Advertisement
১৯ মে ২০২৪
ইউনিয়ন বন্ধ করলেন মদন

ফের পিজি, রোগীমৃত্যু ঘিরে আক্রান্ত দুই নার্স

মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতাল ঘুরে যাওয়ার পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। ফের তোলপাড় শুরু হল এসএসকেএমে। এ বারও ঘটনাস্থল সেই ম্যাকেঞ্জি ওয়ার্ড। বুধবার সকালে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি এক রোগীর মৃত্যুর পরে তাঁর বাড়ির লোকেরা কর্তব্যরত দুই নার্সের উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:১৭
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতাল ঘুরে যাওয়ার পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। ফের তোলপাড় শুরু হল এসএসকেএমে। এ বারও ঘটনাস্থল সেই ম্যাকেঞ্জি ওয়ার্ড। বুধবার সকালে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি এক রোগীর মৃত্যুর পরে তাঁর বাড়ির লোকেরা কর্তব্যরত দুই নার্সের উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। অভিযোগ, পা থেকে জুতো খুলে ওয়ার্ডের নার্সদের মারতে শুরু করেন তাঁরা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের অধিকর্তা ও সুপারের ঘরের সামনে দফায় দফায় বিক্ষোভও হয়। নার্সদের সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশও। পুলিশ এই ঘটনায় সঙ্গীতা সাউ নামে মৃতের এক আত্মীয়াকে গ্রেফতার করেছে।

রবিবার রাত থেকেই উত্তপ্ত রয়েছে এসএসকেএম। এক রোগীর মৃত্যুর পরে তাঁর বাড়ির লোকজন এবং হাসপাতালের কিছু অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর সঙ্গে গোলমালে জড়িয়ে পড়েন জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। মারমুখী দু’পক্ষকে সামলাতে সারা রাত হাসপাতালে পুলিশ ছিল। সোমবারেও অধিকর্তা মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়কে বহুক্ষণ ঘেরাও করে রেখেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। দুপুরে হাসপাতালে পৌঁছে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ববান হওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তার পরেও পরিস্থিতি পুরো স্বাভাবিক হয়নি।

এ দিকে, এ দিনই আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে হাসপাতালের অধিকর্তাকে চিঠি লিখে এসএসকেএমে আপাতত তৃণমূল ইউনিয়নের ঝাঁপ গোটানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন সারদা কাণ্ডে ধৃত মদন মিত্র। তৃণমূলকর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগের প্রতিবাদ করে মদন লিখেছেন, হাসপাতাল চত্বর থেকে ইউনিয়নের অফিস ঘরটি তুলে দেওয়ার ব্যাপারে অনুগামীদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তাঁরাই ওই ঘরের চাবি অধিকর্তার কাছে জমা দেবেন।

স্বাস্থ্যকর্তারা অবশ্য এ দিনের গোলমালকে কিছুটা প্ররোচনামূলক বলেই মনে করছেন। তাঁদের বক্তব্য, রবিবার রাতের গোলমালের পরে জুনিয়র ডাক্তারদের একটা অংশ কর্মবিরতির পথে হাঁটতে চেয়েছিলেন। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতালে পৌঁছে কর্তৃপক্ষ এবং ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলার পরে আন্দোলন কার্যত পুরোটাই স্তিমিত হয়ে যায়। দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘নার্সদের উপরে চড়াও হওয়ার ঘটনা খুবই নিন্দনীয়, সন্দেহ নেই। কিন্তু রোগীর মৃত্যুর পরে বহু ক্ষেত্রেই তাঁদের পরিবারের লোকের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। খুবই ধৈর্য ধরে, সংবেদনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। তার পরেও কিছু ঘটে থাকলে অবশ্যই তার প্রতিবাদ করা দরকার। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ এখন ছোটখাটো ঘটনাকেও ইন্ধন দিয়ে বড় করতে চাইছেন। নার্সদেরও উত্তেজিত করছেন তাঁরাই। এটা বরদাস্ত করা হবে না।’’

চেতলার বাসিন্দা শঙ্কর সাউ (৪৮) গত ২৯ তারিখে স্নায়ুঘটিত কিছু সমস্যা নিয়ে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। নার্সদের দাবি, গোড়া থেকেই রোগীর অবস্থা খারাপ ছিল। সেটা বাড়ির লোককে জানানোও হয়েছিল। এ দিন এমআরআই করিয়ে আসার পরে তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে। একটি ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরেই নেতিয়ে পড়েন শঙ্কর। তখনই তাঁর বাড়ির লোকেরা ওয়ার্ডের দুই নার্সকে মারতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। আক্রান্ত নার্স সঞ্চয়িতা জানা বলেন, ‘‘আমার এবং বিএসসি নার্সিংয়ের এক ছাত্রীর বুকে-পিঠে-পেটে মারতে শুরু করেন এক মহিলা। রাউন্ডে থাকা ডাক্তারেরা চিৎকার করে পুলিশে খবর দেওয়ার কথা বলেন। পুলিশ ফাঁড়িতে ফোন করা হয়। পুলিশ এসে ওই মহিলাকে গ্রেফতার করে। আমরা সকলেই আতঙ্কিত।’’

রবিবার রাতে চিকিৎসকদের উপরে হামলার ঘটনায় রোগীর বাড়ির লোককে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সঞ্জয় দাস ওরফে সঞ্জুর বিরুদ্ধে। প্রশাসনিক ভবনের উল্টো দিকে ইউনিয়নের ঘরটি দালালদের আখড়া বলে অভিযোগ তুলেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। জানিয়েছিলেন, সঞ্জু আদতে মদন মিত্রের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। হাসপাতালে দালালদের নেতা তিনিই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে সঞ্জু সহ তিন জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ।

এ দিন অধিকর্তাকে লেখা চিঠিতে মদনের অভিযোগের তির সরাসরি জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। নিজেকে এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের পাশাপাশি অনুব্রতী ইউনিয়ন, নার্সদের ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে চিহ্নিত করে মদনের দাবি, জুনিয়র ডাক্তারদের একটা অংশ রোগীর বাড়ির লোকের কাছ থেকে চিকিৎসার বিনিময়ে মোটা টাকা আদায় করেন। এ ব্যাপারে শাসক দলের কোনও কর্মী-সমর্থকেরই যোগ নেই। তাঁর প্রস্তাব, ‘‘জুনিয়র ডাক্তারেরা যে ভাবে বিলাসে দিন কাটান, তার টাকার জোগান কী ভাবে হয়, তা জানার জন্য উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গড়া হোক। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরিদর্শনের অভাবেই জুনিয়র ডাক্তারদের অনেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।’’ অধিকর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, এখনও এমন কোনও চিঠি তাঁর হাতে আসেনি।

ঘনিষ্ঠ মহলে মদন জানিয়েছেন, আপাতত মাস তিনেক হাসপাতালে ইউনিয়নের সমস্ত কাজতর্ম বন্ধ থাকবে। তার পরে এ ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hospital Nurse Patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE