Advertisement
E-Paper

যাদবপুরে ভর্তি কতটা স্বচ্ছ: পার্থ

যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির মাপকাঠি জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের পরীক্ষা। বিজ্ঞানের কোনও বিষয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা হয় না। নম্বরের ভিত্তিতে সরাসরি ভর্তি করা হয়। কলা বিভাগের বেশ কিছু বিষয়ে অবশ্য ভর্তি হতে হয় পরীক্ষা দিয়েই। যে-সব বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়, মন্ত্রী সেগুলোতেই অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলছেন বলে শিক্ষামহলের অভিমত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৭ ০৪:০৩
পার্থ চট্টোপাধ্যায়

পার্থ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজে ভর্তিতে টাকা লেনদেন-সহ নানান দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতার অভিযোগ আনলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজেই।

সোমবার যাদবপুরে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘‘নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তির পাশাপাশি কিছু বিষয়ে ভর্তির পরীক্ষা নেওয়া হয়। এই বিষয়ে কতটা স্বচ্ছতা থাকে, সেটা কর্তৃপক্ষ দেখুন। অভিভাবকেরা এই নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। কর্তৃপক্ষ তাঁদের আশঙ্কামুক্ত করলে খুশি হবো।’’

যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির মাপকাঠি জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের পরীক্ষা। বিজ্ঞানের কোনও বিষয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা হয় না। নম্বরের ভিত্তিতে সরাসরি ভর্তি করা হয়। কলা বিভাগের বেশ কিছু বিষয়ে অবশ্য ভর্তি হতে হয় পরীক্ষা দিয়েই। যে-সব বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়, মন্ত্রী সেগুলোতেই অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলছেন বলে শিক্ষামহলের অভিমত।

এমন অভিযোগ ‘হোক কলরব’ আন্দোলনের সময়ে তোলা হয়েছিল তৃণমূল মহল থেকেই। অভিযোগ উঠেছিল, পরীক্ষা নিয়ে যে-সব বিষয়ে ভর্তি করা হয়, সেখানে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী শিক্ষকেরা আছেন। তাঁরা তাঁদের পছন্দমতো পড়ুয়াদেরই ভর্তির সুযোগ দেন। এ দিন ক্যাম্পাসে পড়ুয়াদের একাংশের বিক্ষোভের মুখে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী। তার পরেই নিজের বক্তৃতায় প্রবেশিকা নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তোলেন পার্থবাবু। যাদবপুরের শিক্ষক সংগঠন জুটা-র সাধারণ সম্পাদিকা নীলাঞ্জনা গুপ্ত বলেন, ‘‘প্রতিটি পরীক্ষা স্বচ্ছতা রেখেই করা হয়। এই ধরনের অভিযোগ ওঠা খুবই আশ্চর্যের।’’ উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজে মেধা-তালিকা মেনে ভর্তি চলছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে কলেজ সমূহের পরিদর্শকের নেতৃত্বে এ দিনই একটি ‘টিম’ গড়া হয়েছে। উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ বলেন, ‘‘যে-সব কলেজের বিরুদ্ধে মেধা-তালিকা অগ্রাহ্য করে ভর্তির অভিযোগ উঠছে, এই টিম সেখানে যাবে। অন্যান্য কলেজেও ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’ করবে তারা।’’

ভর্তি নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছেন সুরেন্দ্রনাথ কলেজ কর্তৃপক্ষ। রবিবার তৃণমূল ভবনে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে সুরেন্দ্রনাথ, বঙ্গবাসী ও আশুতোষ কলেজে ভর্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু। এ দিন সুরেন্দ্রনাথ কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, ভিত্তিহীন অভিযোগের ফলে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানি হয়েছে। তা হলে কি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পৌঁছনো খবর নস্যাৎ করতে চাইছেন কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল কর?

‘‘মন্ত্রীর কাছে হয়তো খবর আছে। কিন্তু আমার কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি,’’ বলেন অধ্যক্ষ। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, বাড়তি পড়ুয়া ভর্তি করা যাবে না। ইন্দ্রনীলবাবু কিন্তু জানিয়ে দেন, বাড়তি পড়ুয়া ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর ব্যাখ্যা, কাউন্সেলিংয়ের পরে অনেকেই অন্যত্র ভর্তি হয়। ফলে আসন ফাঁকা থেকে যায়। তাই আগে থেকে নির্ধারিত আসনের থেকে বেশি ভর্তি নেওয়া হয়। ফলে কেউ অন্যত্র চলে গেলেও আসন ফাঁকা থাকে না।

শিক্ষা শিবির এই যুক্তি মানতে নারাজ। কারণ, নির্ধারিত আসনের থেকে বেশি ভর্তি নেওয়া নিয়মবিরুদ্ধ। কোনও কলেজই সেটা করতে পারে না। সুরেন্দ্রনাথের ভর্তি কমিটির এক সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে বলেছেন, ‘‘বিগত বছরগুলিতে বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু বাড়তি হিসেবে ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদেরও রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে।’’ কর্তৃপক্ষের একাংশ এবং ছাত্র সংসদের বক্তব্য, ভর্তিতে টাকার লেনদেন চললেও তার সঙ্গে কলেজের কোনও সম্পর্ক নেই। স্বচ্ছ ভাবেই ভর্তি চলছে। তবে তাঁরা জানান, কলকাতার যে-কোনও কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন মোবাইলে এসএমএস করছে ‘অভি’ নামে এক ব্যক্তি।

গেড়ে বসার রাজনীতি

রবিবার টিএমসিপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বারবার বিষয় বদলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে থাকা চলবে না।

উচ্চ শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, দুই টিএমসিপি নেতা মণিশঙ্কর মণ্ডল এবং কায়ুম মোল্লা বছরের পর বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছেন। তাঁদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে অশান্তি হচ্ছে। কিছু বিরোধী ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন রয়ে যাওয়া কয়েক জন ছাত্রনেতার সঙ্গে কথা বলেছেন সুপ্রিয় তরফদার।

মণিশঙ্কর মণ্ডল

ছাত্র সংসদ সদস্য, টিএমসিপি

• ২০১২-১৪ বাংলায় স্নাতকোত্তর

• ২০১৪-১৫ চিনা ভাষায় সার্টিফিকেট কোর্স

• ২০১৫-১৭ বাংলায় এমফিল

• ২০১৬-১৭ উর্দু ভাষায় সার্টিফিকেট কোর্স

এ ভাবে ভর্তি হওয়ার নিয়ম ছিল। নিয়ম মেনেই পড়াশোনা করছি।

আব্দুল কাইয়ুম মোল্লা

ছাত্র সংসদ সদস্য, টিএমসিপি

• ২০১০-১২ ইসলামিক ইতিহাসে স্নাতকোত্তর

• ২০১৩-১৫ মাস কমিউনিকেশনে স্নাতকোত্তর

• ২০১৬-১৭ জার্মান ভাষায় সার্টিফিকেট কোর্স

পড়াশোনার জন্য এখানে আসি। রাজনীতি করি ভাল লাগা থেকে।

কুণাল সামন্ত

ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক, টিএমসিপি

• ২০১১-১৩ বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর

• ২০১৩-১৪ ফরাসি ভাষায় সার্টিফিকেট কোর্স

• ২০১৪-১৫ হিন্দি ভাষায় সার্টিফিকেট কোর্স

• ২০১৫-১৭ এমবিএ

ছাত্রদের স্বার্থে রাজনীতি করি। রাজনীতির জন্য পড়াশোনা করি না

মিজানুর মোল্লা

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিএসও সভাপতি

• ২০১৪-১৬ ভাষাতত্ত্বে স্নাতকোত্তর

• ২০১৬-১৭ উর্দুতে সার্টিফিকেট কোর্স

রাজনীতি করব বলে থাকিনি। গবেষণার স্বার্থে পড়া দরকার ছিল।

Partha Chatterjee পার্থ চট্টোপাধ্যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় Jadavpur University Admission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy