Advertisement
E-Paper

হিসেবি ছিল, তবু এত টাকা? অবাক মা-ও

একই পাড়া, একই লোকের দু’টো বাড়ি। কিন্তু চেহারায় ফারাকটা আকাশ-পাতাল। মার্বেল মোড়া তিনতলা বাড়িতে সপরিবার বাস করেন পুর-ইঞ্জিনিয়ার ছেলে। আর পাঁচ ফুট চওড়া গলির পাশে টালির ঘুপচি ঘরে থাকেন বাবা-মা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৪৬
ঘুসুড়ির টালির বাড়িতে প্রণব অধিকারীর মা কল্পনাদেবী। - নিজস্ব চিত্র।

ঘুসুড়ির টালির বাড়িতে প্রণব অধিকারীর মা কল্পনাদেবী। - নিজস্ব চিত্র।

একই পাড়া, একই লোকের দু’টো বাড়ি। কিন্তু চেহারায় ফারাকটা আকাশ-পাতাল। মার্বেল মোড়া তিনতলা বাড়িতে সপরিবার বাস করেন পুর-ইঞ্জিনিয়ার ছেলে। আর পাঁচ ফুট চওড়া গলির পাশে টালির ঘুপচি ঘরে থাকেন বাবা-মা।

ছেলের বাড়ির বক্স-খাট, ওয়ার্ডরোব মায় শৌচাগারের কমোডেও লুকনো কোটি কোটি টাকা। আর আধ কাঠা জমির উপরে তৈরি তাঁর মা-বাবার টালির ঘরে সহজে চলাফেরাই দায়!

ঘুসুড়ির ঘুষ-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত বালি পুরসভার পুর-ইঞ্জিনিয়ার প্রণব অধিকারীর পাড়ায় গিয়ে উঠে এসেছে এমনই সব তথ্য। পাড়ার লোকেরা বলছেন, দরিদ্র পরিবারের সন্তান প্রণববাবু এক সময় থাকতেন নস্কর পাড়া রোডের দুর্গা পালের মাঠের কাছে এই টালির চালের ঘরেই। ১৯৯৫ সালে বালি পুরসভায় সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি পান। তার পাঁচ বছরের মধ্যেই ‘আলিশান’ বাড়ি হাঁকিয়েছিলেন তিনি। চাকরি পাওয়ার এত অল্প সময়ের মধ্যে কী ভাবে অত দামি বাড়ি করা হল, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০০০ সালে টালির বাড়ি ছেড়ে স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে নতুন বাড়িতে চলে আসেন প্রণববাবু। সময় যত গড়িয়েছে, ততই বেড়েছে বাড়ির জেল্লা, অন্দরের সাজ। এলাকার এক যুবকের কথায়, ‘‘এখন ওই বাড়ি দেখলে কোনও ব্যবসায়ীর বাড়ি বলেই মনে হয়!’’

প্রণববাবুর বাড়ির অন্দরসজ্জা কী রকম? একতলা থেকে তিনতলা—পুরোটাই বাড়িটাই দামি মার্বেল পাথরে মোড়া। ৪টি শোওয়ার ঘরের সব ক’টাতেই বাতানুকূল যন্ত্র বসানো। ছেলে তন্ময়ের জন্য বাড়িতেই রয়েছে ছোট আকারের মাল্টিজিমও। দামি আসবাবে সাজানো বসার ঘর, রান্নাঘরও চোখ ধাঁধানো। শৌচাগারের মেঝে দামি টাইলসে মোড়া।

এত দামি বাড়ি যাঁর, যাঁর বাড়িতে কোটি কোটি টাকার হদিস মিলেছে— সেই ইঞ্জিনিয়ারের মা-বাবার জীবনযাত্রা কেমন?

প্রণববাবুর মা কল্পনা অধিকারী জানান, ৫০ বছর ধরে ওই বাড়িতে রয়েছেন তিনি। প্রথমে ভাড়াটে হিসেবে, পরে বাড়ির মালিকের কাছ থেকে আধ কাঠা জমি কিনে নেন তাঁরা। সেই এক চিলতে জমির উপরেই টালির চালের বাড়ি তাঁদের। পায়রার খোপের মতো ঘর। একটা ছোট, অন্যটা আরও ছোট! দেওয়ালের পলেস্তারা খসে গিয়েছে, দিনের বেলাতেও ঘরে আলো জ্বালাতে হয়েছে। কী ভাবে সংসার চলে কল্পনাদেবীর? সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা বললেন, ‘‘ওর বাবা আগে ১০০ টাকা দৈনিক মজুরিতে লেদ কারখানায় কাজ করতেন। পাঁচ ছেলের সকলেই অন্য জায়গায় থাকে। কিছু কিছু করে টাকা পাঠায়। বড় ছেলে হিসেবে প্রণবও মাসে ৫০০ টাকা করে দিত। এ ভাবেই কোনও মতে দিন চলে আমাদের।’’ সেজ ছেলে প্রশান্তবাবুর বাড়ি কল্পনাদেবীর কয়েকটা বাড়ি পরেই। প্রণববাবু গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তাঁর বাড়িতেও তালা পড়ে গিয়েছে।

বড় ছেলে বড়লোক হয়েছে, এটা মা জানতেন। কিন্তু তাঁর ঘরের আনাচেকানাচে যে কোটি কোটি টাকা লুকনো রয়েছে, তা আঁচ করতে পারেননি কল্পনাদেবী। তিনি বলছেন, ‘‘প্রণব ছোট থেকেই হিসেবি। সহজে হাত দিয়ে টাকা গলত না। তবে বউ-ছেলেমেয়েকে সুখে রাখত। কিন্তু এত টাকা কোথা থেকে এল, বুঝতে পারছি না।’’

পাড়ার লোকেরা বলছেন, ঝকঝকে বাড়ি হলেও চলনেবলনে প্রণববাবুর তেমন কোনও জেল্লা ছিল না। বরং বেশ সাদামাটা ভাবেই থাকতেন তিনি। অফিসে যেতেন জিন্স আর টি-শার্ট পরে। বালি পুরসভার কর্মীরা বলছেন, কোনও দিন এক কাপ চা-ও খেতেন না। সিগারেট কিংবা অন্য কোনও নেশাও করতেন না। প্রণববাবুর ছেলে তন্ময় (দুর্নীতি মামলায় তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়েছে) লিলুয়ার একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি টেক পাশ করে এম টেক-এ ভর্তি হয়েছেন। মেয়ে নবনীতা এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছেন।

এ দিন প্রণববাবু ও তন্ময়কে কলকাতার নগর দায়রা আদালতের অতিরিক্ত জেলা বিচারক সঞ্চিতা সরকারের এজলাসে হাজির করানো হয়েছিল। সেখানে পরিবারের কয়েক জনের সঙ্গে হাজির হয়েছিলেন প্রণববাবুর স্ত্রী কৃষ্ণাদেবীও। পরনে ছিল সাধারণ সিল্কের শাড়ি। চেহারাতেও তেমন জেল্লা নেই। আদালতের বাইরে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘‘ছেলেটাকে থানায় সই করাবে বলে ডেকে গ্রেফতার করল। আমি আর কিছু জানি না।’’

আর, নবনীতা নিজেদের বাড়ি ছেড়ে হাজির হয়েছিলেন ঠাকুমার ঘুপচি ঘরে। বলছিলেন, ‘‘বাবার কাছে অনেকেই আসত। তখন বাবার ঘরে আমরা কেউ ঢুকতে পারতাম না।’’ ওই লোকেরা কারা, সে ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে দাবি নবনীতার।

pranabs mother kalpana adhikari bribe syndicate huge money pranabs mother surprised pranab adhikari bribe syndicate bribe mystery MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy