E-Paper

পঞ্চায়েতে জয়ীদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি, বিজ্ঞপ্তি আটকে কেন, অভিযোগের বহরে অস্বস্তি প্রশাসনে

বিরোধীদের বক্তব্য, ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দলকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। এ বারের ভোটে সেই অভিযোগ উঠেছে বিডিও-দের একংশের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৩ ০৭:২১
State Election Commission.

রাজ্য নির্বাচন কমিশন। —ফাইল চিত্র।

পঞ্চায়েত ভোটের তিনটি স্তরে জয়ী প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করে ফেলেছে সব জেলা। রীতি অনুযায়ী, এর পরেই গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে তা প্রকাশ পাওয়ার কথা। কিন্তু তা কবে হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বক্তব্য, বিশেষ করে ভোট গণনায় ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক বা বিডিও-দের একটা বড় অংশের ভূমিকা যে ভাবে অভিযোগের কেন্দ্রে চলে এসেছে, তাতে অস্বস্তিতে প্রশাসনিক কর্তারা।

কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়েছে, রাজ্যের ভোটে এবং গণনা-পর্বে হিংসা, অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা হলেও, বিষয়টি এই মামলার রায়ের উপরে নির্ভর করবে। এরই শুনানি হওয়ার কথা ২০ জুলাই। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সব কারণেই দোলাচল তৈরি হয়েছে আধিকারিক মহলে।

রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রের বক্তব্য, ভোট-ফলাফলের চূড়ান্ত তালিকা এ বার তৈরি করার কথা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনগুলির। সেই তালিকা তারা পাঠাবে পঞ্চায়েত দফতরে। তার ভিত্তিতে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে পঞ্চায়েত দফতর। বেশির ভাগ জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, তারা জয়ী প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা পঞ্চায়েত দফতরে জমা করে দিয়েছে। ফলে তাদের দিক থেকে করণীয় আর কিছু বাকি নেই। পঞ্চায়েত দফতরের একটি সূত্রের বক্তব্য, ‘‘সব জেলার থেকে ওই তালিকা না-পাওয়া গেলে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা সম্ভব নয়। একটি করে জেলার ফল ধরে কখনও এমন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পায় না।” এখানেই প্রশ্ন উঠছে, ভোটের ফলাফলের পরে প্রায় ৭ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও এই কাজ কেন সম্পূর্ণ হল না!

বিরোধীদের বক্তব্য, ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দলকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। এ বারের ভোটে সেই অভিযোগ উঠেছে বিডিও-দের একংশের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে, গণনা-পর্বে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা ইতিমধ্যেই আতশকাচের তলায়। আদালতে হাজিরাও দিতে হয়েছে তাঁদের কয়েক জনকে। গণনা আধিকারিক এবং বিডিও-দের বড় অংশের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সরাসরিই আক্রমণ করেছেন, ‘‘যে বিডিও-রা ভোট লুট করিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে নিয়োগ পেয়েছেন। পিএসসি-তে অনিয়ম হয়েছে, টাকা-পয়সা দিয়ে নিয়োগ হয়েছে। অন্য সরকার এলেই এই দুর্নীতির তদন্ত হবে, ওঁরা জানেন। তাই নিজেদের ধরা পড়ে যাওয়া আটকাতে এই জালিয়াত বিডিও-রা শাসক দলের হয়ে অন্যায় করেছেন।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘রাজ্য নির্বাচন কমিশন, পুলিশ-প্রশাসন, তৃণমূল ও দুষ্কৃতী বাহিনী মিলে সিন্ডিকেট কাজ করেছে। ভোট লুট হয়েছে, গণনায় ডাকাতি হয়েছে, শংসাপত্রে ভূতুড়ে কাণ্ড হয়েছে। বহু ক্ষেত্রে গণনা-পর্বে জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিডিও-রা।’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর তোপ, ‘‘শাসক দল এখন জেলাশাসকের ক্ষমতা দিয়েছে বিডিও-দের এবং পুলিশ সুপারের ক্ষমতা দিয়েছে থানার আইসি-দের। নানা জায়গায় বিডিও, আইসি-রা দায়িত্ব নিয়েছেন বিরোধীদের হারানো ও শাসক দলকে জেতানোর।’’ শাসক দলের তরফে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘বিডিও-দের সম্পর্কে ভিত্তিহীন এবং পরিকল্পিত অভিযোগ করা হচ্ছে। আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রাপ্য রাজ্যের টাকা আটকে দিয়ে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভয় দেখিয়েও মানুষের সমর্থন আটকানো যায়নি। তাই হতাশা থেকে এই সব তত্ত্বে সান্ত্বনা খুঁজতে হচ্ছে!’’

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বিডিও এবং প্রশাসনের একাংশকে নিয়ে নানা অভিযোগে অস্বস্তি রয়েছে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তাদের মধ্যেও। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা জানাচ্ছেন, স্থানীয় ভোটের সময়ে পুলিশ এবং সাধারণ প্রশাসন থাকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে। ফলে, তাদের নিয়ন্ত্রণে থেকেও বিডিও-দের একাংশের বিরুদ্ধে কী ভাবে ভূরি ভূরি অভিযোগ উঠছে, তা নিয়ে প্রশ্ন প্রশাসনিক কর্তাদেরও ভাবাচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Panchayat Election 2023 BDO

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy