বেআইনি ভাবে তোলা হচ্ছে বালি। আরামবাগের দ্বারকেশ্বর নদে।—নিজস্ব চিত্র
সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রয়েছে পরিবেশবিদদের হুঁশিয়ারি। তার পরেও আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন নদীখাত থেকে দিব্যি বালি তোলা ও পাচার চলছে। কয়েক মাস আগে দামোদর সেতুর একাংশ বসে যায়। সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা জানান, বিধি ভেঙে দেদার বালি তোলাতেই সেতুর ক্ষতি হয়েছে। তার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। শাসক দল তৃণমূলের একাংশের মদতেই যে ওই কাজ চলছে, এমন অভিযোগ ছিলই। এ বার সেই বালি পাচার বন্ধের দাবিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন খোদ গোঘাটের তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদার।
সম্প্রতি হুগলির জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে লিখিত অভিযোগে মানসবাবু জানিয়েছেন, এ ভাবে বালি তোলায় রাজ্য সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে। পুলিশ যে দেখেও দেখছে না— সে কথাও রয়েছে অভিযোগপত্রে। পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বিধায়ক।
মানসবাবুর কথায়, ‘‘একটি বাস্তব সমস্যা প্রশাসনের নজরে এনেছি। আমার মনে হয়েছে, এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।’’ বালি পাচারে তৃণমূলের একাংশের জড়িত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে মানসবাবুর বক্তব্য, ‘‘কে জড়িত, প্রশাসন তদন্ত করে দেখুক। ব্যবস্থা নিক!’’ হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, অবৈধ কাজে দলের কেউ জড়িত থাকলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হুগলির জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, ‘‘বিধায়কের অভিযোগ পেয়েছি। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নদী থেকে বালি তোলার নিষেধাজ্ঞা এখনও রয়েছে।’’ পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী জানান, অবৈধ ভাবে বালি তোলার খবর পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার রাতেই আরামবাগের কালীপুর এবং পল্লিশ্রী থেকে ১৪টি বালি বোঝাই লরি আটক করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় ১৩ জন চালককে।
আরামবাগ মহকুমা রাজ্যের অন্যতম বালির জোগানদার এলাকা হিসেবে পরিচিত। আরামবাগের বালিতেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একটি বড় অংশের নির্মাণ শিল্প চলে। দামোদর, দ্বারকেশ্বর এবং মুণ্ডেশ্বরী নদী থেকে মূলত বালি তোলা হয়। এ ছাড়া রয়েছে কিছু ছোট নদী।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময়ে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরই খাদান-মালিকদের বালি তোলার অনুমতি দিত। কিন্তু সেই পদ্ধতিতে কিছু ফাঁক ধরা পড়ায় বছর কয়েক আগে ধরে বালি তোলার অনুমতি দিচ্ছে সেচ দফতর। তারা প্রতি ১৫ দিন অন্তর স্বল্পমেয়াদে বালি তোলার অনুমতি দিত খাদান-মালিকদের। চলতি বছরের মাঝামাঝি রাজ্য সরকার সব বালি-খাদান থেকেই বালি তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তার পরে স্থির হয়, পরিবেশ আদালতের নির্দেশের সাপেক্ষে নদী থেকে বালি তোলা যাবে। তবে বালি তোলার আগে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, সেচ দফতর, পোর্ট ট্রাস্ট এবং জেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। জেলাশাসকেরাই বালিখাদ নিলামের (অকশন) ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। কিছুদিন ধরে সরকারি নির্দেশমতো দীর্ঘমেয়াদে বালি তোলার ক্ষেত্রে নিলামের কাজ শুরু হলেও হুগলিতে এখনও শুরু হয়নি।
অথচ, এই সরকারি বিধিনিষেধকে তোয়াক্কা না করেই আরামবাগের হরিণখোলায় কালীপুর সেতুর কাছে মুণ্ডেশ্বরী থেকে এবং পুড়শুড়ার দিগরুইঘাট সেতুর পাশে ন্যাওটা বটতলা ও মারকুণ্ডার দামোদরে ট্রাক নামিয়ে যন্ত্রের সাহায্যে অবাধে বালি তোলা হচ্ছে। একই ছবি গোঘাটেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy