অঙ্গীকারপত্রে সই করছেন অভিভাবকেরা।
সকাল থেকেই স্কুল চত্বরে থিকথিকে ভিড়। পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে আসা পড়ুয়ারা অবাক হয়ে দেখছে নতুন স্কুল। অভিভাবকেরা ব্যস্ত গল্পগুজবে।
ঠিক সেই সময় স্কুলের এক কর্মী অভিভাবকদের ডেকে নিয়ে গিয়ে বসালেন সভাকক্ষে। প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম কোনও ভণিতা ছাড়াই শুরু করলেন, ‘‘আপনারা জানেন, সীমান্তের এই এলাকায় অন্যতম বড় সমস্যা বাল্যবিবাহ ও স্কুলছুট। এটা আমাদের রুখতে হবে। আর ঠিক সেই কারণেই আপনাদের অঙ্গীকার....।’’
‘‘অঙ্গীকার!’’, গুঞ্জন উঠল স্কুলের সভাকক্ষে। ফের খেই ধরেন জাহাঙ্গীর, ‘‘আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। ছেলেমেয়েকে ভর্তি করানোর পরে আপনাদের অঙ্গীকার করতে হবে যে, ছেলেমেয়ে স্কুলছুট হবে না ও তাদের বাল্যবিবাহ দেওয়া যাবে না।’’
লালগোলার স্কুলের সেই অঙ্গীকারপত্র।
অভিভাবকেরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন, ‘‘ও, এই কথা! ভেবেছিলাম, কী না কী। এ তো ভাল ব্যাপার গো মাস্টার। আমাদের আপত্তি নেই।’’
কিন্তু অঙ্গীকার শুধু মুখে নয়, রীতিমতো অঙ্গীকারপত্র ছাপিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ছেলেমেয়েদের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে সেই অঙ্গীকারপত্রে সই করলেন অভিভাবকেরা।
বিদ্যালয়ের নাম লালগোলা লস্করপুর হাইস্কুল। সাকিন মুর্শিদাবাদ।
জাহাঙ্গীর জানাচ্ছেন, ১৭টি গ্রামের পড়ুয়ারা এই স্কুলে পড়ে। বাল্যবিবাহ ও স্কুলছুট এখনও একেবারে বন্ধ হয়নি। আর সেই কারণেই এই পদক্ষেপ। তাঁর কথায়, ‘‘ইতিমধ্যে আমরা ভাল সাড়াও পেয়েছি। ৩১০০ পড়ুয়ার মধ্যে নতুন বছরে এখনও পর্যন্ত পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ১৬০০ পড়ুয়ার অভিভাবক অঙ্গীকারপত্রে সই করেছেন। আশা করি, এই মাসেই বাকিরাও সই করবেন।’’
লালগোলার বিডিও সামসুজ্জামান বলছেন, ‘‘লস্করপুর স্কুলের এই উদ্যোগে সচেতনতা আরও বাড়বে। প্রশাসনের সুবিধা হবে।’’ জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী বিশ্বাস দে বলছেন, ‘‘প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। আশা করি, অন্য স্কুলগুলোও এ ভাবেই এগিয়ে আসবে।’’
দেওয়ানসরাই গ্রামের জুমেলা বিবি, রমজানপুরের মহম্মদ আব্দুল হাই, পলাশবাটির মহম্মদ মজিবুর রহমানেরা বলছেন, ‘‘মাস্টারকে যখন কথা দিয়েছি, সে কথার খেলাপ হবে না। মিলিয়ে নেবেন!’’
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy