Advertisement
E-Paper

পুলিশের সামনেই বহিরাগতদের তাণ্ডব, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বোমা-গুলি

পড়ুয়াদের অভিযোগ, পুলিশের সামনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় বোমাবাজি এবং গুলি চালায় বহিরাগত ওই দুষ্কৃতীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের বেধড়ক মারধর করা হয়। হামলা চালানো হয় ছাত্রীদের হস্টেলেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৮:৩০
পড়ুয়াদের অভিযোগ, পুলিশের সামনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় বোমাবাজি এবং গুলি চালায় বহিরাগত ওই দুষ্কৃতীরা।

পড়ুয়াদের অভিযোগ, পুলিশের সামনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় বোমাবাজি এবং গুলি চালায় বহিরাগত ওই দুষ্কৃতীরা।

ছাত্রদের আন্দোলন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বহিরাগতদের তাণ্ডব চলল নদিয়ার বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়ুয়াদের অভিযোগ, পুলিশের সামনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় বোমাবাজি এবং গুলি চালায় বহিরাগত ওই দুষ্কৃতীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের বেধড়ক মারধর করা হয়। হামলা চালানো হয় ছাত্রীদের হস্টেলেও। পরিস্থিতি সামাল দিতে উপাচার্য ধরণীধর পাত্র, রেজিস্ট্রার জয়ন্ত সাহা-সহ একাধিক শিক্ষক আন্দোলনকারী ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।

ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতার প্রতিবাদে পদত্যাগ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন তিনটি বিভাগের ডিন অপূর্ব বন্দ্যোপাধ্যায়, পিন্টু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্বপন মুখোপাধ্যায়। ঘটনার জেরে সাসপেন্ড করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা আধিকারিক উত্তম কর এবং ডিন অব স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার গৌতম চক্রবর্তীকে।

বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বুধবার রাতের তাণ্ডবের চিহ্ন স্পষ্ট। ঢোকার মূল দরজা পেরলেই ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভাঙা ইটের টুকরো। হস্টেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভবনের জানলার কাচ ভাঙা। রাস্তার উপর পড়ে রয়েছে ভাঙা চেয়ার। রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের বাইরের রাস্তায় গুলির খোল উদ্ধার হয়।

আরও পড়ুন: ভূমিকম্প হচ্ছে! দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা পিছলে মৃত্যু যুবকের

আরও পড়ুন: মৃত তরুণীর শরীরে লেখা ফোন নম্বর! সেই সূ্ত্রেই প্রকাশ্যে এল...

গত বৃহস্পতিবার থেকে একাধিক দাবি জানিয়ে উপাচার্যের অফিসের সামনে ধর্নায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্রছাত্রী। তাঁদের প্রধান দাবির মধ্যে ছিল, এগ্রিকালচার বিভাগের ডিন শ্রীকান্ত দাস এবং ডিন অব স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার গৌতম চক্রবর্তীর অবিলম্বে অপসারণ। আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা এই দু’জনের বিরুদ্ধেই একাধিক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বুধবার রাতের তাণ্ডবের চিহ্ন স্পষ্ট।

ছাত্রছাত্রীদের দাবি, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ শুরু হয় এই তাণ্ডব। আন্দোলনকারী ছাত্র মিলনকুমার লক্ষ্মণ বলেন, “বুধবার বিকেলে আমরা একটি জেনারেল বডির মিটিং করি। সেই মিটিং-এ সিদ্ধান্ত হয় যে, বৃহস্পতিবার থেকে আমরা অনশনে বসব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মিটিং-এর পর আমরা সবাই একটু ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছিলাম। উপাচার্যের অফিসের সামনে ছিলেন মাত্র ৫ জন ছাত্রছাত্রী। হঠাৎই ক্যাম্পাস থেকে শুনলাম বাইরের লোক ঢুকছে। আমরা অনেকেই তখন বাইরে ছিলাম। দৌড়ে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখি ৬০-৭০ জন বা তারও বেশি যুবক তাণ্ডব চালাচ্ছে। তাদের হাতে ক্রিকেটের উইকেট, বাঁশ, লাঠি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের নিরাপত্তারক্ষীও বলেন, “বুধবার সন্ধ্যায় বেশ কিছু বাইরের ছেলে চড়াও হয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মারধর করা শুরু করলে আমি বাধা দিই। তখন আমাকেও মারধর করে ভেতরে ঢুকে যায় ওরা।”

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বেরনোর সময় ওই দুষ্কৃতীরা বোমাবাজি করে এবং ছ’রাউন্ড গুলিও চালায়।

অভিযোগ, সেই বহিরাগতরা সোজা উপাচার্যের অফিসের সামনে চলে যায়,যেখানে ছাত্রছাত্রীরা ধর্নায় বসেছিলেন। সেখানে এগ্রিকালচার বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে তিনতলা থেকে টানতে টানতে নীচে নিয়ে এসে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তত ক্ষণে হামলাকারীদের একটি অংশ মেয়েদের হস্টেলে চড়াও হয়েছে। সেখানে এলোপাথাড়ি ইট ছোড়া শুরু হয়। তার পর হস্টেলের নিরাপত্তারক্ষীকে মারধর করে ছাত্রীদের উপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ।

তত ক্ষণে খবর পেয়ে বাকি ছাত্রছাত্রীরা জমা হতে শুরু করলে পিছু হটে হামলাকারীরা। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বেরনোর সময় ওই দুষ্কৃতীরা বোমাবাজি করে এবং ছ’রাউন্ড গুলিও চালায়। বোমার সে রকম কোনও চিহ্ন না পাওয়া গেলেও রাতেই রাস্তায় গুলির ফাঁকা কার্তুজ খুঁজে পাওয়া যায়।

রাতের ওই হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ দিন সকাল থেকেই অগ্নিগর্ভ ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

ছাত্রদের একাংশের অভিযোগ এই হামলার পেছনে রয়েছে শাসক দল। অভিযোগ, হামলাকারীরা তৃণমূল কংগ্রেসের নামে স্লোগানও দিচ্ছিল। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, হামলার সময়ে প্রচুর পরিমাণে পুলিশ ছিল ক্যাম্পাসের বাইরে। তারা হামলাকারীদের বাধা দেওয়া দূরে থাক, উল্টে হামলায় সহযোগিতা করেছে বলে অভিযোগ।

রাতের ওই হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ দিন সকাল থেকেই অগ্নিগর্ভ ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসেন উপাচার্য এবং কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। বৈঠকের শেষে উপাচার্য ধরণীধর পাত্র বলেন, “যে ঘটনা ঘটেছে তা অনভিপ্রেত। কারা এই দুষ্কৃতী, তা আমি জানি না। তবে আমার ধারণা, এর পেছনে রাজনৈতিক কোনও বিষয় আছে।” তিনি স্বীকার করেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা থাকলেও তা রেকর্ড করা যায় না। অর্থাৎ গোটা ঘটনার কোনও ফুটেজ পাওয়া সম্ভব নয়। উপাচার্য জানান, গন্ডগোলের আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বাহিনী চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন নদিয়ার জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে। সেই মতো স্থানীয় থানায় বাহিনী মোতায়েন করা হয়। তার পরেও এই হামলার ঘটনা প্রশ্ন তুলেছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে।

নদিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমারকে এ বিষয়ে জানতে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। তাঁকে পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ বার্তারও কোনও জবাব দেননি।

নিজস্ব চিত্র।

(দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি, নদিয়া-মুর্শিদাবাদ, সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের খবর পেয়ে জান আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

Crime BCKVV Police Vice Chancellor বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় Bidhan Chandra Krishi Viswavidyalaya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy