Advertisement
E-Paper

অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করুন! দুর্গাপুরের ঘটনায় সমাজমাধ্যমে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা মমতাকে

শনিবার সন্ধ্যায় ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝির সচিবালয় সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫ ২১:১৬
Odisha Chief Minister Mohan Charan Majhi\\\\\\\'s office has posted a post on social media targeting Chief Minister Mamata Banerjee over the rape of a medical student in Durgapur

(বাঁ দিকে) বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে গণধর্ষিতা হয়েছেন ডাক্তারির এক পড়ুয়া ছাত্রী। তিনি আদতে ওড়িশার বাসিন্দা। ওই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই সরগরম রাজ্য রাজনীতি। আর সেই আবহেই শনিবার সন্ধ্যায় ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝির সচিবালয় সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছে। পাল্টা আক্রমণে না-গেলেও, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অপরাজিতা বিল নিয়ে কী মতামত জানিয়েছিলেন, তা আবার প্রকাশ্যে এনেছে বাংলার শাসকদল।

ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করা এক বার্তায় মমতাকে ট্যাগ করে লেখা হয়েছে, ‘দুর্গাপুরে এক ওড়িয়া ছাত্রীর উপর সংঘটিত নৃশংস গণধর্ষণের ঘটনায় গভীর বেদনা প্রকাশ করেছেন এবং কঠোর ভাবে নিন্দা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে যাতে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ওড়িশার সিনিয়র আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন। নির্যাতিতার পরিবারকে সর্বতো ভাবে সহায়তা ও সমর্থন দেবে ওড়িশা সরকার।’

ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের এমন পোস্টের জবাবে পাল্টা এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে সর্বভারতীয় তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, ‘ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কঠোর নিন্দা এবং কঠিনতম আইন প্রয়োজন। অথচ নরেন্দ্র মোদীর সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্বের বদলে বিলম্বই বেছে নেওয়া হয়েছে। এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে — অপরাজিতা অ্যান্টি-রেপ বিল প্রস্তাবিত হওয়ার পরও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তা আইনে রূপ দেওয়ার জন্য কোনও পদক্ষেপ করেনি। এটি এক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যার পরিণতি ভয়াবহ।’ সেই বিবৃতিতে আরও লেখা হয়, ‘যখন ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা রাষ্ট্র নিজে পদক্ষেপ করতে অস্বীকার করে, তখন সেটি অপরাধীদের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠায়, তারা যেন নির্বিঘ্নে নৃশংসতা চালাতে পারে। এই নীরব সমর্থন, যা কার্যত সম্মতির সমান, সমাজের নিকৃষ্টতম মানুষদের সাহস জুগিয়েছে আমাদের কন্যা, বোন ও মায়েদের উপর নির্দয়ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে। যে দল মুখে নারী সুরক্ষার বুলি আওড়ায়, অথচ প্রকৃত সংস্কারমূলক পদক্ষেপ আটকে দেয়— তাদের নৈতিক দেউলিয়াত্ব আজ সম্পূর্ণ উন্মোচিত হয়েছে।’

পাশাপাশি, অভিষেকের বক্তৃতার একটি অংশও পোস্ট করা হয়েছে। যেখানে তিনি বলছেন, ‘‘আমরা সে দিনও বলেছিলাম যে, দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। আমাদের রাজ্যের সরকার মন্ত্রিসভায় পাশ করিয়ে, বিধানসভায় পাশ করিয়ে, অপারজিতা বিল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়েছিল। যাতে এমন নারকীয় ঘটনার কোনও পুনরাবৃত্তি বাংলা-সহ দেশের মাটিতে কোথাও না ঘটে। আজ এক বছর হয়ে গেল, সেই বিলে অনুমোদন এখনও পাওয়া যায়নি।’’ প্রসঙ্গত অভিষেক এই বক্তৃতা করেছিলেন, চলতি বছরের ২৮ অগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে। আর তার পরেই জানা গিয়েছিল, দেশে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় কঠিন শাস্তি দেওয়ার আইন থাকা সত্ত্বেও ফের নতুন করে আইন তৈরির কেন প্রয়োজন হল? সেই বিষয়টি জানতে চেয়ে রাষ্ট্রপতি ভবন বিলটি কলকাতার রাজভবনে ফেরত পাঠিয়েছে।

তবে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর সমাজমাধ্যমে এহেন পোস্ট করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে বার্তা পাঠানোকে রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে দেখছেন বাংলার রাজনীতির কারবারিরা। শনিবার রাজ্য বিজেপির কার্যালয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের সবচেয়ে বড় ইস্যু হিসাবে নারী নির্যাতন এবং নারী অসুরক্ষার কথা তুলে ধরেছেন। তার পরেই ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর এহেন পোস্টকে তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে জুড়ে দেখছেন তাঁরা। যেখানে বাংলায় নারী সুরক্ষা নিয়ে কৌশলে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন প্রতিবেশী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাই পাল্টা কৌশল হিসাবে ফের অপরাজিতা বিলের কথা উল্লেখ করে নারী সুরক্ষা নিয়ে বিজেপির সদিচ্ছা প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বাংলার শাসকদল।

অন্য দিকে, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতার পাশাপাশি, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে আবার তাঁর দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশন। সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করা এক বিবৃতিতে কমিশন বলেছে, ‘জাতীয় মহিলা কমিশন পশ্চিমবঙ্গের একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পদক্ষেপ করেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ওড়িশার বাসিন্দা ডাক্তারির এক ছাত্রীর উপর দুর্গাপুরে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কমিশনের অধ্যক্ষা বিজয়া রহাতকর পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিজিকে চিঠি লিখে অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতার, দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্ত, এবং নির্যাতিতার জন্য চিকিৎসা ও মানসিক সহায়তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ‘এনসিডব্লিউ সদস্যা অর্চনা মজুমদারকে দুর্গাপুরে গিয়ে নির্যাতিতার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও পুলিশের পদক্ষেপ পর্যালোচনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ওই ঘটনা সংক্রান্ত একটি পোস্ট শেয়ার করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তরফে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে বলা হয়, ‘দুর্গাপুরে ওড়িশার এক মেডিক্যাল ছাত্রীর উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই— অপরাধীরা কোনও ভাবেই শাস্তি এড়াতে পারবে না। নির্যাতিতার যন্ত্রণা যেমন ওডিশার, তেমনই আমাদেরও। অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি আনতে আমরা প্রয়াসে কোনও ত্রুটিই রাখব না।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘নির্যাতিতা বর্তমানে সুস্থতার পথে এবং তাঁর পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এই ঘটনার বিষয়ে কেউ যেন কোনও যাচাই না-করা তথ্য প্রচার না করেন, সেই অনুরোধ জানাচ্ছি। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে শূন্য সহনশীলতার নীতি অনুসরণে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ অটল ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

CM Mamata Banerjee Mohan Charan Majhi Durgapur Gangrape Case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy