বাতিল বৈদ্যুতিন জিনিসপত্রের স্তূপে নাড়াঘাঁটার সময়ে বিস্ফোরণে প্রাণ গেল এক গুদাম-কর্মীর। জখম হলেন আরও তিন জন। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে ওই বিস্ফোরণস্থল থেকে অ্যালুমিনিয়মের কৌটো ব্যবহার করে বানানো দু’টি আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) উদ্ধার করেছে সিআইডি-র বম্ব স্কোয়াড। গ্রেফতার করা হয়েছে গুদামের মালিককে। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) অমিতাভ মাইতি জানান আজ, শুক্রবার ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা রয়েছে ফরেন্সিক দলের।
গত অক্টোবরে বিস্ফোরণে দু’জনের মৃত্যুর পরে আইইডি তৈরির কারখানার হদিস মেলে বর্ধমান জেলারই খাগড়াগড়ে। তবে এ দিন উদ্ধার হওয়া আইইডি-র সঙ্গে খাগড়াগড়ের আইইডি-র মিল নেই বলে বম্ব স্কোয়াড সূত্রের দাবি। যদিও বিরোধীরা ঘটনায় শাসক দলের যোগ দেখতে শুরু করেছেন। বিজেপি তো এনআইএ (জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা)-তদন্তের দাবিও তুলছে। এনআইএ-র এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ঘটনাটি আমরা জেনেছি। তবে এর সঙ্গে কোনও সন্ত্রাসবাদী যোগ আছে কি না, বিশেষজ্ঞদের মতামত জানার আগে তা বলা যাচ্ছে না।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, ইস্পাতনগরীর ভারতী এলাকার বাসিন্দা শঙ্কর ক্যাওট পনেরো বছর ধরে শহরের ভগৎ সিংহ মোড়ে একটি বৈদ্যুতিন জিনিসপত্র সারাইয়ের দোকান চালান। বাড়ির কাছে একটি ভাড়া ঘরে তাঁর গুদাম। দিন কয়েক আগে বাতিল টিভি, ফ্রিজ, বাতানুকূল যন্ত্র-সহ বেশ কিছু জিনিস গুদাম থেকে বার করে লাগোয়া একটি বাড়ির উঠোনে রেখেছিলেন। এ দিন সকালে দোকানের দুই কর্মী পাপ্পু রাম (২৭) ও তবরেজ খানকে নিয়ে শঙ্কর সেগুলি ঝাড়াইবাছাই শুরু করেন। কাছে দাঁড়িয়েছিলেন বাড়িটির মালিক ব্রহ্মদেব মাজি। সেই সময়েই বিস্ফোরণ হয়।
বিস্ফোরণে পাপ্পুর দু’টি হাত উড়ে যায়। শঙ্কর, তবরেজ ও ব্রহ্মদেবও জখম হন। স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্গাপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে পাপ্পুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন ডাক্তারেরা। তবরেজ ও ব্রহ্মদেব চিকিৎসাধীন। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বেআইনি ভাবে বিস্ফোরক রাখার অভিযোগে পুলিশ শঙ্করকে গ্রেফতার করে।
নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে আইইডি।
পুলিশের দাবি, জেরায় শঙ্কর তাদের জানিয়েছেন, বাতিল জিনিস বিক্রির টাকায় বিশ্বকর্মা পুজো হবে, এমনই ভেবেছিলেন তিনি। এ দিন জিনিস বাছাইয়ের সময়ে তিনটি ছোট কৌটো তাঁদের নজরে পড়ে। পাপ্পু একটি কৌটো খুলে দেখতে যান। কৌটো খুলতেই বিস্ফোরণ হয়। তবে কৌটোগুলি কোথা থেকে এল তা তাঁর জানা নেই বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন শঙ্কর।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, ডাঁই করা বাতিল টিভি, ফ্রিজ, পেডেস্টাল ফ্যান, টেবল ফ্যানের স্তূপের মধ্যে চাপ-চাপ রক্ত। চারপাশে ভিড় স্থানীয় বাসিন্দাদের। সিআইডি-র বম্ব স্কোয়াডের তিন সদস্যের দল গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে স্প্লিন্টারের নমুনা, কৌটোর টুকরো সংগ্রহ করেন। ঘটনাস্থল থেকে মেলা আইইডিগুলিকে এ দিন বিকেলে ডিএসপি-র পরিত্যক্ত এয়ারস্ট্রিপে নিষ্ক্রিয় করা হয়।
বম্ব স্কোয়াড সূত্রের দাবি, প্রাথমিক ভাবে তাদের ধারণা, আইইডি-র ওই কৌটোয় অ্যান্টিমনি সালফাইড ছিল। এই রাসায়নিক দু’ধরনের হতে পারে— অ্যান্টিমনি ট্রাইসালফাইড এবং অ্যান্টিমনি পেন্টাসালফাইড। এর মধ্যে প্রথমটি বাজি, বিস্ফোরক বা দেশলাই তৈরিতে বহুল ব্যবহৃত। তবে আইইডি-তে মেলা অ্যান্টিমনি সালফাইড কোন গোত্রের, তা নিশ্চিত হতে ফরেন্সিক সাহায্য দরকার।
ঘটনার পিছনে আইএনটিটিইউসি-র হাত দেখছেন সিটুর বর্ধমান জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তী। তাঁর অভিযোগ, ২৯ সেপ্টেম্বর ডিএসপি-তে ভোট রয়েছে। তার আগে আতঙ্ক তৈরির জন্য বিস্ফোরক তৈরি হচ্ছিল। বিজেপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অসীম সরকার বলেন, ‘‘ঘটনার এনআইএ-তদন্তের দাবি জানাচ্ছি আমরা।’’ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘কী ঘটেছে, তদন্ত করলেই স্পষ্ট হবে।’’
দুর্গাপুরের জয়দেব অ্যাভিনিউয়ে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকতেন পাপ্পু। তাঁর অপমৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে পরিবারটি বাক্রুদ্ধ।
—নিজস্ব চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy