Advertisement
E-Paper

জমি দিয়ে স্কুল গড়ে মার খেলেন বৃদ্ধ

নামে যে অনেক কিছু যায়-আসে, হাড়ে হাড়ে টের পেলেন মহম্মদ মহসিন! নিজের দানের জমিতে গড়ে ওঠা প্রাথমিক স্কুলের কাছে গত মাসের গোড়ায় বছর সত্তরের ওই বৃদ্ধকে রাস্তায় ফেলে এমন পেটানো হয় যে ব্যথা এখনও মালুম হচ্ছে তাঁর।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:১৩
মহম্মদ মহসিন। ছবি: মোহন দাস।

মহম্মদ মহসিন। ছবি: মোহন দাস।

নামে যে অনেক কিছু যায়-আসে, হাড়ে হাড়ে টের পেলেন মহম্মদ মহসিন!

নিজের দানের জমিতে গড়ে ওঠা প্রাথমিক স্কুলের কাছে গত মাসের গোড়ায় বছর সত্তরের ওই বৃদ্ধকে রাস্তায় ফেলে এমন পেটানো হয় যে ব্যথা এখনও মালুম হচ্ছে তাঁর। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে প্রহৃত হন ছেলে। জখম হন স্কুলের এক শিক্ষকও।

হুগলির খানাকুল-২ ব্লকের পোল গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ মহসিন নামে ওই বৃদ্ধের ‘অপরাধ’, তাঁর প্রস্তাবমতো শিক্ষাব্রতী হাজি মহম্মদ মহসিনের নামে স্কুলের নামকরণ করেছে প্রশাসন। আর সেই কারণেই জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সাইনা সুলতানা লোক লাগিয়ে তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। সাইনা শাসকদলেরই নেত্রী। পাশের ঘোষপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি।

পুলিশ এবং বিডিও-র কাছে দায়ের করা অভিযোগে বৃদ্ধ জানিয়েছেন, সাইনা চেয়েছিলেন নিজের শ্বশুরমশাইয়ের নামে স্কুলের নামকরণ হোক। কিন্তু তা না-হওয়াতেই মারধর। সাইনা অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘ওঁকে মারধরের কোনও ঘটনা আমার অন্তত জানা নেই। আমি শ্বশুরের নামে ওই স্কুলের নামকরণের প্রস্তাব দিইনি। স্কুলের নামটা আমারই দেওয়া।’’

দলের নেত্রী এই দাবি করলেও আরামবাগ মহকুমার শাসকদলের এক বিধায়ক মেনে নিয়েছেন অভিযোগ গুরুতর। তিনি বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় দলের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে। জমিদাতা বৃদ্ধকে কোথায় সংবর্ধনা দেওয়া হবে তা নয়, মারধর করা হল। দলীয় স্তরে তদন্ত করে ওই কর্মাধক্ষ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানাব।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত জানান, আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের পক্ষ থেকেও তদন্ত হচ্ছে। বিডিও অমর বিশ্বাস বলেন, ‘‘বৃদ্ধ জমিটা দিয়েছেন বলেই গ্রামে স্কুলটা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ওঁর উপরই হামলা, অনভিপ্রেত ঘটনা। পুলিশ তদন্ত করছে।’’

ওই গ্রামে একটি প্রাথমিক স্কুলের দাবি অনেক দিনের। কারণ, গ্রামের শিশুদের দূরের প্রাথমিক স্কুলে পড়তে যেতে হচ্ছিল। প্রশাসন সেই দাবি বিবেচনা করলেও মিলছিল না উপযুক্ত জমি। চলতি বছরের গোড়ায় মহম্মদ মহসিন নিজের পাঁচ কাঠা জমি দান করায় স্কুল তৈরিতে বাধা কাটে। গড়ে ওঠে স্কুলভবন। মাস কয়েক আগে স্কুলটি চালুও হয়। গোলমাল হয় গত মাসে। মহসিনকে হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয় বাসিন্দারা। বৃদ্ধ বলেন, ‘‘সাইনা স্কুলের নামকরণ নিয়ে আপত্তি তোলায় আমি বলেছিলাম, জমি দিলাম আমি। আর তোমার শ্বশুরের নামে স্কুল হবে? এটা হতে পারে না। সেটাই কাল হল। হাতে এত ব্যথা যে এখনও সোজা করতে পারি না। এখনও পদে পদে হুমকি শুনতে হচ্ছে।’’ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ওই প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘মহসিনকে মারধর করা হচ্ছে দেখে আমি ছুটে যাই। ওঁকে বাঁচাতে গিয়ে আমার হাতেও আঘাত লাগে। উনি স্কুলের জন্য জমি দিয়েছেন। কিন্তু যে ভাবে ওঁকে হেনস্থা করা হল, ভাবতে পারছি না।’’

গোটা ঘটনায় গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ। তাঁরা অবিলম্বে প্রতিকার দাবি করেছেন।

Md. MahaSin beaten up
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy