প্রতীকী ছবি।
রাস্তার ধার জুড়ে সোজা-বাঁকা খুঁটি আর তারের জাল থেকে মুক্তি পেতে চলেছে রাজ্যের ছোট-মেজ শহরগুলি। সল্টলেক ও রাজারহাট-নিউটাউনের মতো রাজ্যের প্রতিটি জেলাসদর ও মহকুমা শহরেও এ বার মাটির নীচ দিয়ে বিদ্যুতের কেব্ল লাইন পাতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। আগামী বছরেই এই কাজে হাত দিতে চলেছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা।
এতে শহরগুলিকে যেমন আধুনিক ও সুন্দর চেহারা দেওয়া যাবে, তেমনই চওড়া করা যাবে ছোট-মাঝারি এই সব শহরের অলিগলি-রাস্তা। আখেরে কমবে যানজট। তার চেয়ে বড় কথা, এই পথে বিদ্যুৎ পরিষেবার অনেকটাই উন্নতি ঘটানো যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। এই প্রকল্পের জন্য খরচ হবে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। যার বেশির ভাগটাই বাজার থেকে ঋণ নেওয়া হবে। পুরো প্রকল্প শেষ হতে কমপক্ষে ৮ বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বণ্টন কর্তৃপক্ষ।
গত এক বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সব প্রশাসনিক বৈঠকেই উঠে এসেছে লো-ভোল্টেজ, বিদ্যুৎ চুরি-সহ বিভিন্ন সমস্যার কথা। ছোট শিল্পসংস্থা থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা, সকলেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সমাধানের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বিদ্যুৎকর্তাদের জানিয়ে দেন, ঘরে-ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার পাশাপাশি শহরে-গ্রামে বিদ্যুৎ পরিষেবার মানও বাড়াতে হবে।
রাজ্যে প্রশাসন সূত্রে খবর, মলয় দে-কে মাথায় রেখে পরিকাঠামো উন্নয়নের যে টাস্ক ফোর্স রয়েছে, সেখানেই মহকুমা শহর ও জেলা সদরগুলিতে মাটির নীচে কেব্ল লাইন পাতার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বোলপুর ও নবদ্বীপে পরীক্ষামূলক ভাবে বিদ্যুতে থাম তুলে দিয়ে মাটির নীচে কেব্ল লাইন পাতার কাজ কিছুটা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দিঘাতেও খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। আম্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এই জায়গাগুলিতে বিদ্যুৎ পরিষেবার মান উন্নত করতেই মাটির নীচে কেব্ল পাতছে বণ্টন সংস্থা। সল্টলেক ও রাজারহাট-নিউটাউনের মতো বিদ্যুৎ পরিষেবার অভিজ্ঞতা যাতে জেলা সদরের গ্রাহকেরাও পান, সেই চেষ্টাই শুরু হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
মাটির তলায় কেব্ল পাতলে সৌন্দর্যায়ন বা রাস্তা চওড়া করে নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর সুযোগ বাড়বে। কিন্তু বিদ্যুৎ পরিষেবার ক্ষেত্রে লাভ কী হবে? বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন অনেকগুলি সুবিধার কথা।
এক, গরমের সময় হঠাৎ বিদ্যুতের চহিদা বেড়ে গেলে ওভারহেড লাইনের থেকে মাটির নীচের কেব্ল সহজেই তা সামলে দিতে পারে। ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা অনেকটা কমবে। দুই, মাটির নীচ দিয়ে কেব্ল গেলে হুকিং তথা বিদ্যুৎ চুরি কমবে। তিন, ঝৃড়বৃষ্টি বা দুর্ঘটনায় খুঁটির ক্ষতি হলে বা তার ছিঁড়ে এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ার মতো বিপত্তি এড়ানো যাবে। চার, বন্ধ হবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট সংক্রান্ত দুর্ঘটনাও।
গোটা প্রকল্পের রূপরেখা তৈরির কাজ শুরু করেছেন বণ্টন সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারেরা। সূত্রের খবর, আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের ‘ডিটেলড প্রোজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি হয়ে যাবে। গুরুত্ব অনুযায়ী ধাপে ধাপে মহকুমা শহর ও জেলা সদর দফতরগুলিকে বেছে নিয়ে কেব্ল পাতার কাজ শুরু হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy