রাজ্য বিধানসভা। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যপালের ভাষণের সূত্র ধরে মুর্শিদাবাদের বাস দুর্ঘটনার ছায়া এসে পড়ল বিধানসভাতেও। দুর্ঘটনায় মৃতদের প্রতি সমবেদনা ও ক্ষতিপূরণের কথা রাজ্যপালের ভাষণে থাকলেও ঘটনার তদন্তের প্রসঙ্গ কেন সেখানে নেই, সেই প্রশ্ন তুলে হইচই বাধাল বিরোধীরা।
বিধানসভায় পড়ার জন্য রাজ্যপালের বক্তৃতার বয়ান তৈরি হয়ে যায় আগেই। মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে সোমবারের দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ রাজ্যপালের ভাষণের বইয়ে চিরকুট দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী মঙ্গলবার ওই দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করতেই সরব হন কংগ্রেস বিধায়কেরা। কর্মরত কোনও বিচারপতিকে দিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গড়ে গাফিলতির তদন্তের দাবি জানান তাঁরা।
রাজ্যপালের বক্তৃতা চলাকালীনই বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী অভিযোগ করতে থাকেন, দুর্ঘটনা ঘটেছে পরিবহণমন্ত্রীর ‘সৌজন্যে’! ঘটনার তদন্ত চাই। সভায় তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও উপস্থিত। মনোজবাবুর পাশাপাশি মুর্শিদাবাদের অন্যান্য কংগ্রেস বিধায়কও তখন ওই দুর্ঘটনার তদন্ত দাবি করতে শুরু করেন। বাসন্তীতে গুলিতে স্কুল-ছাত্র রিয়াজুলের মৃত্যুর তদন্তও দাবি করেন তাঁরা।
রাজ্যপালের বক্তৃতার পরে শোকপ্রস্তাব শুরু হওয়ায় কংগ্রেস ও বাম একসঙ্গে ওয়াক আউট করে। শোকপ্রস্তাবেও মুর্শিদাবাদের দুর্ঘটনায় মৃত বাসযাত্রীদের কথা উল্লেখ করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে মনোজবাবু দাবি করেন, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটির গায়ে এনবিএসটিসি লেখা থাকলেও তা যে আদতে সরকারি নয়। মিডিয়া সেন্টারে তিনি বলেন, ‘‘উত্তর দিনাজপুর থেকে লড়ঝড়ে বাস এনে বাইরে নীল-সাদা রং করে বহরমপুর পুরসভাকে দেওয়া হয়েছিল। তারা আবার বাস চালাতে দিয়েছিল আর এক জনকে! আরটিও-র অনুমোদন নেই। রুটের ঠিক নেই, মালিকেরও ঠিক নেই! জানতে চাই, কে কাকে ওই বাস লিজ দিয়েছিল? কেনই দেওয়া হয়েছিল?’’ দুর্ঘটনার দায় নিয়ে পরিবহণমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে মনোজবাবু বলেন, ‘‘এটা তো ম্যানমেড দুর্ঘটনা!’’ কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক ও আখরুজ্জামান প্রশ্ন তোলেন, এই দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিজনকে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হল। অথচ কিছু দিন আগে নওদায় দুর্ঘটনায় মৃতদের ক্ষেত্রে দু’লক্ষ টাকা দেওয়া হল কেন?
দুর্ঘটনার বেশ কয়েক ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) আসায় উদ্ধারকাজ গতি পেয়েছিল। সেই প্রসঙ্গেই রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের ব্যর্থতাকে দায়ী করে মনোজবাবু এবং বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর কেন দ্রুত উদ্ধার শুরু করতে পারল না? মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছলেন। তার চেয়েও জরুরি ছিল কপ্টারে ডুবুরিদের পাঠানো!’’ রাজ্যপালের বক্তৃতা-বিতর্কের শেষে শুক্রবার জবাবি ভাষণ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy