Advertisement
E-Paper

দল ভাঙিয়ে অপকর্ম নয়, কড়া বার্তা তৃণমূল নেতৃত্বের মুখে

জেলায় জেলায় গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব এবং তা নিয়ে রক্তপাত উদ্বেগে রেখেছে তৃণমূলকে। দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে রবিবার ‘পশ্চিমবঙ্গ কিষাণ ও ক্ষেতমজুর তৃণমূল কংগ্রেসে’র সম্মেলনে সেই উদ্বেগ গোপন করেননি দলের মহাসচিব পার্থবাবু। তিনি সরাসরিই বলেছেন, এখন দলের ‘মহাসমস্যার সময়’।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৯

সামনে পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে দলের ক্ষেতমজুর সংগঠনের মঞ্চ থেকে কঠোর আত্মসমালোচনা শোনা গেল তৃণমূল নেতৃত্বের মুখে। গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব বন্ধে এবং দলকে ভাঙিয়ে ফুলেফেঁপে ওঠা কর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন শাসক দলের দুই শীর্ষ নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সী। সাম্প্রতিক কালে তৃণমূলের মঞ্চে এত কড়া আত্মসমালোচনা বিরল!

জেলায় জেলায় গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব এবং তা নিয়ে রক্তপাত উদ্বেগে রেখেছে তৃণমূলকে। দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে রবিবার ‘পশ্চিমবঙ্গ কিষাণ ও ক্ষেতমজুর তৃণমূল কংগ্রেসে’র সম্মেলনে সেই উদ্বেগ গোপন করেননি দলের মহাসচিব পার্থবাবু। তিনি সরাসরিই বলেছেন, এখন দলের ‘মহাসমস্যার সময়’। সেই সময়ে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব যেন কোনও ভাবেই মাথাচাড়া না দেয়। সেই সঙ্গেই পার্থবাবুর সংযোজন, ‘‘আমি তিন ধরনের তৃণমূল দেখছি। পুরনো টিএমসি, নব্য টিএমসি, তৎকাল টিএমসি! শুধু বলব, নব্যদের শিখিয়ে নিতে হবে। তৎকাল টিএমসি-র দলে এলেই পদ চাই! তৎকালদের উপরে নজর রাখুন। আর পুরনো টিএমসি-কে সম্মান দিন।’’

আরও পড়ুন: ব্রাত্য মুকুল, বেচারামেরমঞ্চে নেই রবীন্দ্রনাথ

দল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পুরনো ও নব্যদের দ্বন্দ্ব ভুগিয়েছে তৃণমূলকে। তার পরেও সিপিএম, কংগ্রেস ভেঙে লোক নেওয়া অব্যাহত থেকেছে। কিন্তু অন্য দল থেকে এসে পাড়ায় পাড়ায় জুড়ে বসা কর্মীদের নিয়ে তৃণমূলের বিড়ম্বনা যে বাড়ছে, পার্থবাবুর এ দিনের মন্তব্যেই তা পরিষ্কার। গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব সরিয়ে রেখেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাজ করার জন্য কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

মহাসচিব যখন সংগঠনের বিবাদের দিকে নজর দিয়েছেন, রাজ্য সভাপতি তথা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি তখন কর্মীদের সর্তক করেছেন দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে। দলের একাংশ বলছেন, নানা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী যখন অভিযুক্ত, এই দুই শীর্ষ নেতার ভাবমূর্তি সেখানে যথেষ্টই স্বচ্ছ। তাই পঞ্চায়েত ভোটের আগে তাঁরাই দলের বেনোজলকে সাফ করার বার্তা দিয়েছেন। বক্সী এ দিন কর্মীদের এই বার্তাও দিয়েছেন যে, ‘দখল’ করা পঞ্চায়েতের ভরসায় থাকলে হবে না। এই নির্বাচনে মানুষের কাছে পৌঁছে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে পঞ্চায়েত জয় করতে হবে। সাম্প্রতিক কালে একাধিক পুরভোটে শাসক দলের ভোট লুঠের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই বার্তাকে তাৎপর্যপূর্ণই ধরা হচ্ছে।

আত্মসমালোচনার সুরেই বক্সী এ দিনের সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘আমাদের কারও কারও আচার-আচরণ, ব্যবহার মানুষকে ব্যথিত করে। যদি তৃণমূলে থেকে মনে করে থাকেন যে কলাগাছের মতো বলিষ্ঠ হয়ে উঠবেন, বাংলার ৯ কোটি মানুষ কিন্তু নজর রাখছেন।’’ দুর্নীতির অভিযোগ পেলে দলীয় নেতৃত্ব উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবেন না বলেও বুঝিয়ে দিয়েছেন রাজ্য সভাপতি। তাঁর কথায়, ‘‘যদি কেউ ভাবেন বুক ফুলিয়ে দলকে বিড়ম্বনায় ফেলে চলবেন, দল যদি একটা ছোট্ট ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়, তা হলে পাশের পানের দোকানদারও পাশে থাকবেন না!’’ দলকে ভাঙিয়ে যাঁরা বিড়ন্বনা সৃষ্টি করে চলছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে অনেক সময় তাঁরা অভিযোগ করেন যে, তাঁদের ‘ফাঁসানো’ হয়েছে। সে রকম পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করেই বক্সী সাফ বলেছেন, ‘‘তখন আমি দলের তরফে বলব, আপনাকে ফেঁসেই থাকতে হবে!’’

ক্ষেতমজুর সংগঠনের রাজ্য সভাপতি বেচারাম মান্না, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা প্রমুখ বক্তা ছিলেন সম্মেলনে। ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারও। সংগঠনের কাজে মতামত চেয়ে প্রতিনিধিদের দেওয়া হয়েছে ‘পরামর্শপত্র’।

Partha Chatterjee Subrata Bakshi TMC Group Clash তৃণমূল পার্থ চট্টোপাধ্যায় সুব্রত বক্সী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy