Advertisement
E-Paper

অফিসারদের সম্পত্তিতথ্যও এ বার সাইটে

ঘর-বাড়ি-গাড়ি, টাকা-পয়সা, সোনাদানা কত আছে, তার হিসেব ওঁরা নিয়মিত রাজ্যকে দেন। আরও স্বচ্ছতার লক্ষ্যে মাঝের স্তরের ওই (ডব্লিউবিসিএস থেকে গ্রুপ বি) অফিসারদের সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্যগুলি সরকারি ওয়েবসাইটে দেওয়ার কথা ভাবছে নবান্ন।

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:১৯

ঘর-বাড়ি-গাড়ি, টাকা-পয়সা, সোনাদানা কত আছে, তার হিসেব ওঁরা নিয়মিত রাজ্যকে দেন। আরও স্বচ্ছতার লক্ষ্যে মাঝের স্তরের ওই (ডব্লিউবিসিএস থেকে গ্রুপ বি) অফিসারদের সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্যগুলি সরকারি ওয়েবসাইটে দেওয়ার কথা ভাবছে নবান্ন।

নোট বাতিলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরছেন। সেই পর্ব মিটলেই ব্যাপারটা চূড়ান্ত হবে। তবে ইঙ্গিত, প্রশাসনিক স্তরে ফাইল তৈরি হয়ে গিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট অফিসার মহল অবশ্য সরকারি পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছে। ডব্লিউবিসিএস এক্সিকিউটিভ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ চাকীর কথায়, ‘‘প্রতি ১ জানুয়ারি আমরা সম্পত্তির হিসেব জমা দিই। আমরা চাই, সেটা
ডিজিটাল করা হোক। হিসেবগুলো জনসমক্ষে আনা বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।’’

প্রশাসনের খবর: রাজ্যের সব কর্মী-অফিসার বছরের গোড়ায় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বিস্তারিত তথ্য সরকারকে দেন। তথ্যগুলি ধাপে ধাপে প্রকাশ্যে আনার পরিকল্পনা হয়েছে। পুলিশের ক্ষেত্রে এর আওতায় পড়তে পারেন ইন্সপেক্টর পদমর্যাদা পর্যন্ত অফিসারেরা। সরকারি সূত্রের দাবি, এই ভাবনার সঙ্গে নোট-কাণ্ডের সম্পর্ক নেই। ‘‘ক’মাস ধরে আলোচনা চলছিল। এখন চূড়ান্ত হওয়ার পথে।’’— বলছেন এক শীর্ষ কর্তা। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সব ঠিক
থাকলে এ বছরের শেষাশেষি ব্যবস্থাটি কার্যকর হবে।’’

অন্য দিকে আইএএস ও আইপিএস অফিসাদের প্রতি বছর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পুরো খতিয়ান কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার মন্ত্রকে জমা দিতে হয়। ২০০৭-০৮ থেকে দিল্লি সেগুলো ওয়েবসাইটে দিচ্ছে। পরে লোকপাল আইনের সুবাদে নিয়ম হয়, ওঁদের ‘পারিবারিক’ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির অঙ্কও জানাতে হবে। যদিও অফিসারদের তরফে আপত্তি ওঠায় পারিবারিক সম্পত্তির (মূলত স্ত্রীর) হিসেব ওয়েবসাইটে দেওয়া হচ্ছে না। অফিসারদের ব্যক্তিগত অস্থাবর সম্পত্তি (টাকা, সোনা, অলঙ্কার ইত্যাদি) সংক্রান্ত তথ্যও কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে আপলোড বন্ধ। কেন?

এক আইপিএসের ব্যাখ্যা, ‘‘এ সব ইন্টারনেটে দিলে চোর-বাটপারেরাও জেনে যাবে, আমার বাড়িতে কত সোনা-দানা, গয়না বা নগদ আছে। তাতে অন্য ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তাই আপত্তি তোলা হয়েছে।’’

এবং এই প্রেক্ষাপটে নবান্নও ভেবে দেখছে, রাজ্যের অফিসারদের স্থাবর-অস্থাবর দুই সম্পত্তির তথ্যই প্রকাশ্যে আনা ঠিক হবে কিনা। সে ক্ষেত্রে শুধু স্থাবর সম্পত্তির (বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট ইত্যাদি) হিসেব ওয়েবসাইটে দেওয়া নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। তবে সৌরভবাবুর মতে, স্বচ্ছতার খাতিরে দুই তথ্যই জনসমক্ষে আনা উচিত।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, স্বচ্ছতাই মূল লক্ষ্য হলে রাজ্যের মন্ত্রীদের ছাড় কেন? বিশেষত যখন দলীয় সাংসদদের সম্পত্তির হিসেব বিজেপি সভাপতিকে দিতে বলে ‘নজির’ তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী?

জবাবে নবান্নের কর্তারা খানিক রক্ষণাত্মক। ওঁদের বক্তব্য, মন্ত্রীদের ‘আচরণবিধি’তেই সম্পত্তির হিসেব দাখিল করার কথা। যদিও
অভিযোগ, অধিকাংশ মন্ত্রী নিয়মিত তা করেন না। অথচ বিহার-সহ কিছু রাজ্যে মন্ত্রীদেরও নিয়মিত সম্পত্তির হিসেব দিতে হয়। এবং তা ওয়েবসাইটে ফলাও করে
প্রকাশিতও হয়।

নবান্নের এক শীর্ষ আমলা বলেন, ‘‘মন্ত্রীদের সম্পত্তির হিসেব দাখিল বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে বহু আগে দু’-এক বার কথাবার্তা
হয়েছিল। ওই পর্যন্তই।’’ ওঁদের অভিমত, স্বচ্ছতার প্রমাণ দিতে হলে সর্বাগ্রে মন্ত্রীদের সম্পত্তির খতিয়ান জনসমক্ষে আনা জরুরি। এতে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে। ‘‘অদূর ভবিষ্যতে মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয় সে পথে হাঁটবেন।’’— আশা এক আমলার।

Property information officials
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy