। তিনি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে পারবেন। কিন্তু চিকিৎসক-নিগ্রহের ঘটনার কোনও প্রতিকার করতে উদ্যোগী হবেন না, এটা চলতে পারে না।’’
এ দিন সমাবেশে চিকিৎসকেরা প্রশ্ন তোলেন, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে গত সাত মাসে চিকিৎসকেরা বারবার পথে নামতে বাধ্য হয়েছেন। তার পরেও স্বাস্থ্যসচিব চুপ কেন? আর হেনস্থা শুধু বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা নন, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও হয়েছেন। তা হলে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব কি প্রশাসন এড়িয়ে যাচ্ছে? সংগঠনের তরফে চিকিৎসক শারদ্বত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা প্রতিদিন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। তবু স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা মুখ খুলছেন না কেন? চিকিৎসকেরা ওপিডি বন্ধ রাখলে বেসরকারি হাসপাতালে নোটিস পাঠাচ্ছেন। কিন্তু পরিস্থিতি কতখানি নেতিবাচক হলে চিকিৎসকেরা এ ভাবে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হচ্ছেন, সেটা তাঁরা ভাববেন না!’’
অভিযোগ উঠেছে, চিকিৎসকদের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীরাও হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। পুলিশকে বারবার জানানোর পরেও অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না। এমনকী, বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে দেওয়ার পরেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। যার জেরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন স্বাস্থ্যকর্মী থেকে চিকিৎসক, সকলেই। উদ্ভব-এর তরফে অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘রাস্তায় সমাবেশ করাটা আমাদের কাজ নয়। কিন্তু বাধ্য হয়ে রোগী দেখা ছেড়ে প্রতিবাদে নামতে হয়েছে। আমাদের দাবি, যাঁরা চিকিৎসকদের হেনস্থা করছেন, তাঁদের শাস্তি হোক। স্বাস্থ্য দফতর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। এই পরিস্থিতি চললে পরবর্তী প্রজন্ম এই পেশায় যুক্ত হতে চাইবে না।’’ এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যসচিব অনিল বর্মার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। জবাব দেননি এসএমএসেরও।
এ দিকে, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে এ দিন সন্ধ্যা ছ’টা থেকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অনশনে বসলেন সেখানকার মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই। তিনি জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের হেনস্থার ঘটনা রুখতে স্বাস্থ্য দফতর ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত অনশন চালাবেন। তবে, অনশন করলেও তিনি রোগী দেখার কাজ চালিয়ে যাবেন।
এ দিন ডেবরার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে, দোষীদের শাস্তির দাবিতে ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’ নামে চিকিৎসকদের আর একটি সংগঠন মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy