Advertisement
E-Paper

৭ অস্ত্রোপচারের পরেও থেমে গেল জীবনযুদ্ধ

শেষ হয়ে গেল ৫৫ দিনের লড়াই! ৩ জুন রাত থেকে যে লড়াই শুরু হয়েছিল দুর্গাপুরের দ্য মিশন হাসপাতালে, তা শেষ হয়ে গেল সোমবার সকালে। হাসপাতালের দাবি, তাদের তরফে সব রকম চেষ্টা করা হয়েছিল। এর মাঝে সাত-সাতটা অস্ত্রোপচারের ধাক্কা সামলাতে হয়েছে তাঁকে। তার পরেও বাঁচলেন না দুবরাজপুর থানার টাউন ওসি অমিত চক্রবর্তী। মৃত্যুর কারণ হিসেবে হাসপাতালের তরফ থেকে বলা হয়েছে, পেটে বোমার আঘাতে মারাত্মক ক্ষত তৈরি হওয়া এবং তার জেরে ‘সিভিয়ার সেপ্টিসেমিয়া’।

সুব্রত সীট ও দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩১
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ শ্রদ্ধা অমিত চক্রবর্তীকে। সিউড়ির পুলিশ লাইনে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ শ্রদ্ধা অমিত চক্রবর্তীকে। সিউড়ির পুলিশ লাইনে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ হয়ে গেল ৫৫ দিনের লড়াই! ৩ জুন রাত থেকে যে লড়াই শুরু হয়েছিল দুর্গাপুরের দ্য মিশন হাসপাতালে, তা শেষ হয়ে গেল সোমবার সকালে। হাসপাতালের দাবি, তাদের তরফে সব রকম চেষ্টা করা হয়েছিল। এর মাঝে সাত-সাতটা অস্ত্রোপচারের ধাক্কা সামলাতে হয়েছে তাঁকে। তার পরেও বাঁচলেন না দুবরাজপুর থানার টাউন ওসি অমিত চক্রবর্তী। মৃত্যুর কারণ হিসেবে হাসপাতালের তরফ থেকে বলা হয়েছে, পেটে বোমার আঘাতে মারাত্মক ক্ষত তৈরি হওয়া এবং তার জেরে ‘সিভিয়ার সেপ্টিসেমিয়া’।

অমিতের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা দুর্গাপুরের দ্য মিশন হাসপাতালের ডাক্তার ভাস্কর ধরের কথায়, “এই ক’টা দিন চিকিৎসক জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় কাটিয়েছি। আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু, পারলাম না!”

৩ জুন দুবরাজপুরের গোপালপুর গ্রামে তৃণমূল এবং সিপিএমের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে বোমার আঘাতে মারাত্মক জখম হন বত্রিশ বছরের এই সাব-ইনস্পেক্টর। সহকর্মীরা তাঁর পেটে গামছা বেঁধে নিয়ে যান দুবরাজপুরের একটি নার্সিংহোমে। বোমার ঘায়ে অমিতের অন্ত্র ও নাড়িভুঁড়ি ফেটে বাইরে বেরিয়ে এসেছিল। বাঁ দিকে পাঁজরের নীচ থেকে পেটের নীচ পর্যন্ত মাংস বলে কোনও বস্তু কার্যত ছিল না। নার্সিংহোমে কোনও রকমে গজ ভরে অন্ত্র ঠেলে শরীরের ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তাতেও রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। পেটে গামছা বেঁধেই অমিতকে নিয়ে যাওয়া হয় মিশন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে।

রাত তখন সাড়ে ১১টা। যমে মানুষে লড়াইয়ের সেই শুরু।

ওই রাতেই এক দফা অস্ত্রোপচার করে বৃহদন্ত্র ও ক্ষুদ্রান্ত্রের বিভিন্ন অংশ জোড়া হয়। কিন্তু, ক্ষত এতটাই ছিল যে ঠিক ভাবে জোড়া লাগানো যাচ্ছিল না। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দফায় দফায় অস্ত্রোপচার করেও ওই সব অংশ জোড়া লাগানো যায়নি। কখনও ক্ষুদ্রান্ত্রের অংশ ফেটে যায়। সেটা ঠিক করতে গিয়ে দেখা গেল, বৃহদন্ত্রের অংশবিশেষ ফেটে গিয়েছে। উরু থেকে মাংস কেটে ‘গ্রাফটিং’-এর চেষ্টাও করা হয়েছিল। তা-ও পুরো করা যায়নি। বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার কথায়, “অমিত কিন্তু মাঝে কিছুটা সুস্থ হয়েছিল। কথা বলছিল। হাসপাতালে হাঁটাচলা করছিল বলেও শুনেছি। হঠাৎ কী হয়ে গেল, বুঝতে পারছি না।” তবে, সপ্তাহখানেক আগে থেকে ফের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন অমিত। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সপ্তম অস্ত্রোপচারের পরে এত রক্তক্ষরণ শুরু হয় যে, অমিত কোমায় চলে যান। ধীরে ধীরে গোটা শরীরে সেপ্টিসেমিয়া ছড়িয়ে পড়ে। আর যুঝতে পারেননি অমিত। রবিবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সোমবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ মারা যান দুবরাজপুরের ‘টাউন বাবু’ অমিত। ৫৫ দিনের লড়াইও শেষ হল।

অন্য দিকে, তখন আর এক লড়াই চলছিল। হাসপাতালের বিল মেটানোর লড়াই। হাসপাতালের এত দিনের চিকিৎসা বাবদ খরচ কে মেটাবে, তা নিয়ে ধন্দ শুরু হয়েছিল বহু আগেই। শৈশবেই বাবা-মাকে হারানো অমিতকে মানুষ করেছেন যাঁরা সেই পিসিমা, পিসেমশাইয়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে ভিটেমাটি বিক্রির উপক্রম হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বীরভূম জেলা পুলিশ। প্রথমে দুবরাজপুর থানার পুলিশকর্মীরা চাঁদা তোলেন। পরে জেলা পুলিশকর্তারাও সাহায্য করেন। বীরভূমের বাকি থানাগুলিকেও চাঁদা তুলতে বলা হয়। মাঝে বিল ১০ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যেতে বীরভূমের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তিন লক্ষ টাকা জমা দেন।

মিশন হাসপাতালের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক প্রবীর মুখোপাধ্যায় জানান, মেডিক্লেম ও বীরভূমের পুলিশের কাছ থেকে তাঁরা এখন পর্যন্ত পেয়েছেন প্রায় ১১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, “বাকি বিল কে মেটাবে জানি না। পরিবারের সেই আর্থিক সামর্থ নেই। পুলিশ সুপারকে ফোন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, দেখছি।” অমিতের পিসি শেফালি মুখোপাধ্যায়ও সংশয়ে, চিকিৎসার টাকা রাজ্য সরকার আদৌ দেবে কি না। তবে, পুলিশ সুপার বলেছেন, “বাকি টাকার ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত মিলেছে। কিন্তু, টাকা এখনও হাতে এসে পৌঁছয়নি। তবে, আমাদের তরফ থেকে যা যা করার দরকার করছি। হাসপাতালকেও বিলের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখার জন্য বলেছি।”

subrata shit dayal sengupta amit chakrabarty murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy