Advertisement
E-Paper

সিবিআই চেয়ে সরব সুপুরডি

দলীয় কর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদে বলরামপুরে এসে সুর চড়ালেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তৃণমূলকে হুঁশিয়ারিও দিলেন। আর মৃত কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে দিলেন, পাশে থাকার আশ্বাস। তাঁকে কাছে পেয়ে যুব মোর্চার মৃত কর্মী  ত্রিলোচন মাহাতোর গ্রাম সুপুরডির বাসিন্দারা সিবিআই তদন্তের দাবি তুললেন।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৮ ০১:৫৭
কথাবার্তা: দুলাল কুমারের বাড়িতে বিজেপির নেতারা। সোমবার। ছবি: সুজিত মাহাতো

কথাবার্তা: দুলাল কুমারের বাড়িতে বিজেপির নেতারা। সোমবার। ছবি: সুজিত মাহাতো

দলীয় কর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদে বলরামপুরে এসে সুর চড়ালেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তৃণমূলকে হুঁশিয়ারিও দিলেন। আর মৃত কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে দিলেন, পাশে থাকার আশ্বাস। তাঁকে কাছে পেয়ে যুব মোর্চার মৃত কর্মী ত্রিলোচন মাহাতোর গ্রাম সুপুরডির বাসিন্দারা সিবিআই তদন্তের দাবি তুললেন।

এ বার পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলকে কার্যত সাফ করে দিয়ে বলরামপুরে উত্থান ঘটেছে বিজেপির। তারপরেই বলরামপুরের সুপুরডিতে অপহরণ করে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ত্রিলোচনকে। তাঁর টি-শার্টে লেখা ছিল— ১৮ বছরের নীচে বিজেপি করা এ বার বোঝ’। দু’দিনের ব্যবধানে বলরামপুরেরই ডাভা গ্রামের বাসিন্দা দুলাল কুমারের দেহ বিদ্যুতের টাওয়ার থেকে ঝুলতে দেখা যায়। ভোটের দু’দিন আগে এই থানারই আমটাঁড় গ্রামের বিজেপি কর্মী জগন্নাথ টুডু গাড়ির ধাক্কায় মারা যান। তিনটি ঘটনাই খুন বলে দাবি করে বিজেপি সিবিআই তদন্ত চেয়ে আন্দোলনে নেমেছে। ওই দাবিতে পুরুলিয়ায় জেলাশাসকের অফিসের বাইরে বিজেপি চার দিনের অবস্থান শেষ করে বলরামপুরে শুরু করেছে।

ভোটের ফল ঘোষণার পরপরই দুই বিজেপি কর্মীর মৃত্যু নিয়ে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ পর্যন্ত টুইট করেন। রাজ্য নেতারা অনেকে মৃত কর্মীদের বাড়িতে এলেও দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু এ দিনই প্রথম এখানে এলেন। বিকেলে সরাই ময়দানে জনসভায় তিনি দাবি করেন, ‘‘তিনটি হত্যা নিয়ে পুলিশ উল্টোপাল্টা কথা বলে যাচ্ছে। কখনও বলছে, পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু, কখনও বলছে আত্মহত্যা। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। যদি হিংসায় বিশ্বাস করতাম, তাহলে বলরামপুরেও ঝান্ডা তোলার লোক থাকত না।’’ তিনি দাবি করেন, আগে জঙ্গলমহলের কিছু লোক মাওবাদী হয়েছিল। প্রতিবাদ করার জন্য হাতিয়ার তুলে নিয়েছিল। তারপরে নিশ্চুপ হয়ে যায়। তারা বুঝেছিল, তৃণমূলকে ভোট দিলে সুবিধা হবে। কিন্তু, সুপ্ত আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণ হলে মাওবাদী আন্দোলনকেও ছাপিয়ে যেতে পারে। তৃণমূল ভয়ঙ্কর খেলা খেলছে।’’

হুমকির সুরে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘এখানে যদি আর কোনও বিজেপি কর্মীর প্রাণ যায়, তাহলে থানায় আগুন দেওয়া হবে। এত দিন অবস্থান শান্তিপূর্ণ ছিল। এ বার কিন্তু শান্তিপূর্ণ থাকবে না।’’ তাঁর অভিযোগ, পুরনো মাওবাদীদের ডেকে এনে বিজেপি কর্মীদের মারতে বলা হচ্ছে।’’

যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো দাবি করেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়েছেন। কিন্তু বিজেপি নেতারা উস্কানি দিয়ে ফের অশান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।’’ বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, সভায় ২০ হাজারের বেশি মানুষের ভিড় হয়। যদিও পুলিশের দাবি, ভিড় মেরেকেটে আড়াই হাজারের।

এ দিন দুপুরে দিলীপবাবু প্রথমে ডাভায় দুলালের বাড়িতে যান। সেখানে ক্ষৌরকর্ম ছিল। দিলীপবাবু দুলালের বাবা মহাবীরবাবুর কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান। ২০০৩ সালে সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য মহাবীরবাবু অভিযোগ করেন, ‘‘পুলিশ বলছে, দুলাল নাকি আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু, গ্রামের তৃণমূলের লোকেরা ছেলেকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। আমাদের বিশ্বাস, ওকে খুন করা হয়েছে।’’ দুলালের বড় ছেলে আদিত্য, মেজো মেয়ে পূজা ও ছোট ছেলে আদর্শকে কাছে ডাকেন দিলীপবাবু। বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকুন। দুলালের ছেলেগুলোকে দেখতে হবে। আমরাও আছি।’’ ঘরে ঢুকে তিনি দুলালের স্ত্রী মনিকার সঙ্গেও দেখা করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কী করে এ বার তিনটে ছেলেমেয়েকে মানুষ করব?’’ পাশে থাকার আশ্বাস দেন দিলীপবাবু।

সেখান থেকে তিনি ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া জগন্নাথের বাড়িতে যান। তাঁর স্ত্রী কমলি টুডু দুই সন্তান সুচিত্রা ও প্রসেনজিতকে সামনে নিয়ে দিলীপবাবুর কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘স্বামীকে পরিকল্পনা করে গাড়ি চাপা দেওয়া হয়। পুলিশে অভিযোগ জানানোর পরেও কেউ গ্রেফতার হয়নি।’’ কমলি অসুস্থ জেনে পুরুলিয়ায় নিয়ে গিয়ে দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীকে চিকিৎসা করাতে বলেন দিলীপবাবু।

দিলীপবাবুর অপেক্ষায় সুপুরডি গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকেই ত্রিলোচনের বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছিলেন। ক’দিন আগে ত্রিলোচনের পারলৌকিক কাজ শেষ হয়েছে। তাঁর দাদা বিবেকানন্দ, শিবনাথদের কাছে দিলীপবাবু সে দিন কী ঘটেছিল, জানতে চান। তৃণমূলের লোকেরা ছেলেটাকে মেরে দিল।’’ পুলিশ ওই ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করলেও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

দিলীপবাবু বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ত্রিলোচনের বাবা হাড়িরাম ছলছল চোখে তাঁর হাত চেপে ধরে অনুরোধ করেন, ‘‘ছেলেটার রাজনীতির সঙ্গে ভাল করে পরিচয়ই হল না, অথচ তাকে খুন করে দিল তৃণমূলের লোকেরা! আপনারা সিবিআই তদন্তের ব্যবস্থা করুন।’’

গ্রামবাসীও দিলীপবাবুর কাছে এই খুনের নেপথ্যে যারা রয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়ার আর্জি জানান। সেখানে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আমিও জঙ্গলমহলের ছেলে। এখানে মানুষ উৎসবের আনন্দে ভোট দিত। কিন্তু, এ বার দেখলাম, হিংসার ভোট হল।’’ তিনি দাবি করেন, ‘‘সিআইডি তদন্তে আমাদের আস্থা নেই। মন ভোলানোর জন্য সিআইডি তদন্ত করানো হচ্ছে। তাই আমরা সিবিআই তদন্ত চাইছি। সে জন্য হাইকোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’

তিনি জানান, সারা রাজ্য তো বটেই, জনমত তৈরি করতে তাঁরা রাজ্যে রাজ্যে বিক্ষোভ আন্দোলন তৈরি করবেন।

Murder Supardi Trilochon Mahato BJP BJP Morcha Dilip Ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy