E-Paper

কর্মসংস্থানের প্রশ্নেই তর্কে শাসক-বিরোধী

বাজেটকে ‘বেকারদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে সরব হলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিরোধী নেতৃত্ব।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:১৮
(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

কর্মসংস্থানের দিশা কোথায়, রাজ্য বাজেটের পরে মূলত এই প্রশ্নেই সরকারকে বিঁধছে বিরোধীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যেরা যখন দাবি করছেন কর্মসংস্থানে এগিয়ে বাংলা, তখন তার পাল্টা এই বাজেটকে ‘বেকারদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে সরব হলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিরোধী নেতৃত্ব।

মমতা বুধবার বলেছেন, “এই বাজেটে আমাদের লক্ষ্য বেশি-বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করা। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে হাজার-হাজার ছেলেমেয়ে কাজ করছেন। ছোট ও মাঝারি শিল্পেও বহু কর্মসংস্থান হচ্ছে। নতুন অর্থনৈতিক করিডরে গোটা রাজ্য জুড়ে কর্মসংস্থান তৈরি হবে।” বীরভূমের ডেউচা পাচামি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে তাঁর দাবি, “কয়লা উত্তোলন এবং অনুসারী কাজে প্রায় এক লক্ষ ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান হবে।” সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাজেটের দিকে ইঙ্গিত করে তাঁর তোপ, “আমরা কথা দিয়ে কথা রাখি। অনেকে বাজেটে প্রতিশ্রুতি দেন নির্বাচনের জন্য। তার পরে ‘প্রতিশ্রুতিচ্যুত’ হন!” রাজ্যে বাজেটের অর্ধেক মহিলাদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে বলেও দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

যদিও কর্মসংস্থানের প্রশ্নেই এ দিন বিধানসভার বাজেট-অধিবেশন তেতে উঠেছে। শুভেন্দুর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়কেরা বাজেটের শেষ দিকে অধিবেশন থেকে কক্ষত্যাগ করেছেন। পকেটে করে ‘বেকারদের চাকরি চাই’ লেখা ছোট কার্ড নিয়ে বিধানসভায় ঢুকেছিলেন বিজেপি বিধায়কেরা। পরে সে সব হাতে নিয়েই বিক্ষোভ করে বাইরে বেরিয়ে বিরোধী নেতার বক্তব্য, “সরকার যে দেউলিয়া, তার প্রমাণ বাজেটের ছত্রে-ছত্রে। এটা বেকার-বিরোধী বাজেট, কর্মসংস্থানের কথা নেই। দু’কোটি ১৫ লক্ষ বেকারের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর শেষ বাজেটে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন।” এই সূত্রেই তাঁর দাবি, ‘‘বিজেপি এসে ২০২৬ সালে পূর্ণাঙ্গ বাজেট করবে। যে বাড়িতে চাকরি নেই, সেখানে একটি করে চাকরির ব্যবস্থা করবে।’’ বাজেট ‘অসত্য’ বলে অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প সংক্রান্ত বিষয়, রাজ্যের ঋণ থেকে বেরিয়ে আসা-সহ নানা বিষয়ে কোনও দিশা নেই বলেও শুভেন্দু অভিযোগ করেছেন।

কার্যত একই সুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই বাজেটকে ‘হতশ্রী, অন্তঃসারশূন্য’ বলে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, “রাজ্যের মূল সমস্যা, বেকারত্ব। শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত কিছু বলা হয়নি।” সেই সঙ্গে রাজ্যের কর্মচারীদের ৪% মহার্ঘ ভাতা (ডি এ) দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হলেও কেন্দ্রের থেকে এখনও পশ্চিমবঙ্গ যে ৩৫% পিছিয়ে রয়েছে, তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সুকান্ত এবং শুভেন্দু, দু’জনেই। এই সূত্রেই সুকান্তের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ডি এ নিয়ে ঘেউ ঘেউ করবেন না। বাম আমলে উনিই বলতেন, কেন্দ্রের হারে ডি এ দিতে না পারলে রাজ্য সরকারের চলে যাওয়া উচিত। আমরাও তাই বলছি, আপনি সরকার ছাড়ুন।” অর্থনীতিবিদ তথা বালুরঘাটের বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ী এই বাজেটকে ‘বিজ্ঞাপনের’ বলে তোপ দেগেছেন। মুখ্যমন্ত্রী যে ডেউচা পাচামির কথা বলেছেন, সেই সূত্রে অশোকের বক্তব্য, “বিজ্ঞাপনের আরও একটি প্রমাণ। ব্যবসা করতে গেলে মূলধন দরকার। বেঙ্গল-বীরভূম কোল কোম্পানি রয়েছে। তার মূলধন মোটে ১০ কোটি টাকা!” মমতা বার বার যে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন, তারও জবাবে অশোক বলেছেন, “এই সরকার সমস্যা দেখাতে চাইছে না। ভান করছে যেন নিজেরাই করবে। কিন্তু টাকা নেই। অথচ কেন্দ্রের থেকে চলতি বছরে অনুদান এবং ঋণ বাবদ ৪৩ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা পাচ্ছে রাজ্য।” রাজ্যের বাজেট ঘাটতি, ঋণের পরিমাণ নিয়েও তিনি সরব হয়েছেন। এই সূত্রেই তাঁর সংযোজন, “মাকাল ফল দেখতে ভাল, ভিতরে বাজে। এই বাজেটটা মাকাল ফলও নয়। দেখতে এবং ভিতরেও ভাল না। বাজেট ফের প্রমাণ করল তৃণমূলের সরকার আসলে ঘোষণার সরকার।”

রাজ্যের ঋণের পরিমাণ এবং কর্মসংস্থান নিয়ে সরব হয়েছে সিপিএমও। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, “এই সরকার আসার সময়ে ঋণ যা ছিল, এখন তার চার গুণ ঋণ। ঋণের অর্থ কোথায় যাচ্ছে? কত কর্মসংস্থান হল, কত কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা আছে? বিন্দুবিসর্গ জানা নেই।” মুখ্যমন্ত্রীর কথার সূত্রেই সেলিমের দাবি, ১৯৪৭-র পরে থেকে ২০১১ পর্যন্ত রাজ্যের মোট ঋণ ছিল দু’লক্ষ কোটি টাকার কম। আর তৃণমূলের ১৫ বছরেরও কম সময়ে প্রায় ৮ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছবে ‘পুঞ্জীভূত ঋণ’। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারেরও বক্তব্য, “বাজেটে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত একটি কথাও নেই। নতুন বেতন কমিশনেরও কোনও প্রস্তাব নেই। আর জি কর-কাণ্ডের পরেও শিক্ষা নিয়ে নারী সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও টাকা বরাদ্দ হয়নি।”

যদিও বেকারত্ব নিয়ে বিরোধীদের বক্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা। বাজেট বিবৃতিতে তাঁর বক্তব্য, “২০২৫-এর জানুয়ারিতে দেশের বেকারত্বের হার ছিল প্রায় ৮%। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের হার ছিল প্রায় অর্ধেক ৪.১৪%। ২০২৪-২৫ তৃতীয় ত্রৈমাসিকর কথা বিবেচনা করলে, সেখানেও বাংলার তুলনায় বেকারত্বের হার বেশি দেশে। ভারতে যখন বেকারত্বের হার ৮.১%, বাংলায় তখন তা ৩% কম।” পাশাপাশি, তিনি দাবি করেছেন দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও দেশের সবার উপরে রয়েছে রাজ্য।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC BJP Mamata Banerjee Suvendu Adhikari West Bengal government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy