E-Paper

স্মৃতির সরণি থেকে ঝর্না কলমকে তুলে এনে মেলা

পোশাকি নাম ‘পেন উৎসব’। কলকাতার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস (আইসিসিআর)-এ অনুষ্ঠিত এই মেলায় দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, ইন্দোরের সংস্থারা যেমন নানা ধরনের ঝর্না কলমের পসরা নিয়ে এসেছে, তেমনই যোগ দিয়েছে জার্মানি, জাপান, চিনের সংস্থাও।

মিলন হালদার

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৫ ০৯:৩১
ম্ভার: আইসিসিআর-এ ‘পেন উৎসব’।

ম্ভার: আইসিসিআর-এ ‘পেন উৎসব’। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

হরেক কিসিমের মেলা-উৎসবের এই রাজ্যে এ এক অন্য রকম মেলা। এই মেলা আবেগের। এই মেলা নস্টালজিয়ার। এ যে ফাউন্টেন পেন বা ঝর্না কলমের মেলা।

পোশাকি নাম ‘পেন উৎসব’। কলকাতার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস (আইসিসিআর)-এ অনুষ্ঠিত এই মেলায় দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, ইন্দোরের সংস্থারা যেমন নানা ধরনের ঝর্না কলমের পসরা নিয়ে এসেছে, তেমনই যোগ দিয়েছে জার্মানি, জাপান, চিনের সংস্থাও। ছিল বিভিন্ন ধরনের কালির সম্ভারও।

ঝর্না কলমের সেই রমরমা এখন আর নেই। আশির দশকের শেষ দিক থেকেই বল পয়েন্ট পেনের দাপটে কোণঠাসা ঝর্না কলম। বর্তমান প্রজন্মের কাছে ঝর্না কলম বস্তুটি অজানাই বলা চলে। এই পেন উৎসবের উদ্যোক্তা সায়ক আঢ্য তাই বলছেন, ‘‘ঝর্না কলম হারিয়ে গিয়েছে। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য, তার সঙ্গে মানুষের আবার পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা।’’ তিন দিনের এই কলম মেলা শেষ হয়েছে রবিবার।

ভারতে ঝর্না কলমের অন্যতম পথিকৃৎ রাধিকানাথ সাহা। পরাধীন ভারতে, বিশ শতকের গোড়ায় তিনি প্রথম বারাণসীতে ঝর্না কলমের কারখানা তৈরি করে বাণিজ্যক ভাবে ‘লক্ষ্মী’ পেন উৎপাদন শুরু করেছিলেন। রাধিকানাথের ‘লক্ষ্মী’কেই মনে করা হয় প্রথম স্বদেশি ঝর্না কলম ব্র্যান্ড। লক্ষ্মী কলম ব্যবহার করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী, বাংলার প্রথম গর্ভনর লর্ড কারমাইকেল-সহ অনেকেই। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ১৪টি স্বত্ত্ব ছিল রাধিকানাথের নামে।দেশীয় প্রযুক্তিতে ঝর্না কলমের কারখানা তৈরি এবং এই কলমের প্রসারে ব্যবসায়ী ফণীন্দ্রনাথ গুপ্তের অবদানও উল্লেখযোগ্য।

শহরে ঝর্না কলমের মেলা হচ্ছে শুনে উচ্ছ্বসিত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। এই মেলাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ঝর্না কলম আমার কাছে প্যাশন, নস্টালজিয়ার আর এক নাম। আগে দেশ-বিদেশ থেকে ভাল ঝর্না কলম কিনতাম। আমার বাবা আমাকে দু’টি ঝর্না কলম দিয়েছিলেন। স্মৃতি হিসাবে সেই দু’টি যত্ন করে রেখে দিয়েছি।’’

ঝর্না কলমের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কাজ করে চলেছেন শুভব্রত গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে চম গঙ্গোপাধ্যায়। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঝর্না কলম সংগ্রহ করে চলেছেন তিনি। ঝর্না কলম সংগ্রাহক হিসেবে বিখ্যাত চমের সংগ্রহে রয়েছে হাজার দশেক ফাউন্টেন পেন। তাঁর কথায়, ‘‘ফাউন্টেন পেনকে ভালবেসে এই কাজ করি। ঝর্না কলমের এমন মেলা দারুণ উদ্যোগ। সাধারণ মানুষের মধ্যে ঝর্না কলম নিয়ে আগ্রহ বাড়াতে এই রকম মেলা আরও বেশি করে প্রয়োজন।’’

আইসিসিআর-এ হয়ে যাওয়া ঝর্না কলমের মেলায় সবচেয়ে দামি কলম ছিল জার্মানির একটি সংস্থার তৈরি। দাম ৭ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা। পেনটিতে রয়েছে ৪৮টি হিরে। নিবটি তৈরি হয়েছে ১৮ ক্যারাট সোনা দিয়ে। সারা বিশ্বে এই পেন রয়েছে মাত্র ৪৮টি। এমন বিবিধ রকম ঝর্না কলমের টানে মেলায় ছুটে এসেছেন বোধিসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়। পরীক্ষা করে একটি পেন কেনার ফাঁকে তিনি বললেন, ‘‘আমি এখন ঝর্না কলমেই লিখি। এই পেনে লেখার আমেজটাই আলাদা।’’ মেলায় আসা সাগর ভৌমিকের কথায়, ‘‘এখন কিন্তু অনেকেই ঝর্না কলম ব্যবহার করছেন।’’ আর মেলার উদ্যোক্তা সায়ক জানাচ্ছেন, চলতি বছরেই আর একটি ঝর্না কলমের মেলা করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

ICCR Indian Council For Cultural Relations (ICCR)

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy