Advertisement
E-Paper

গুলি-বোমায় কাঁপল রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়

ফের রণক্ষেত্র হয়ে উঠল রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্র। গুলি ছুড়ে, বোমা ফাটিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তাণ্ডব চালাল একদল বহিরাগত। এবং তা পুলিশের চোখের সামনেই! অভিযোগ, হামলাকারীরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সদস্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৫
বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পড়ে কার্তুজের খোল। ছবি: বিবেকানন্দ সরকার।

বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পড়ে কার্তুজের খোল। ছবি: বিবেকানন্দ সরকার।

ফের রণক্ষেত্র হয়ে উঠল রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্র। গুলি ছুড়ে, বোমা ফাটিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তাণ্ডব চালাল একদল বহিরাগত। এবং তা পুলিশের চোখের সামনেই! অভিযোগ, হামলাকারীরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সদস্য। নানা ক্লাসঘরে লুকিয়ে-পড়া ছাত্র পরিষদ সমর্থকদের বের করে বাঁশ, লাঠি দিয়ে যথেচ্ছ মারধর করে তারা। বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে ‘টিএমসিপি জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগানও দেয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। টিএমসিপি জেলা সভাপতি অজয় সরকারের অবশ্য দাবি, ওই বহিরাগতরা ছাত্র পরিষদের সমর্থক।

এ দিন ঘণ্টাখানেক কার্যত মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছিল রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস— বলছেন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী থেকে পড়ুয়া সকলেই। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, গোটা সময়টাই পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। শিক্ষকরা বারবার ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানালেও তাতে কান দেয়নি। উল্টে হামলাকারীদের পরে রীতিমতো কর্ডন করে বার করে দিয়েছে তারা। ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, পরে আহত সমর্থকদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তাদের উপরেই লাঠি চালায় পুলিশ। সে সময় পুলিশের লাঠি পড়েছে নীতীশচন্দ্র রায় নামে এক পথচারীর গায়েও। রসাখোয়ার বাসিন্দা নীতীশবাবু হাসপাতালে তাঁর ভাইকে দেখতে যাচ্ছিলেন। রডের আঘাতে হাত ফুলে ওঠে তাঁর।

রাতে ছাত্র পরিষদের তরফে দীপক মিশ্র, বাবু মিশ্র, অনুপ কর-সহ সাত টিএমসিপি সমর্থকের নাম করে গুলি ছোড়া, বোমাবাজি ও মারধরের অভিযোগ দায়ের করা হয়। টিএমসিপির তরফে অবশ্য রাত পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের হয়নি। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তাণ্ডবের অভিযোগ নতুন নয়। ২০১২ সালে রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের অধ্যক্ষ দিলীপ দে সরকারকে মারধর করা হয়। তখন অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল নেতা তিলক চৌধুরী এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। ফের ১০ অগস্ট ছাত্র পরিষদ-টিএমসিপি সংঘর্ষ হয়। সে বারও টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে গুলিচালনার অভিযোগ উঠেছিল। সে দিনের ঘটনায় অভিযুক্ত অনেকে এ দিনও বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দেখা গিয়েছে বলে দাবি। এ দিন বহিরাগতরা কলেজের ভিতরে অন্তত ৫ রাউন্ড গুলি চালায়। সেখান কার্তুজের খোলও উদ্ধার করেছে পুলিশ। উপাচার্য অনিল ভুঁইমালি ঘটনার সময়ে ক্যাম্পাসে ছিলেন না। পরে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘ভুলে যাবেন না এখানে ১১ হাজার ছাত্রছাত্রী পড়ে! একটু গোলমাল হতেই পারে!’’ হামলা নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে বলেন, ‘‘গুলি-বোমা চলেছে বলছেন, কই কারও গায়ে তো লাগেনি!’’ উপাচার্য হিসেবে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন জানতে চাইলে অনিলবাবু বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছি।’’ বিশ্ববিদ্যালয় তো স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাজ্যের অধীনস্থ নয়। তা হলে শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হল কেন? উত্তরে উপাচার্য বলেন, ‘‘রিপোর্ট তৈরি করে রাজভবনে পাঠাব।’’ পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোয় বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উপাচার্যের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, দু’দল বহিরাগত এ দিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তিনি আমাকে একটি রিপোর্ট দেবেন। তবে শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য বরদাস্ত করা হবে না।’’ কেন এই সংঘর্ষ? বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, অ্যাডমিশন কমিটির আহ্বায়ক অশোক দাসকে ঘিরে বিক্ষোভ থেকেই এ দিন ঝামেলার সূত্রপাত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসা‌ইট অনুসারে স্নাতক স্তরের ভর্তির একটিই মেধা তালিকা প্রকাশ হয়েছে। কলেজের পাস কোর্সের একাধিক ছাত্রের নাম অনার্সের তালিকায় উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া না হলেও অগস্টের শেষ থেকে অনার্স কোর্সে ভর্তি হচ্ছিল না। এই নিয়ে ২৭ অগস্ট ও ১ জুলাই ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা ক্ষোভ জানান। এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ কলেজে এসে ওই পড়ুয়া এবং অভিভাবকেরা অশোকবাবুকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান বলে অভিযোগ। দুই পক্ষের কথা কাটাকাটিও হয়। ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, এই ঘটনার সময় তৃণমূল সমর্থক বলে পরিচিত কলেজের এক শিক্ষক ফোন করে বাইরে থেকে লোক ডাকতে থাকেন।

গুলিতে দর্শন বিভাগের দেওয়াল ফুটো হয়ে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকেল স্ট্যান্ডে ৩টি বোমা ফাটানো হয়। একটি না-ফাটা বোমাও পরে উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি। কয়েক জন শিক্ষকও গুলির খোল তুলে দেন পুলিশকে। এ দিন একদল লোক সিসিটিভি কন্ট্রোল রুমে ঢুকে কিছু করার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ।

Panic Storm West Bengal Bomb Gun abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy