Advertisement
E-Paper

নায়কের সঙ্গে সিনেমার গপ্পো বাঙালি বন্দিদের

হাসপাতালে ‘সাহেব’-এর বেড ঘিরে দাঁড়িয়ে কয়েক জন। কথা চলছে টুকটাক। ‘‘টিভিতে ‘দাদার কীর্তি’ দেখেছি। সেই আপনাকে যে জেলে দেখতে পাব, বিশ্বাসই হচ্ছে না!’’

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩১

হাসপাতালে ‘সাহেব’-এর বেড ঘিরে দাঁড়িয়ে কয়েক জন। কথা চলছে টুকটাক।

‘‘টিভিতে ‘দাদার কীর্তি’ দেখেছি। সেই আপনাকে যে জেলে দেখতে পাব, বিশ্বাসই হচ্ছে না!’’ উঠল ‘গুরুদক্ষিণা’র কথাও। ‘হেবি হেবি’ সব গান ওই বইটায়...! এত ক্ষণে একটু ধাতস্থ লাগছিল নায়ককে। রিল নয়, রিয়েল লাইফে যিনি আপাতত ভুবনেশ্বরের ঝাড়পদা জেলের বিচারাধীন বন্দি।

শনিবার সকালে ওই জেলেরই আরও কয়েক জন বাঙালি বন্দি দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁকে ঘিরে। ঝাড়পদায় তাপস পালের আসার খবর শুনেই যাঁরা সকাল সকাল চলে এসেছেন জেল হাসপাতালে। জেল-সূত্রেই পাওয়া গেল তাঁদের কথোপকথনের কয়েক টুকরো।

ঝাড়পদা জেলের সুপার রবীন্দ্রনাথ সোঁয়াই শনিবার সন্ধেয় বলছিলেন, জনা ২০-২৫ বাঙালি বন্দি রয়েছেন এই জেলে। শুক্রবার রোজ ভ্যালি মামলায় জেল হেফাজত হওয়ার পরে তাপস ঝাড়পদায় এসেছেন শুনেই তাঁকে দেখার বাসনা জেগেছিল অনেকের। কিন্তু বাদ সাধে নায়ক-সাংসদের অসুস্থতা।

শুক্রবার ঝাড়পদার ফটক পর্যন্ত তাপসকে এগিয়ে দিয়েছিলেন স্ত্রী নন্দিনী। জেলে ঢোকার পরেই বন্দিকে প্রথম যে সেলে রাখা হয়, তাকে বলে ‘আমদানি সেল’। ঝাড়পদা জেলের সেই ১১ নম্বর আমদানি সেলে ঢোকার পরে একজোড়া কম্বল, একটি থালা আর লোটা দেওয়া হয় তাপসকে। আসে রাতের খাবার ডালমা ও রুটি। কিন্তু তাঁর খাওয়া আর হয়নি। অসুস্থ বোধ করতে থাকেন তৃণমূল সাংসদ। জেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে দেখা যায়, উদ্বেগে রক্তচাপ ওঠানামা করছে তাঁর।

রাতে জেল হাসপাতালেই তাপসকে রাখা ঠিক করেন মেডিক্যাল অফিসারেরা। শনিবারও তিনি হাসপাতালে রয়েছেন। জেল সুপারের কথায়, ‘‘ওঁর অবস্থা এখন স্থিতিশীল। মনে হচ্ছে, আস্তে আস্তে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছেন।’’ সকালে নন্দিনী এসে কিছু শুকনো খাবার দিয়ে গিয়েছিলেন। আপত্তি করেননি জেল কর্তৃপক্ষ। শনিবার জেলে নিরামিষ রান্না হয়। অন্য কয়েদিদের মতো ভাত-ডাল-নিরামিষ সব্জি খেয়েছেন তাপসও। দুপুরে তাপস বলেন, তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তখন বিকেল ৪টে নাগাদ জেল থেকে বের করে তাঁকে ভুবনেশ্বরের সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ইসিজি এবং ইকো করা হয় তাঁর। তাতে অবশ্য নতুন কোনও জটিলতা ধরা পড়েনি। ঘণ্টাখানেক পরে তাপসকে আবার ফিরিয়ে আনা হয় জেলে। সুপার জানান, জেলের ডাক্তারদের সবুজ সঙ্কেত মিললে তাঁকে হাসপাতাল থেকে নির্দিষ্ট সেলে নিয়ে যাওয়া হবে।

তবে আদালত নির্দেশ না দিলে ধৃত সাংসদের জন্য জেলে কোনও বিশেষ বন্দোবস্ত করা হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন সুপার। রোজ ভ্যালি মামলায় ধৃত তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই মুহূর্তে ভুবনেশ্বরে সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন। জেল হেফাজত হলে সুদীপেরও ঠিকানা হতে পারে

ঝাড়পদা। সে ক্ষেত্রে কী করণীয়? জেল সুপার বললেন, ‘‘আদালত বিশেষ কিছু করতে বললে, তা পালন করা হবে। নির্দেশ না থাকলে সবার জন্য একই ব্যবস্থা। জেল ম্যানুয়ালে ভিআইপি বলে কিছু হয় না।’’

জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিচ্ছেন, তাপসের আগে থেকেই ওড়িশার বেশ কিছু ওজনদার রাজনীতিকের ঠিকানা ঝাড়পদা। ওই রাজ্যের গ্রিন ইন্ডিয়া চিটফান্ড মামলায় ধৃত বিজেডি সাংসদ রামচন্দ্র হাঁসদা, বিজেপির প্রাক্তন বিধায়ক হিতেশ বগরতি, বিজেডির আরও এক বিধায়ক সুবর্ণ নায়েক গত কয়েক মাস ধরে ঝাড়পদায় রয়েছেন। ‘‘ওই সাংসদ-বিধায়কদের এখানে কোনও অভিযোগ নেই। জেনে নিতে পারেন’’— বললেন এক জেলকর্তা।

তবে এই জেলের ‘অতিথি’দের মধ্যে রয়েছে ওড়িশার কুখ্যাত কিছু অপরাধীও। রাজা আচার্য, হায়দর ও তার গোষ্ঠী, ভরত সামন্ত, বিক্রম মল্লিক, মিলি পণ্ডাদের মতো সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা রয়েছে এখানেই। কটকের নামী জুডো কোচ বিরিঞ্চি দাসকে খুন করে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত রাজা আচার্য। এর আগেও তার নামে খুন-রাহাজানির বহু মামলা ছিল। হায়দর ও তার লোকেরা বন্দি রয়েছে রশ্মিরঞ্জন মহাপাত্র নামে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে খুনের দায়ে। বিক্রম মল্লিক তো একটা ছিঁচকে মামলায় জেলে গিয়ে সেখানকার ওয়ার্ডেন মানসরঞ্জন মল্লিককে খুন করে দিয়েছে। এ ছাড়া, ঝাড়পদায় রয়েছেন মাওবাদী নেতা সব্যসাচী পণ্ডার স্ত্রী মিলি পণ্ডা। যাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ-তে মামলা চলছে।

আপাতত ৬৪০ জন বন্দি রাখার ব্যবস্থা আছে ঝাড়পদায়। এর মধ্যে শ’খানেক সাজাপ্রাপ্ত, ৫০০ বিচারাধীন। এক কর্তা বললেন, ‘‘আরও অন্তত তিন ডজন অভিযুক্তকে রাখা সম্ভব। তার বেশি হলে অন্য জেলে নিয়ে যেতে হবে।’’ তবে সিবিআই সূত্র বলছে, আপাতত ঝাড়পদাই যথেষ্ট। জেল সুপার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘অপরাধী যেমনই হোক না কেন, নিয়ম মানতেই হবে।’’

Tapas Paul Jail Convicts
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy