Advertisement
E-Paper

বিজেপির সভার দিনই ধৃত পাড়ুইয়ের তৃণমূল নেতা

প্রথমে বিজেপি-র সদাই শেখ। এ বার তৃণমূলের শেখ হাবল। পাড়ুইয়ের মাখড়া গ্রামে বিজেপি সমর্থক শেখ তৌসিফ আলি খুনের ঘটনায় ক’দিন আগেই পুলিশ ধরেছিল এলাকার বিজেপি নেতা সদাই শেখকে। আর এ বার ওই একই ঘটনায় অভিযুক্ত ইলামবাজারের ধরমপুর অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি শেখ হাবলকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৭
একই মঞ্চে তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলামের সঙ্গে ধৃত তৃণমূল নেতা শেখ হাবল (ডান দিকে)।  —ফাইল চিত্র।

একই মঞ্চে তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলামের সঙ্গে ধৃত তৃণমূল নেতা শেখ হাবল (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

প্রথমে বিজেপি-র সদাই শেখ। এ বার তৃণমূলের শেখ হাবল।

পাড়ুইয়ের মাখড়া গ্রামে বিজেপি সমর্থক শেখ তৌসিফ আলি খুনের ঘটনায় ক’দিন আগেই পুলিশ ধরেছিল এলাকার বিজেপি নেতা সদাই শেখকে। আর এ বার ওই একই ঘটনায় অভিযুক্ত ইলামবাজারের ধরমপুর অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি শেখ হাবলকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তৌসিফ-সহ বীরভূমের চার বিজেপি কর্মী-সমর্থকের খুনের ঘটনাতেই অন্যতম অভিযুক্ত হাবলকে রবিবার সন্ধ্যায় ধরমপুর থেকে ধরা হয় বলে পুলিশের দাবি। ঘটনাচক্রে, তার কিছু আগেই ধর্মতলার সভামঞ্চে বীরভূমের দলীয় ‘শহিদ’-দের পরিবারের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দিয়েছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।

কলকাতায় বিজেপি-র উত্থান সভার দিনেই বিজেপি কর্মী খুনে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার গ্রেফতারি কি নেহাতই কাকতালীয়?

এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি পুলিশ সুুপারের কাছে। কিন্তু, বীরভূম জেলা পুলিশের একটি সূত্র বলছে, দিন কয়েক আগে এলাকার দাপুটে বিজেপি নেতা শেখ সদাইকে ধরার পর থেকেই তাদের উপরে বিজেপি-র ‘চাপ’ বাড়ছিল। ‘চাপ’ শাসকদলের অভিযুক্তদেরও ধরার। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “মাখড়া-কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূলের কোনও বড় নেতাকে ধরার চাপ ছিল পুলিশের উপর। ফলে, পুলিশকে কিছু একটা করতেই হত!” এ দিনই দুপুরে পাড়ুই থানার চৌমণ্ডলপুর, হাঁসড়া-সব বিভিন্ন গ্রামে পথসভা করেন জেলার তৃণমূল নেতা তথা মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। সেই সভাগুলিতেও হাবলকে দেখা গিয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রেই জানা যাচ্ছে। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই পুলিশ তাঁকে ধরে। চন্দ্রনাথ অবশ্য বলেছেন, “হাবল আমার সভায় ছিল না। সংবাদমাধ্যম বাড়িয়ে লিখছে।”

বিজেপি কর্মী খুনে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের ধরার ব্যাপারে পুলিশের উপরে তাঁদের ‘চাপ’ যে ভাল রকমই ছিল, তা মেনে নিয়েছেন বিজেপি-র জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলও। জেলার ‘শহিদ’-দের নিয়ে কলকাতার সভায় আসা দুধকুমার সাফ বলে দিচ্ছেন, “চাপ ছিলই। চাপ আরও বাড়বে পুলিশের উপর! সেই চাপের মুখে পড়েই হাবলকে গ্রেফতার করেছে।” তাঁর অভিযোগ, মাখড়া-কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের নিয়ে পুলিশ পাড়ুই থানায় শান্তি বৈঠক করল। আর তার পরের দিনই সদাই শেখকে গ্রেফতার করা হল। “বীরভূম পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে আগেও বারবার প্রশ্ন উঠছে। সদাইয়ের গ্রেফতারির পরে তা ফের সামনে এসেছে।”মন্তব্য দুধকুমারের।

বস্তুত, সদাই ধরা পড়ার পর থেকেই জেলা বিজেপি লাগাতার ‘চাপ’ দিয়েছে পুলিশের উপরে। চাপ ছিল বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের তরফেও। না হলে ইলামবাজারের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা জাফারুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত শেখ হাবলকে পুলিশ ধরত না বলে জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতাও আড়ালে মেনেছেন। দুধকুমারের দাবি, “এত দিন পুলিশ হাবলকে ধরেনি! অথচ লোকসভা ভোটের পরই ইলামবাজারে আমাদের দুই কর্মীকে খুনের ঘটনাতেও অভিযুক্ত ছিল এই হাবল।”

কে এই হাবল? স্থানীয় রাজনীতিতে বছর ৪৫-এর শেখ তৌরিত মণ্ডল ওরফে শেখ হাবল জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী হিসাবেই পরিচিত। ইলামবাজার ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ জাফারুল ইসলামের অত্যন্ত ‘খাস লোক’ হিসাবেই সকলে হাবলকে চেনে। বিজেপি-র বোলপুর মহকুমা সভাপতি বলাই চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ‘তৃণমূলের অ্যাকশন স্কোয়াড’-এর অন্যতম সদস্য এই হাবল। ধরমপুরের আকোনা গ্রামের বাসিন্দা হাবলের বিরুদ্ধে জেলায় মোট পাঁচটি খুনের মামলা ঝুলছে। সেগুলির মধ্যে প্রথমটি বিয়ের আগে নিজের হবু শাশুড়িকে খুনের অভিযোগ। কেবলমাত্র সেই মামলাটিতেই জামিন পেয়েছিলেন হাবল। তাঁর নিজের ব্লকের ঘুড়িষা পঞ্চায়েতের কানুরের বিজেপি কর্মী রহিম শেখ খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত এই তৃণমূল নেতা। নিজের খাসতালুক ধরমপুর অঞ্চলের ডোমনপুর গ্রামে বিজেপি কর্মী শেখ এনামুলকে খুনের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এই দু’টি ঘটনায় অভিযুক্ত জাফারুলও। সম্প্রতি রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলা পাড়ুইয়ের মাখড়া ও চৌমণ্ডলপুরের দুই বিজেপি কর্মী, শেখ তৌসিফ এবং শেখ জসিমউদ্দিনকে খুনের অভিযোগও আছে শেখ হাবলের বিরুদ্ধে।

পুলিশ সূত্রের খবর, এক সময় সক্রিয় ভাবে সিপিএম করা হাবল ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূলে যোগ দেন। ওই সময় এলাকার সিপিএমের জোনাল কমিটির সদস্য তথা নিজের প্রতিবেশী আয়ুব হোসেনের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় হাবলের নাম জড়িয়ে যায়। অপরাধের খাতায় সেই প্রথম নাম উঠে, ওই ঘটনায় কিছুদিন জেলও খাটেন তিনি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর, সুনবুনি গ্রামের দুঁদে এক সিপিএম নেতার হাত-পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে হাবলের বিরুদ্ধে। এলাকার অনেকেই তাঁকে ‘ডন’ বলে ডাকতে শুরু করেন। ক্রমেই ধরমপুর অঞ্চলে ক্ষমতা বাড়তে থাকে হাবলের। এক সময় জাফারুলের নেক নজরে পড়ে যান। আস্তে আস্তে জাফারুলের দেওয়া ক্ষমতা ভোগ করে শেখ হাবলই গোটা এলাকায় ‘দাদা’ হয়ে ওঠেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে।

খুনের অভিযোগ তো রয়েছেই, দলবল নিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগও বিস্তর রয়েছে জাফারুল ঘনিষ্ঠ এই নেতার নামে। ইলামবাজার ব্লকে তৃণমূলের জনসমর্থন যে কিছুটা কমছে এবং বিজেপি-র পালে হাওয়া এসেছে, তার নেপথ্যেও স্থানীয় এমন কিছু তৃণমূলের নেতার ‘দাদাগিরি’ রয়েছে বলে জানতে পেরেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বও। ঘটনাও হল, হাবলের খবর শুনে ‘খুশি’ এলাকার সাধারণ তৃণমূল কর্মীদের একাংশও!

আর কী বলছে নিহত বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের পরিবার?

ছেলের খুনে অভিযুক্তকে ধরা হয়েছে, শুনে নিহত তৌসিফের বাবা শেখ শৌকত আলি বলেন, “আমার নিরীহ ছেলেকে যারা নির্মমভাবে খুন করেছে, তারা সকলে ধরা পড়বে, এটাই আশা।” ডোমনপুরের নিহত বিজেপি কর্মী এনামুলের বাবা শেখ রহমতুল্লা বলেন, “ছেলেটাকে খুনের ওই দৃশ্য এখনও ভুলতে পারি না। খুনিরা কী করে এত দিন যে বাইরে ঘুরছিল, জানি না! হয়তো শাসকদলের নেতা বলেই পার পেয়েছিল। পুলিশ এ বার সবাইকে ধরুক!”

parui tmc leader sekh habal zafarul islam BJP meeting days TMc leader arrested murder case state news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy